লিখতে পারি না, তাই চুপচাপ থাকি প্রতিদিন সেই কাক(!) ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটির জন্য রওনা দিই। আজো তাই করছি, কারন ব্যস্ত আমাদের সবার এই জীবন। এক ফোটাও কার দিকে আমাদের তাকানোর সময় নেই। যে যেভাবে পারছে ছুটছে তার গন্তব্যে। নিজের ভবিষ্যতকে গড়ার জন্যে।
সেই সকাল ৭:৩০ মিনিটে বাসা থেকে বের হই, তারপর শুরু হয় বাস নামের এক আগন্তুকের জন্য অপেক্ষা। মাঝে মঝে তাকে পাওয়া যায় কিন্তু তাতে পা ফেলার কিঞ্চিত জায়গাও থাকে না। সেটা সকাল ৭ টা বলি আর রাত ১২ টা বলি সকল সময় এই আগন্তুকের আচরণ এক। যাই হোক অনেক কষ্টের পরে অবশেষে একটা পেলাম, বসার জায়গাও পেলাম। আমার কপাল বোধ হয় ভাল ছিল, তা না হলে ৩০ কিমি পথ দাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
পিছনের একটা সিটে বসলাম। আমার পাশের সিটেই এক ভদ্রলোক( ভদ্রলোক বললে অনেক ভদ্রলোক আমার কথা দ্বারা আহত হতে পারে) ও তার ৬-৭ বছরের একটা বাচ্চা। আমি একা কোথাও গেলে আমার পাশের কারো সাথে কোন কথা বলি না। এটা আমার একঘুয়েমি না অহঙ্কার তা আমি জানি না। কিন্তু যাই হোক আমি কারো সাথে কথা বলি না, আমি শুধু জানালার বাহিরে তাকিয়ে থাকি আর বাহিরের পরিবেশ দেখি।
বাসের মধ্যে কি হল আর না হল সে দিকে কোন খেয়াল থাকে না আমার। আমার পাশের লোকটি পেশায় রিকশাওয়ালা হবে, আমার যা ধারণা। কারন তার কথাবার্তা শুনে সেটাই মনে হল। সে লোকটি তার ছোট বাচ্চাটার সাথে কথা বলছে, আমার তার দিকে খুব একটা খেয়াল নেই। এইসব নিম্ন সমাজের কথা শুনে আমার কি হবে এই ভেবে হয়ত আমি তাদের কথার দিকে খেয়াল করি না আমার অহংকারের কারনে।
কারন এদের কথা শুনে আমার কি হবে??
বাস তখন গাবতলি বাসস্ট্যান্ডের কাছে, কি ভেবে যেন বাচ্চাটার দিকে তাকালাম। কি অদ্ভুত সুন্দর তার চোখ ২টো না দেখলে কেউ বিশাস করবে না। হটাৎ লোকটার একটা কথা শুনতে পেলাম " ঢাকায় থাকপি আমার লগে?" ছেলেটা বলল, না, এইহানে কেউ নাই, আমার ভালা লাগে না। দ্যাশে যাইয়া কি করবি ওইহানেওতো তোর কেউ নাই। আব্বা, মায় কই গেসে? তোর মায় আল্লাহর কাছে গেছে।
ছেলেটা বলল," দ্যাশে নানি আছে হ্যার লগে থাকমু। " তোর নানি তোরে কয়দিন দ্যাকব?? তুই ঢাকায় আয় আমার লগে থাক, তাইলে একটা ঘর ভাড়া লমু, তুই আর আমি একলগে থাকমু তোরে ভাল একটা ইস্কুলে ভর্তি করামু , তুই জজ-ব্যারিস্টার হইবি। " আরও অনেক কথা, কথাগুলা শুনতে অনেক ভাল লগতেছিল। লোকটার সাথে কথা বলার ইচ্ছা জাগছিল তখন কিন্তু কি ভেবে যেন বলা হল না। তারপর এক সময় আমি নেমে যাই জাহাঙ্গিরনগর আর তারা ২ জন সেই সিটেই বসে রইল আর অপেক্ষা করতে রইল গন্তব্যের জন্য।
এদের মনেও অনেক স্বপ্ন থাকে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে, ঠিক আমাদের বাবা-মায়েদের মত। কারন সকল বাবা-মার চোখে তার সন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। অনেক বড় লোকটার আশা। কিন্তু আমাদের এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এরা কি আদো ঠাই পাবে?? আমাদের পড়াতে আমাদের বাবা-মার কেমন খরচ হয় টা আমাদের সকলের সকলের জানা। লাখ লাখ টাকা খরচ হয় একটি ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে।
তার পরো আমাদের এই দশা। জানি না এই ছেলেটির ভবিষ্যৎ কি হবে!!!! বর্তমানে এইসব পরিবার থেকে খুব কম ছেলেরাই উঠে আসতে পারে। ভবিষ্যতে তার সংখ্যা আরও কমবে। কারন আমাদের বাণিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা চলে এখন টাকার পিছনে।
যেখানে টাকা আছে সেখানে শিক্ষাও আছে। কারন, বর্তমানে শিক্ষা থাকে আমাদের ভদ্রপল্লীতে । তারপরও ওই লোকটির কথা শুনে মনটা ভরে গেল। কারন সারাদিন ২ পায়ে প্যাডেল মেরেও তার সন্তানকে পড়াতে চায়। মানুষ করতে চায় তার সন্তানকে।
যেখানে অধিকাংশ বাবা-মা তার সন্তানকে কাজে পাঠিয়ে দেয় পেটের তাড়নায়। লোকটার স্বপ্ন যেন সত্য হয় একদিন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।