বুকে জমা ---- দীর্ঘশ্বাস কারাগারের গরাদে মাথা কুটে মরা আমার বাক স্বাধীনতা । শোষকের ভয়ে বিনীত- কাপুরুষের মতো -- জীবন যুদ্ধে পরাজিত আমরা।
মুসলিম ধর্মের অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে - এই ঈদ। কিন্তু , অনেক ভিন্নমতালম্বিরা , এমনকি খোদ কিছু সামান্যসংখ্যক মুসলিমের মনে প্রশ্ন উদয় হচ্ছে - এটাকি নিষ্ঠুরতা নয়??যদি , এটি মনে করেন - তাহলে বুঝতে হবে - জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
আসলে , কুরাবানী মোটেই অমানবিক বা নিষ্ঠুর কিছু নয়...বরং অনেকটাই মানবিক।
কেউ কেউ বলেন- কুরাবানীর ঈদ নিষ্ঠুর। তাদের ভাষ্যমতে কি এটা কি অমানবিক এবং নিষ্ঠুর কাজ। তাদের জন্যে না লিখে পারলাম না...
আচ্ছা আপনি কি খান?
শাক সব্জি , ভাত , ডাল ইত্যাদি------------ আপনি জানেন কি এগুলো এসেছে - গাছ থেকে।
ভাত এসেছে ধান , ডাল এসেছে ডাল গাছ , শাক সব্জি এসেছে শাক সবজির গাছ থেকে।
আপনি জানেন নাকি জানি না- গাছেরও জীবন আছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে - গাছ যখন কাটা হয় , তখন গাছ চিৎকার করে কাঁদে - কিন্তু তার কম্পনাঙ্ক মানুষের শ্রবণশক্তির মধ্যে নয়। গাছেরও অনুভূতি শক্তি আছে - সর্বোপরি একটা জীবন আছে। আপনি যখন - ভাত খাচ্ছেন - তখন একটা ধানকে কাটা হয়েছে - সেই ধানটিও চিৎকার করে কেঁদেছে। উলটো , তারা আমাদের লাইফ-সেভার। নিয়মিত অক্সিজেন উৎপাদন করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে।
জীবন রক্ষাকারী , অবলা এই গাছ কে যখন আমরা হত্যা করি - তখন কি অপরাধ হয় না।
তাহলে প্রশ্নঃ এটা কিভাবে জীব হত্যা হল না?
শুধুতো হত্যাই নয় , বরং উপকারী এবং অবলা একটি প্রাণীকে হত্যা। এছাড়া , একটা ধান গাছের একটা জীবন , এক প্লেটে হাজার হাজার ধান গাছের জীবন - আর এদিক দিয়ে গরু , ছাগল শুধুই একটাই জীবন।
তথাকথিত , নিষ্ঠুরতা , আর অমানবিকতা এক্ষেত্রে আরো অনেক অনেক বেশি।
কেউ কেউ আবার শুধুই তর্কের খাতিরে বলতে পারেন--
আরে ভাই , এদের অনুভূতি শক্তিতো কম! তাই এদের হত্যা করলে কম অপরাধ হবে।
---- আচ্ছা , ধরুন আপনার একটা ভাই আছে - অন্ধ , বোবা , কালা। এখন একজন আপনার ভাইটিকে হত্যা করলো। তখন কি আপনি কোর্টে গিয়ে বলবেন - বিচারক - একে কম শাস্তি দিন??কারণ , আমার অবলা ভাইয়ের অনুভূতি শক্তি কম ছিলো। উল্টো , আপনি বলবেন - একে আরো বেশি করে শাস্তি দিন , কারণ - এ আরো বড় অপরাধী। একজন , অবলা কে হত্যা করেছে।
ঠিক সেরকমই , গাছপালা সেরকমই অবলা। তারা চিৎকার করে কাঁদে , কিন্তু আমরা শুনতে পাইনা। তারা করাতের সামনে পড়েও বাধা দিতে পারে না। নিষ্ফল আর্তনাদে , তাদের জীবন শেষ হয়।
কিন্তু , প্রাণীরা বাধা দিতে পারে।
তারা গাছের মত - এত দুর্বল নয়। প্রাণীরা গাছের মত এতোটা অসহায় নয়।
তাই তথাকথিত মানবিকতা আর নিষ্ঠুরতার হিসেবে , প্রাণী হত্যার চেয়ে , গাছ হত্যা আরো ভয়ানক অপরাধ।
জীব হত্যা যদি মহাপাপ হয় , তাহলে বৃক্ষ হত্যা মহা মহা পাপ।
এরপরেও কেউ কেউ আমাকে প্রশ্ন করেছেন - তাই বলে দেশজুড়ে উৎসব করে কেন???
