...
তায়েফ শহরে কয়েকদিন-১
তায়েফ শহরে কয়েকদিন-২
পরের দিন সকাল বেলা সুবরা প্যালেস দেখতে গেলাম। শহরের মাঝখানেই। এটাকে এখন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। শতবর্ষী প্রাচীন এই প্রাসাদটিতে অনেক সৌদি রাজাই বসবাস করেছেন। মূলত বাদশাহ আব্দুল আজিজ এটাকে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতেন।
তায়েফের সৌন্দর্য আর আবহাওয়ার কারনে উনি প্রায়ই পরিবারসহ এখানে চলে আসতেন, মালভূমিতে হরিন ও অন্যান্য প্রানী শিকার করতেন।
সুবরা প্যালেস
আমরা গিয়ে জাদুঘরে কাউকে পেলাম না। তাই ভেতরে ঢুকতে পারিনি।
এরপর চললাম সুক (মার্কেট) ওকাজের দিকে। অতীতে এখানে বিশাল বাজার বসত।
বেদুঈনরা দূর দূরান্ত হতে এসে তাদের জিনিষপত্র বিক্রী করতো। এখানে একসময় কবি লড়াই হতো। কবিরা কবিতা দিয়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতো। সুক ওকাজে গিয়েও হতাশ হতে হলো। ১ জন গার্ড ছাড়া কোথাও কেউ নেই।
এলাকাটা কাটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সাফিয়া’র সময় এখানে বিশাল মেলা হয়। বাকী সময়গুলোতে এখানে কেউ আসেনা। আমরা ভেতরে ঢুকলাম- দেখার তেমন কিছুই ছিল না। ... ফিরে আসার পথে বেশ কিছু উটের দেখা মিলল।
সুক ওকাজের প্রবেশদ্বার
দে দৌড়
আমাদের ড্রাইভার সাহেব বুঝতে পারছিল না- তায়েফে ঘুরার কি আছে। আমরা জানতাম সুক ওকাজের আশে পাশেই কোথাও একটা তুর্কি দূর্গ আছে, যেখানে “লরেন্স অব এ্যারাবিয়া’র” যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু মাহমুদ ভাই তার কোন হদিস দিতে পারলেন না। দুঃখ মনোরথে ফেরার পথ ধরলাম। আসার পথে তায়েফ ইউনিভার্সিটি দেখলাম।
আমাদের ইউনির মতো শহর থেকে দূরে নয়। তায়েফে ভার্সিটিকে কেন্দ্র করে একটা শহর গড়ে উঠেছে। অনেক সুযোগ সুবিধা আশে পাশে।
তায়েফ ইউনিভার্সিটি গেট
ফেরার পথে অনেক গার্ডেন চোখে পড়লো- বিশেষ করে কিং ফাহাদ গার্ডেন দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সব বন্ধ, সামার সিজন ছাড়া এগুলো খোলা হয় না।
মেজাজ অনেক গরম হল, সকাল থেকে শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমাদের দুঃখ দেখে মাহমুদ ভাই হোটেল রামাদা’র দিকে চললেন।
হোটেল রামাদা
হোটেল রামাদায় হানিমুন ... আর্টিস্টিক সাজে বিয়ের গাড়ী
সেখানে সৌদি আরবের সবচেয়ে দীর্ঘ কেবল কার আছে। যেতে আসতে প্রায় ১ ঘন্টা লাগে। আমরা ওখানে গিয়ে পৌছলাম ১১.৩০ এ।
কেবল কার ১ টার আগে চালু হবে না। কি আর করা! হোটেলের আশে পাশে ঘুরে দেখতে লাগলাম। অনেক হাজীকে দেখলাম পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পুলিশকে ফাঁকি দিচ্ছে। তারা অবৈধভাবে হজ্জ্ব করতে যাচ্ছিল।
নীচের শহর ...
লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে।
আমি ও মিলন বাহির হতে খাবার আনতে গেলাম। ভেতরে অনেক দাম। গরম পাথরের উপর মুরগী পোড়ানো হচ্ছিল। সবার জন্য রাইস, পোড়ানো মুরগী আর ড্রিংকস নিলাম।
কেবল কারে ৬ জনের জন্য ৫৪০ রিয়ালের টিকেট লাগলো।
কেবল কার দিয়ে যখন নীচে নামছিলাম, সে এক অন্যরকম দৃশ্য। কেবল কার লাইনটি কখনো উচু বা কখনো নীচু হয়ে পাহাড় সারির মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিল। নীচে দেখতে পেলাম তায়েফের সেই বিখ্যাত রোড (বাংলাভিশনে এই রোডটি দেখানো হয়)। ঠিক যেন NFS games এর একটি রোড। একটি বিশাল বাঁধ ও দেখতে পেলাম, কিন্তু এখানে এটা কি আজে আসে তা বুঝতে পারলাম না।
কেবল কার, নীচে বিশাল বাঁধ
তায়েফের সেই বিখ্যাত রোড ...
বাঁধটি
নীচে একটি থিম পার্ক করা হয়েছে, বিভিন্ন রাইড আছে, ওয়াটার পার্কও আছে। ২৫ মিনিটের ভ্রমণ শেষে যখন নীচে নামলাম, তখন ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। দারূণভাবে সব সাজানো। একটি ছাউনির নীচে লাঞ্চ করে নিলাম।
পাহাড়ের পাদদেশে দারূণভাবে সাজানো...
