বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। প্রথম পর্ব
পাঁচ।
সেই রাতের পর অনেকদিন দ্যাখা নেই মহুয়ার। সারাদিন খেলা দেখিয়ে, গান গেয়ে সন্ধ্যায় নতুন বাড়িতে পৌছে সে, একটি বারের জন্যও ঠাকুর বাড়িতে পা দেয় না। নদের চাঁদ ভাবে মহুয়া বুঝি তাকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে।
সইতে না পেরে এক সন্ধ্যায় মহুয়ার পথ আগলে দাড়ায় নদের, বলে আগামীকাল সন্ধ্যায় সূর্য যখন ডুবি ডুবি করবে, মহুয়ার উপস্থিতিতে চাঁদ স্পর্ধা দ্যাখাবে আকাশে উঠার, তখন সে য্যানো নদীর ঘাটে এক মুহূর্তের জন্য হলেও আসে। নদের বলে, সইন্ধ্যা বেলা জলের ঘাটে একলা যাইও তুমি, ভরা কলসী কাঙ্কে তোমার তুল্যা দিয়াম আমি। মহুয়া আর দাড়ায় না, তবে পরের সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে ঠিকই বসে থাকে মহুয়া। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে নদের আসলে মহুয়া মিছেমিছি রাগ প্রকাশ করে। সেই রাগ ঢেউ হয়ে নদের চাঁদকে ভিজিয়ে দেয়।
নদের ভেবে পায় না অ্যামন রূপবতী নারী বেদের দলে ভীড়ে কী করে। জিজ্ঞেস করলে অভিমানী কন্ঠে ছলছল করে মহুয়া, নিজেকে স্রোতের শ্যাওলা দাবী করে, ভাইবোন তো দূরে থাক, তার পিতামাতা আছে কিনা তাও জানেনা। সহমর্মিতা প্রকাশের ছলে মনের কথা বলে ফেলে নদের, সেও অবিবাহিত, তবে মহুয়ার মতোন রূপবতী কন্যা পেলে বৌ বানাতে একমুহূর্ত দেরি করবে না। মহুয়া কপট রাগ প্রদর্শন করে তিরস্কার করে নদের চাঁদকে-
“লজ্জা নাই নির্লজ্জ ঠাকুর লজ্জা নাইরে তর,
গলায় কলসী বাইন্দা জলে ডুইব্যা মর। ”
“কোথায় পাইবাম কলসী কইন্যা কোথায় পাইবাম দড়ি,
তুমি হও গহীন গাঙ আমি ডুইব্যা মরি।
”
ছয়।
ফাগুন চলে এসেছে। ফসলে পাঁক ধরেছে, হুমরা বেদের নতুন বাড়িতে এই নিয়ে উতসবের আমেজ। এতোসবের মধ্যেও মহুয়ার ঔদাসীন্য চোখ এড়ায়নি হুমরা বেদের। সেদিন বার-বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিলো মহুয়া আর পালঙ্কের মধ্যে।
কিছুদিন ধরেই মহুয়ার উপর লক্ষ্য রাখছিলো পালঙ্ক, ঘাটে নদের ঠাকুরের সাথে যেদিন মহুয়ার দ্যাখা হলো, সেদিনের পর মহুয়ার লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না দেখে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। ইতিমধ্যেই রটে গেছে মহুয়া আর নদের চাঁদের গোপন প্রণয়ের কথা। পালঙ্ক মহুয়াকে পরামর্শ দেয় এক সপ্তাহ বাইরে না বেরুবার, ঠাকুরবাড়িতে সে পৌছে দেবে মহুয়ার মৃত্যুর খবর। রাজি হয়না মহুয়া, উল্টো ঠাকুরবাড়ির পানে চেয়ে চন্দ্র-সূর্য আর পালঙ্ক সইকে সাক্ষী মেনে নদের চাঁদকে স্বামী বলে ঘোষণা করে, পালিয়ে যাবে সে, নতুবা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। হুমরা বেদে মহুয়াকে কিছু বলে না, তবে গোপনে দলবল নিয়ে পালিয়ে যাবার ব্যাপারে পরামর্শ করে মানিকের সাথে।
কিছুদিনের মধ্যেই ফসল উঠবে ঘরে, একদিকে নতুন গৃহস্থের টান, বাড়ির পেছনের মাছভর্তি পুকুর, অন্যদিকে ঠাকুরবাড়ির সাথে বেদেকন্যার গোপন প্রণয়ের আশঙ্কা, কী করবে ভেবে পায়না তারা।
সাত।
নদীর তীর ঘেঁষে শালি ধানের ক্ষেতের আলে বাঁশি হাতে দাড়িয়ে আছে নদের চাঁদ। একটু পরপর আকাশ কাঁপিয়ে ডেকে যাওয়া পাপিয়া আর সে ছাড়াও আরও কেউ জেগে আছে এই মধ্যরাতেও, দূরে উলুয়াকান্দা গ্রামের বেদের ঘরে মিটিমিটি আলো দেখে ভাবে নদের। বাঁশির সুর য্যানো ঘুম ভাঙানিয়া গান হয়ে ডেকে আনে মহুয়াকে।
পরস্পরকে আলিঙ্গন করে হয়তো চুমুও খায়। দুজনেই জানে প্রণয় বিরহে পরিণত হতে দেরি হবে না, মহুয়া তাই প্রস্তাব করে নদীর জলে ডুবে মরে যাওয়ার। নদের চাঁদ যদি ফুলে হতে পারে তাহলেই কেবল মহুয়া তাকে মাথায় গুঁজে সর্বক্ষণ একসাথে থাকতে পারে। কিছুক্ষণ পর পাপিয়ার সাথে আরেকজনের চলে যাওয়া টের পায় তারা, তবে ঠিক বুঝতে পারেনা ঠিক কখন থেকে হুমরা বেদে নজর রাখছিলো তাদের উপর। তারপর ভোর হওয়ার আগেই বিদায় নিয়ে যার যার বাড়িতে পৌছে।
আট।
পরদিন সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে পানি আনার ছুতোয় নদের চাঁদের সাথে দ্যাখা করতে যায় মহুয়া। আজ রাতে যেকোন সময় তাকে নিয়ে হুমরা বেদের দল উলুয়াকান্দা ছেড়ে যাবে। আর কখনো নদের চাঁদ সন্ধ্যায় মহুয়ার কাঁখে কলসী তুলে দেবেনা, তার বাঁশি শুনে মধ্যরাতে নদীর ঘাটে আসা হবেনা, এই নতুন বাড়িতে বসে গান গাওয়া হবেনা, নতুন শালি ধানের চিড়া খাওয়া হবেনা ভেবে কান্নায় ভেঙে পরে মহুয়া, আবার মানসম্মানের প্রশ্নে বাবার সাথে ফিরে যেতেই হবে। মহুয়া কসম খাওয়ায় নদের চাঁদকে, সময় পেলে য্যানো উত্তরের দেশে গিয়ে দেখে আসে মহুয়াকে।
সেখানে তাদের দক্ষিনমুখো বাড়িতে নদেরকে পিঁড়ি পেতে বসিয়ে শালি ধানের চিড়া আর শবরী কলা খাওয়াবে, আর তিন বেলা মোষের দুধের দই। এই বলে ছুটে যায় মহুয়া, খানিক পর বাঁশ লইল দড়ি লইল সকল লইয়া সাথে, পলাইল বাইদ্যার দল আইন্ধ্যারিয়া নিশিতে।
( ৫ম থেকে ১০ম অধ্যায় গল্পের মতোন হচ্ছেনা হচ্ছেনা। হতাশ হতাশ! ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।