আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় বড়দিন - আমার উপলব্দি

আমেরিকায় বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে । গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলছে উৎসবের আমেজ । বাড়ির সামনে, মার্কেটের সামনে, উপাসনালয়ের সামনে বড়দিনের নানান সাজ সজ্জা। রাত হলে বাড়ীর সামনে-আশপাশ আলো ঝলমল পরিবেশ আমার দেশের বিয়ে বাড়ীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমেরিকায় রবিবার ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ।

এদিন সুপার স্টোর গুলো বন্ধছিলো । আর তাই আগের দিন কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। আমি গিয়েছিলাম ওয়েলমার্টে। ত্রিশোর্ধএক দম্পতি কয়েকজোড়া কাপড় কিনেছে বাচ্চাদের জন্য । স্ত্রী স্বামীকে কাপড়গুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখাচ্ছে আর বলছে ওদের খুব মানাবে, তাইনা ? অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়েও এছেসে স্টোরে বাবা-মার সাথে ।

আমি এই সমাজের বা এই কালচারের অংশীদার না। আমি যে কালচার লালন করি তাহলো - বাংলাদেশের এক অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া গ্রামে জন্ম আমার। পাড়ার মক্তবে বছরে একবার সভা হতো। সভা মানে আমাদের জন্য মেলা। মক্তবের ছেলে-মেয়েরা দলবেদে মাইকে কেরাত, নাত পড়ত।

মার কাছে দশ/বিশ টাকা চাইতাম। দুএক টাকার বাতাসা, চনাবুট খেতাম। মার জন্য গরম গরম পেয়াজু কিনে নিয়ে যেতাম। রোজা রাখার জন্য বাইনা ধরতাম। খুব ছোট ছিলাম বলে রোজা রাখতে দিতনা।

ইফতারের সময় হয়ে এলে মাইকে আজান শোনার জন্য কান পেতে থাকতাম। ঈদের জন্য নতুন জামা কাপড়, সেন্ডেল কিনতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হতাম। গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি। পড়ালেখা করব, সুন্দর জীবন গড়ব বলে। শহরে বসবাস করেও শহুরে হতে পারিনি।

আর গতবছর থেকে ইউরোপে-আমেরিকায় আছি তবুও আমার সমাজ আমার সংস্কৃতি সেই আমার গ্রাম। ছবি : আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনার ছোট্ট টাউন উইনসর - বড়দিনের আলোঝলমল রাত সে যাই হোক একজন আগন্তুক হয়েও আমেরিকান মানুষের এই আনন্দ, হাসিখুশি আমাকে ছোঁয়ে যায়। আর আমিও আননদ উৎসবের একজন হয়ে হাসিটুকু ভাগাভাগি করতে সংকোচ করিনা। বিদেশে এটি আমার দ্বিতীয় বড় দিন। দেশে থাকতে বড়দিন দেখেছি টেলিভিশনের খবরে আর দুএকবার চট্টগ্রামের পাথর ঘাটার গির্জায় বড়দিনের ছবি তুলতে গিয়েছিলাম।

সেইকি আর বড়দিনের অভিজ্ঞতা বলা যায় ! গত বছর বড়দিনে আমি ছিলাম নেদারল্যান্ডে। এক ডাচ পরিবার আমাকে বড়দিনের ডিনারে আমন্ত্রণ করেছিলো । আমি গিয়েছিলাম। বিশেষ খাবার পাক করেছিলো তারা। ছেলে-মেয়ে, নাত-নাতনী মিলে ছোটখাট পারিবারিক মিলনমেলা।

যখন বড়দিনের গান বাজছিলো। পরিবারের বয়স্কমানুষটি চোখের পানি মুছল । পরে জানতে চাইলাম কান্নার কারণ কী। বলে এই গান ছোট্টবেলায় উৎসব-আনন্দ উদযাপনের কথা মনে করিয়ে দেয়, মা-বাবার কথা মনে করিয়ে দেয় । এখানে আমেরিকাতে এক মার্কিনীর বাড়ীতে ডিনার খাওয়ার আমন্ত্রণ।

ডিনার শেষে সিনেমা দিখছিলো। বড়দিনের কাহিনী নির্ভর পারিবারিক ছবি। কিছুক্ষণ পর একজনকে দেখলাম টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছতে। তারপর ধরা গলায় বলে এই সিনেমাটি বড়দিনের সময় আমার ছেলেকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম হলে-ওর বয়স যখন চার। ঈদের দিন আমার গ্রামে অনেক বয়স্ক মানুষকে কাঁদতে দেখেছি।

তখন জানতে চাইনি কান্নার কারণ কি। আজ বুঝতে পারলাম। এইতো সেদিন পুজোর সময় ফেসবুকে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক স্বপন প্রসন্ন রায় স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এরকম " আমি এখন বিছানা আঁকড়ে রোগ জীর্ণ শরীরটা নিয়ে পিছনের ফেলে আসা দিনের সালতামামি কষছি । সামনে পুজো। মনে পরছে,এই সময় টা তেই আমাদের বারি তে বিসজ্ঞনের ঢাক বেজে ছিল।

আমাদের মা মহা পুজর আগেই চলে গেলেনসেই সাথে নতুন জামার গন্ধটাও উবে গেল। জীবন টা বড় নিঠুর। শিঊলী ফুলের গন্ধ ভরা সকাল বেলাটা আমার চোখে জল এনে দেয়। মাহা মায়ের বদলে আমার মা কে মেনে পড়ছে বার বার। " জীবনে কখনো এই উপলব্ধি হয়নি উৎসব আনন্দের দিনে মানুষ ছোট্টবেলার কথা,হারানো অতিতের কথা, পরম আত্মিয়ের কথা স্বরণ করে এতই আবেগী হয়ে যায়।

এমনকি ছোট ছেলে-মেয়েকে কিভাবে আদর যত্নদিয়ে বড় করেছিলো। কিভাবে উৎসবের সময় বাচ্চাদের নিয়ে কেনাকাটা করতো, বেড়াতে যেত, সিনেমা দেখতে যেত এই সব মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। আমার সেই অজপাড়াগায়ের কৃষক-মজুর মেহনতি মানুষের আবেগ আর ইউরোপ, আমেরিকার মানুষের আবেগ যেন অনেকটা একই। দিল্লির ওই প্রফেসরের কথা আর কি বলব। * মিয়া মুস্তাফিজ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।