জিভে জল আনা লাঞ্চ
ট্রেনে চড়ে বেড়ালাম।
এক জায়গায় দেখলাম ভূতের ঘর- এখানে মানুষ টিকেট কেটে ভয় পেতে যায়। আমরাও গেলাম। টিকেট বিক্রেতা বললো কি ধরনের “ভয়” চাও? Easy/Medium/Hard? প্রথমে ভাবলাম সহজটাই নেই, পরে কি মনে করে সবচেয়ে কঠিনটা নিলাম, টাকা খরচ করে কম নেব কেন? জনপ্রতি ১৫ রিয়াল করে টিকেট।
ভূত ঘর
-আমাদেরকে একটি অন্ধকার পথে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। আমি বুদ্ধি করে সবার পেছনে রইলাম, আদিল ভাই সবার আগে।
হঠাৎ করে প্রচন্ড চিৎকার, হায়েনার হাসি, আলো আধারির খেলা। সামনে একটি কফিন, কেউ শুয়ে আছে, হয়ত এখুনি উঠে বসবে। ঠিক সেই মূহুর্তে আমি অনুভব করলাম আমার সামনে কেউ নেই... আমি একা। সবাই কিভাবে যেন আমার পেছনে চলে গেছে। আদিল ভাই চালাকি করেছে, আমার দেখানো পথ ধরে এগুতে চায়।
আমরা গুটি গুটি পায়ে সামনে যাচ্ছি। মিলন বুদ্ধি করে সবার পেছনে রয়েছে। এক সময় তার মনে হতে থাকলো কেউ তার পায়ে টোকা দিচ্ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে এক কংকাল তাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা একটি যায়গায় সবাই গোল হয়ে গেলাম।
... তারপর সবার মনেই বোধদয় হলো আসলে এ খেলায় আমদের ভয়ের কিছু নেই, কোন ক্ষতি হবে না। আর এটাই আমাদের মজা পাওয়াটাকে কিছুটা হলেও কমিয়ে দিল। আমরা ভয় না পেয়ে হাসতে হাসতে বাকী পথটুকু শেষ করলাম। যে আদিল ভাই ভয় পেয়ে আমাকে সামনে ঠেলে দিয়েছিল, তিনি হাসতে হাসতে বললেন –কোন ভয়ই পেলাম না।
অনেকগুলো ওয়াটার রাইড ছিল।
সৌদিরা দেখলাম ভালোই মজা করছে। আমাদের সাথে অতিরিক্ত জামা ছিল না, তাই নামলাম না। আসলে আমরা জানতামনা যে এখানে ওয়াটার রাইডগুলো আছে। পাশেই মেয়েদের জন্য দেয়ালঘেরা ওয়াটার রাইড। আমাদের সাথের মেয়েরা ওখানে দেখতে গেল।
সৌদি নারীরা নাকি ওখানে ভালোই মজা করছিল। ...
আমার খুব ইচ্ছে করছিল “টোবগান” নামক একটা রাইডে চড়তে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দ্রুতগামী একটা গাড়িতে করে ছুটে চলা। আমি একা যেতে চাচ্ছিলাম না। অন্য কেউ সাহস করলো না।
আক্ষেপ রয়েই গেল।
টোবগান
ভাবী চাচ্ছিলেন সূর্যাস্তের আগে আগেই কেবল কারে উঠতে। তাহলে নাকি কেবল কারে বসে দারূন একটা সূর্যাস্ত দেখা যাবে। আমরা তা মিস করে ফেললাম।
উপরে উঠতেই প্রচন্ড শীত।
গরম কাপড় কেউ নিয়ে আসিনি, সবাই কাঁপতে লাগলাম। গাড়ীতে করে যখন ফিরছিলাম শাকিলা বললো সে আল-বাইকের বিখ্যাত ব্রোস্ট খাবে। সবাই দেখলাম সাথে সাথেই রাজী, সবাই টেস্ট করতে চায়। মার্কেটের সামনে থামলাম। আল-বাইকের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে।
বিশাল মার্কেট। সাইনবোর্ডের কাছে গিয়ে দেখা গেল সেখানে আল-বাইক নাই, অন্য কোথাও। হাটছি তো হাটছি ... দোকানতো খুঁজে পাই না। এতলা সেতলা করে দোতলার শেষ মাথায় আল-বাইক পাওয়া গেল। কিন্তু ব্রোস্ট নাই।
মেজাজটাই গরম হয়ে গেল, এতো কষ্ট করে আসলাম। ম্যকডোনল্ডসে গেলাম, অনেক ভীড়- বার্গার খেতে গেলে সময় লাগবে। আদিল ভাই ও মিলন অন্য একটা দোকান হতে খাবার নিয়ে নিল।
আমি আমাদের হোটেলের পাশেই এক তুর্কি রেস্টুরেন্ট হতে ২টি স্যান্ডুইচ নিয়ে নিলাম। আহ! সেকি স্বাদ।
পরেরদিন সেখানে স্যান্ডুইচ কিনতে আবার গিয়েছিলাম- শুক্রবার ছিল, রেস্টুরেন্ট খোলা পাইনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।