সম্প্রতি ঘুরে এলাম নেপাল। অসাধারণ লাগলো। এত সুন্দর সব কিছু - ঠিক ছবির মতো। আসতে মন চাইছিলো না। তবু সব পাখি নিড়ে ফেরে...
এখন ফিরে আসার পর আবার যেতে ইচ্ছে করছে।
নেপাল এমন একটি দেশ যেখানে আপনি একসাথে পাবেন আপনার ছুটি উপভোগের সবকিছু - মন্দির ,স্বচ্ছ হ্রদ , সারি সারি সবুজ ভ্যালি , বন্য প্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র , পাহাড় কিংবা তাদের রাজপ্রাসদ সমূহ সব কিছুতেই মুগ্ধতা এ যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ ।
আমার বন্ধু ঘুরে এসে যে বর্ননা দিলো, মন আর মানলো না। এই সময়টা (অগাস্ট) ওখানের অফ সিজন। বৃষ্টি হয় মাঝে মাঝে। বেস্ট সময় হলো সেপ্ট – মার্চ।
আমি গিয়েছি প্লেন এ। ১৮ তারিখ। সময় লাগলো ১ ঘন্টা ৫ মিনিট মাত্র। খরচ হলো ১৯০০০ টাকা। আর সাথে নিলাম প্রায় ৪০০ ডলার কার্ডে।
ভিসা নিয়ে যাইনি। নেপালে অন এরাইভাল ভিসা নেয়া যায় ওখানের এয়ার পোর্ট থেকে। তাই আগে থেকে ভিসা নিতে হয়নি।
কাগজ ঠিক থাকলে ঝামেলা হবে না। তবে ভালো হবে ডলার এন্ডরসমেন্ড করে গেলে ব্যাঙ্ক থেকে।
আপনার কিছু সময় বাচবে যদি ইমিগ্রিশন এ ধরে।
থামেল হচ্ছে কাঠমন্ডুর টুরিস্ট দের স্পট। প্রথমে এয়ারপোর্ট এর এ টি এম থেকে মাস্টার কার্ড দিয়ে নেপালের টাকা তুললাম। পরে একটা টেক্সি দিয়ে চলে এলাম থামেল। ৩০০ টাকা ভাড়া।
কিন্তু আমি দিয়েছি ২০০/ টেক্সি ওয়ালাই একটা হোটেল এ নিয়ে গেলো। বলল-পছন্দ হলে নেবেন। পছন্দ হয়ে গেলো। পিল্গ্রিম হোটেল। ভাড়া ১০০০/ অফ সিজন বলে কম নিয়েছে।
কাঠ মণ্ডূর ভাড়া তুলনা মুলক ভাবে বেশি অন্য শহর পোখারা থেকে। তবে নেপালের হোটেল ভাড়া একটু কম ই বলতে হবে। যাই হোক,
পরদিন ভোরে ৭ টার আগেই চলে গেলাম টুরিস্ট বাস স্পট এ। যাবো পোখারা। প্লেন করেছি পোখারা ঘোরা শেষ করে যাবার আগে একদিন কাঠ মন্ডুতে থেকে ঘুরে যাবো।
পোখারা – নেপালের রানী
কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কি মি পাড়ি দিয়ে ৬/৭ ঘন্টায় চলে গেলাম অন্নপূর্ণা পর্বত রেঞ্জের উপত্যকা পোখারা। এখান থেকে অন্নপূর্ণাসহ বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গে ট্রেকিং শুরু করেন অনেক পর্বতারোহী। বাস ভাড়া নিলো ৫০০/ এই বাস গুলো তে শুধু টুরিস্ট দের জন্য। ছাড়ে টুরিস্ট বাস স্পট থেকে। আসা খুব ই সহজ।
যাবার পুরোটা পথ পাহাড়ি আঁকা বাকা পথে আর পাহাড়ে ঘেরা।
মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। কিছুটা মিল পেলাম আমাদের বান্দরবন এর নীলগিরি যাবার পথ টার সাথে। সারি সারি উচু পাহাড়ের মাঝখানে আঁকা বাকা পথ। মাঝখানে ২ বার হোটেল এ থামল কিছু খনের জন্য।
ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ। যেখানেই যাবেন, প্রাকৃতিক দৃশ্য অতুলনীয়।
দেখতে দেখতে খাবার খেয়ে আবার উঠে পড়লাম। এক সময় পৌঁছে গেলাম পোখারা। অনেক শুনেছিলাম এর সুনাম।
পোখারা কে বলা হয় নেপালের রানী। এখানে বাস থেকে নামার পর ই অনেকেই ঘিরে ধরলো টেক্সির জন্য। উঠিনি। আমি একটু রয়ে সয়ে সব কাজ করতে পছন্দ করি। হাটতে লাগলাম।