উত্তরটা হলঃ বাংলার কৃষক হেমন্তে ধান কাটার সময় যে উৎসব করে - তা নজিরবিহীন!পাকা ধানের কাঁটার সময়ে কাস্তের শব্দের শাঁ শাঁ শব্দ নিয়ে রবার্ট ফ্রস্ট তাঁর সেরা একটা কবিতা লিখেছিলেন - জানেন।
আপনার কথা মতে - চুপি চুপি কাঁটার দরকার ছিলো -উৎসব করার কি দরকার? হত্যা হচ্ছে , আর উৎসব!!গ্রামে গ্রামে মানুষ ভাপা পিঠা বিলায় , নবান্নের উৎসব চলে - এগুলোও কি হত্যা নয়।
একই প্রাণের ক্ষেত্রে কেন দুই নীতি।
আরো এককাঠি সরেস কেউ কেউ আছেন - তারা বলেন - পশু হত্যা করলে পশুর ভাব মানুষের মধ্যে চলে আসে ??
আসলে , এটা কোন প্রমাণিত সত্যি নয়। এছাড়াও , ইসলামে - কোন হিংস্র প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ। চতুষ্পদ গৃহপালিত জন্তুগুলি - স্বভাবে অত্যন্ত ধীরস্থির।
যদি , স্বভাব ট্রান্সফার হয় - তাইলে - আমাদের বেশি বেশি করে - গরু ছাগল খাওয়া উচিত। কারণ , দিন দিন ভায়োলেন্স বাড়ছে। মানুষের ধীর স্থির হওয়া বড় জরুরী।
আরো , দুই কাঠি সরেস কেউ কেউ আছেন - তারা বলে উঠেন -
আচ্ছা ভাই মানলাম - সব কথা। তাই বলে সবার সামনে এরকম জনসম্মুখে করতে হবে কেন?
পুরাতন উত্তর দিয়েই দেওয়া যায় - কারণ , এটা যখন অমানবিকই না হয় - তাহলে লোকসম্মুখে করলে সমস্যাটা কোথায়।
পিঠা উৎসবে সবাই আনন্দ করে পিঠা বানালে , যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে এটাতে সমস্যাটা কোথায়।
আসলে , ভাই কুরবানির উদ্দেশ্য মাংস খাওয়া নয়। এটা ত্যাগের একটা নিদর্শন। মনের পশুত্বকে বর্জন করার একটা মাধ্যম। সবার সামনে করা হয় এই কারণ - যদি কোন ধনী ব্যক্তি - ১২ লাখ টাকা দিয়ে একটা গরু কুরবানি দেয় - তাহলে সেই ১২ লাখের এক ভাগ ৩ লাখ টাকার মালিক - বস্তির মানুষগুলো।
আর , তিন লাখ আত্মীয় স্বজন , আর তিন লাখ নিজের। চিন্তা করুন ব্যাপারটা। এতো টাকা দিয়ে কিনলো - আর সেই জিনিশের মালিক কিন্তু আপনি না। তিন ভাগের শুধুই এক ভাগের মালিক আপনি।
সারা বিশ্বে এরকম মহৎ নিদর্শন আর একটি আছে কিনা - বলুনতো আমাকে?সামাজিকতার এ এক অনন্য নিদর্শন।
সকল ক্ষেত্রে উৎসব শুধুই ধনীর , গরীবের অধিকার যা আছে তা আছে শুধু ধর্ম গ্রন্থের পাতায়। কিন্তু , কুরবানি আছে বাস্তবে। বাধ্যতামূলক ভাবে গরীবের জন্যে।
নামে বিজ্ঞানমনস্ক আর কাজে এখনো প্রাগৈতাহাসিক হলে চলবে কিভাবে?একুশ শতকে বসে প্রাগৈতাহাসিক সিদ্ধার্থযুগিয় চিন্তা চেতনা কখনো মুক্ত বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় না , ঘটায় সঙ্কীর্ণতা , ঘটায় মানুষের মাঝে পারস্পারিক ঘৃণা।
আসলে , বেঁচে থাকতে হলে হত্যা করতে হবেই।
এটাই স্রস্টার অমোঘ নিয়ম। আপনি , ইচ্ছে করলে জীব হত্যা না করে - একদিনও বেঁচে থাকবেন না।
আমার এক হিন্দু বন্ধুকে বুঝানোর পর , দেখলাম ব্যাপারটা ভালভাবেই বুঝেছে। কুরবানির নাম শুনলে দশ মিনিট আগেও যার মুখ কালো হয়ে উঠতো - সে মুখ আর কালো হচ্ছেনা ।
আসুন , ঘৃণার পর্দা সরিয়ে ফেলি - পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধের জয়গান গাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।