আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজবাড়ি ও মুক্তাগাছার মন্ডা (ছবিব্লগ)

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আমার হাবিজাবি লেখা পড়ে কারো মেজাজ খারাপ হলে আমি দায়ী নই!! হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হলো আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মুক্তাগাছা রাজবাড়ী দেখতে যাব। খুব দূরে না তাই আমরা নিজেরাই যেতে পারবো, বড় কারো দরকার নেই। সবাই যার যার বাসায় বললাম। যেই শুনে তার জিজ্ঞাসা, “তোমরা একা একা? সাথে কোন ছেলে নেই?” কি মুশকিল! ‘আমরা কয়েকজন’ আবার একা হলাম কিভাবে? সাথে ছেলে থাকলেই কি সুবিধা এটা আমার ছোট মাথায় ঢুকলোনা। আমার বাসায় অবশ্য এসব নিয়ে কোন সমস্যা হয়না।

কিন্তু তিনজনকে বাসা থেকে আটকে দেয়া হল, ‘একা একা’ যাওয়া যাবেনা। নিদেনপক্ষে একটা ছেলে থাকলেও হতো। বড়ই অদ্ভুত কথাবার্তা! কেবল একজন ছেলে না থাকায় আটজন মেয়ে মিলেও ‘একা’ এর ‘অপবাদ’ থেকে রেহাই মিললো না। গার্জিয়ান না দিলে কি আর করা! আমরা আট থেকে পাঁচে নেমে এলাম। যাই হোক, সকাল ১০টার দিকে রওনা হলাম মুক্তাগাছার উদ্দেশ্যে।

তারপর মুক্তাগাছা সিএনজি স্টেশন থেকে ভ্যানে করে রাজবাড়ি। রিকশা করেও যাওয়া যেত, কিন্তু তাতে কি আর ভ্যানে পা ঝুলিয়ে যাওয়ার মজা পাওয়া যাবে? রাজবাড়িটি মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী এর বংশধর জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য্য এর বিনোদবাড়ি। জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য্য চৌধুরী মানুষ কিংবা শাসক হিসেবে কেমন ছিলেন জানা নেই। তবে উনার জন্য আমার আলাদা একটা শ্রদ্ধা বোধ আছে। উনার অর্থায়নে, উনার পূণ্যময়ী জননী বিদ্যাময়ী দেবী এর নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় আমার প্রিয় স্কুল বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

(এটা নিয়ে আরেকসময় কথা হবে আশাকরি) কোন গাইড নেই, মানুষজন নেই, কোথাও কিছু লেখা নেই। তাই বুঝতে পারিনি কোন ঘরে কি হতো। রাজবাড়িতে ভগ্নপ্রায় কিছু দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণ করার কেউ নেই। অনেক জায়গায় ইট খুলে নিয়ে গেছে।

যদিও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নীল রঙের একটা সাইনবোর্ড ঝুলছে রাজ ফটকের পাশেই। ভাবতে খুব অবাক লাগে, এক সময় এ বাড়ির সামনে দিয়ে প্রজাদের জুতোপায়ে ও ছাতা মাথায় যাওয়া নিষেধ ছিল। আজ এটি পড়ে আছে অবহেলায়। ভেতরের দিকের ছবি ভগ্ন প্রাসাদের একাংশ কি হতো এই ঘরে? কারুকার্যখচিত দেয়াল। ইট খুলে নিয়ে গেছে দোতালা বাংলো বাড়ি, একসময় দেখার মতো সুন্দর ছিল বোঝা যাচ্ছে কত বছরের পুরনো গাছ কে জানে! পূজার ঘর দেয়ালে পরগাছা বাংলো বাড়ির ভেতরের দিক দোতালায় উঠার সিঁড়ি, এখন উঠার কোন অবস্থা নেই।

ভাঙ্গা সিঁড়িতে কাঁটা ফেলে দেয়া আছে যেন কেউ না উঠে। মন্দির রাজবাড়ির বাইরের দিক মুক্তাগাছায় যাবেন অথচ মন্ডা খাবেন না এটা হতেই পারে না। রাজবাড়ির কিছু দূরে আছে মন্ডার দোকান। পুরো মুক্তাগাছায় অসংখ্য মন্ডার দোকান আছে। কিন্তু মন্ডার আদি স্রষ্টা হচ্ছেন গোপাল নাথ পাল।

ভাবছেন গোপাল মন্ডা ভান্ডার দেখলেই ঢুকে পড়বেন? এই নামেই দোকান আছে অন্তত তিনটি। তিনটিতেই আছে সিংহের ছবি। কিন্তু আসল মন্ডার স্বাদ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক ভালো। গোপালনাথের দোকানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো দোকানটাই আসল মন্ডার দোকান। আদি ও আসল মন্ডার দোকান ভেতরে আদি স্রষ্টা গোপালনাথ এর মূর্তি আছে, আর আছে জমিদার শ্রী জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য্য এর লেখা প্রশংসা পত্র।

স্টার হেরিটেজে মন্ডা নিয়ে ফিচার শীতের দিন এত তাড়াতাড়ি বেলা ডুবে যায়! ঘুরাঘুরি শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে রওনা দিলাম ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে, বাসায় আসতে আসতে প্রায় সোয়া তিনটা বেজে গেছে। আসা যাওয়ার সময় চোখে পড়লো ম্যাক (বিল্ডিং ছাড়া দেখার কিছু নাই, একটা গাছও চোখে পড়েনাই) বিজিবি ময়মনসিংহ (বেশ ছিমছাম এলাকা) আর রিভার প্যালেস (একটা অত্যাধুনিক হোটেল, এরকম গ্রাম এলাকায় যেটা ভাবাই যায় না)। তবে গাড়িতে এত ঝাঁকি, আর জায়গার সংকীর্ণতার কারণে ক্যামেরা বের করার সাহসই পাইনি। এতক্ষণ কষ্ট করে পড়ার জন্য ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।