একটু পর একজন বলল তার মটর বাইক করে সে আমাকে পোখারা লেক সাইড (যেখানে টুরিস্ট রা থাকে) এ নিয়ে যাবে বিনা ভাড়ায়। শুধু তার হোটেল টা একটু দেখতে হবে। যদি পছন্দ হয় থাকবো। ভালো ডিল। চলে গেলাম।
অবশ্য হোটেল পছন্দ হয়নি।
পরে হাটতে হাটতে বাইক ভাড়া করার ট্রাই করলাম। একটু বেশি মনে হল। সারি সারি বাইক রাখা ভাড়া দেয়ার জন্য। হ্যাঁ।
এখানে আপনি পাস্পোর্ট জমা দিয়ে মটরবাইক/ বাইসাইকেল ভাড়া নিতে পারবেন। পরে পিস আই নামে একটা হোটেল ঠিক করলাম। দারুন। শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়লাম। প্রথমেই হোটেল ম্যানেজার কে বলতেই বলে একটা বাইক ৭০০ টাকা (নেপালি রুপি) দিয়ে রেন্ট এ নিলাম।
ফুয়েল নিজের। পালসার ১৫০ টা নিয়ে প্রথমে তেল নিলাম। এর পর চলে গেলাম ফিউয়া লেক।
ফিউয়া লেক[/sb
অসম্ভব সুন্দর ছবির মত একটা লেক। ঘুরে দেখলাম।
ছোট ছোট বোট নৌকা ভাড়া নেয়া যায় ৪০০ টাকা/ ঘন্টা। যাবার একদিন আগে ঘুরেছিলাম। বেশ ভালো লাগলো। নিজেই কিছুক্ষণ বৈঠা মারলাম এবং শুনতে পেলাম আমি নাকি প্রফেশনাল দের মত বাইছি।
ও হ্যাঁ।
আপনি চাইলে ড্রাইভার বা মাঝি ছাড়াই বোট নিতে পারবেন। অনেক ছবি তুললাম। বোট এ করে চলে জাওয়া যায় world peach stupa তে। অনেক টুরিস্ট দেখলাম। লেকের ভেতর এ খোলা রেস্তোরা আছে।
আছে ইনডোর রেস্টুরেন্ট। আছে রাস্তার পাশে পসরা নিয়ে বসা নেপালি মেয়েরা।
নিয়ে নিন খুব কম দামে প্রেয়সীর জন্য উপহার। ৪ জন ইউরোপিয়ান কে দেখলাম লাফ দিয়ে নেমে পড়ে ফ্রিজবি খেলা শুরু করলো। একটা বাচ্চার সাথে পরিচয় হলো।
এত সুইট। কিন্তু সে কিছুতেই ছবি তুলতে দিবে না।
---- ওখানে পরিচয় হলো চেক এর একটা মেয়ের সাথে। কথা বলে জানলাম ইতিমধ্য সে একা একা পর্বত আরোহন (ট্রেকিং) করে এসেছে। ঘুরে এসে ১৫ টা দেশ।
বলে কি!! একা একা!! টাসকি খেলাম। তার সাথে ঘুরে বেড়ালাম সন্ধ্যা পর্যন্ত।
রাতে একসাথে খেয়ে হাটলাম পোখা্রার দোকান গুলো তে। দারুন। কি নেই এখানে।
রাস্তায় অসংখ্য ফরেনার হাটছে।
অবশ্য আমি নিজে ই সেখানে ফরেনার কেউ ছবি তুলছে, কেনা কাটা করছে, রাস্তার পাশে গিটার নিয়ে বসে গান করছে। আমি নিজেও ওদের সাথে গান করলাম।
একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখলাম নেপালের ঐতিহ্য বাহি নাচ হচ্ছে। দেখলাম।
ভালো লাগলো সবকিছু। কি এক আবেশে ভরা সবকিছু। দারুন এক পরিবেশ। ও হ্যাঁ। এখানে নানা রকম ডেন্স বার ও আছে।
তবে, বলা বাহুল্য, আমি সেই দলের না।
সারাং কোট
পর দিন ভোর রাতে বাইক নিয়ে চলে গেলাম সারাং কোট সূর্য দয় ও হিমালয় পর্বত দেখার জন্য। সাথে ম্যাপ ছিল। আর গাইড নেই নি। জিজ্ঞাসা করে করে চলে গেলাম।
ওখানে গিয়ে মন একদম ভরে গেলো। আকাশ পরিষ্কার থাকায় ওখান থেকে ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে দেখতে পেলাম দেখতে পেলাম হিমালয়। সাদা বরফে আচ্ছন্ন। মন কে অবশ করে ফেলো। দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
এই দৃশ্য ভাষায় বেক্ত করার মত নয়। মন পরতে পরতে পূর্ণ হয়ে গেলো। এত সুন্দর!! এখানে টুরিস্ট দের জন্য একটা জায়গা তৈরি করা হয়েছে। সবাই ছবি তুলছে আর তুলছে।
কিছু টা ঠান্ডা আছে।
তাই কফি নিলাম। আবেশে দিলাম চুমুক। জীবন টাকে মনে হলো পূর্ণ। সবাই দেখলাম ছবি তোলায় বেস্ত। আমিও লেগে পড়লাম।
ডেভিস ফলস
ওখানে ২/৩ ঘন্টা ছিলাম। এর পর চলে গেলাম ডেভিস ফলস এ। ডেভি নামে এক মেয়ে এই ঝর্নার তীব্র স্রোতে ভেসে হারিয়ে যায়। তখন থেকে এই নাম। খুবি ভালো লাগলো।
২০ টাকা টিকেট। পানির তীব্র স্রোত। কি গর্জন তার।
সবাই ছবি তোলায় বেস্ত। গেটের বাহিরে নানান পসরা।
কিছু কেনা কাটা করলাম। নেপালে যে বারগেইন করতে পারবে - সেই ভালো করবে। এই দেশ চলে বারগেইন এর উপর।
ব্যাট কেভ (বাদুরের গুহা
এর পর গেলাম ব্যাট কেভ (বাদুরের গুহা)। ৫০ টাকা টিকেট আর ৫০ টাকা দিয়ে একটা বাতি নিলাম ভাড়ায় অন্ধকার এর জন্য।
সাথে তাই টর্চ রাখলে ভাল হবে।
মাহেন্দ্র নাথে কেভ
এই গুহায় যেতে পথে পড়বে মাহেন্দ্র নাথের গুহা। এখানেও গেলাম। বেশ লম্বা গুহা। তবে ভেতরে আলো আছে।
মনে হলো প্রাচীন কোন রাক্ষসের গুহা তে নেমেছি।
রাতে খেলাম চওমিন। আর বিকেলে খেয়েছিলাম নেপালের বিখ্যাত মম। ভেজ ও চিকেন এর পাওয়া যায়।
আমি ভেজ দিয়ে সারলাম।
কারন মুরগি কিভাবে জবাই করেছে কে জানে। তবে খুজলে কিছু হালাল রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে।
সেটি রিভার
পর দিন গেলাম সেটি রিভার ও গোরখা মিউজিয়াম। সেটি রিভার এর পানি খুভি ঠান্ডা। ব্রিজ থেকে দেখতে পাবেন নদী বয়ে যাচ্ছে।
টানেল দেখতে পাবেন।
প্রায় ই পথে পথে পাহাড়ের গায়ে দেখতে পাবেন পাহাড়ি মন মুগ্ধকর ঝরনা। পানি খেলে দিল একদম ঠান্ডা হয়ে যায়। এত মিস্টি আর ঠান্ডা। আহহ।
বেগ নাজ লেক
এর পর দিন শহর থেকে কিছুটা দুরে চলে গেলাম বেগ নাজ লেক। গিয়ে আবারো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সারি সারি ছোট ছোট বোট রাখা। এত সুন্দর।
ওখানে ১০০ টাকা দিয়ে ঘোড়ায় কিছু খন একা একা ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
যাক, ঘোড়ায় চড়া শিখে গেলাম।
আসার পথে দেখলাম পথে পথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। নেপালি নাচ, ইত্যাদি। এদের ফেস্টিভ্যাল - গাই যাত্রা। সবাই সেজেছে গরুর সাজে।
বাইক থামিয়ে ছবি তুললাম।
এছাড়াও পোখারাতে আছে স্রোতস্বিনী নদীর ফেনিল-শুভ্র জলে রাফটিংয়ের অ্যাডভেঞ্চার। যারা আরও সাহসী তাদের জন্য আছে প্যারাগ্লাইডিংয়ের সুযোগ। ১০০০ টাকা দিয়ে আকাশ থেকে ঝাপিয়ে পড়তে পারবেন। পোখরার আশপাশে নদী ছাড়াও আছে লেক, ঝরনা, মন্দির।
পকেটে টাকার জোর থাকলে বিমান বা হেলিকপ্টারে চড়ে এভারেস্টসহ বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গের কাছাকাছি চলে যেতে পারেন। এক ঘণ্টার মাউন্টেন ফ্লাইটে অন্তত দশটি পর্বতশৃঙ্গের পাশ দিয়ে উড়ে আসবেন।
বুঝলাম, পোখারা কে কেনো নেপালের রানী বলা হয়। সত্যি, আসতে একদম মন চাইছিলো না।
পোখারা থেকে ফিরে আসার ২ দিন আগে চলে এলাম কাঠমন্ডু।
--
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।