পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি...
সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ২২ লক্ষ্য বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছেন। রেমিটেন্স প্রেরণের দিক থেকে সৌদি প্রবাসীরা প্রথম সারিতে বললে সেটা হয়তো ভুল বলা হবে না। রেমিটেন্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিতে কি ভুমিকা রাখছে তা নতুন করে বলারও কিছু নেই। বিগত বিশ্বঅর্থনৈতিক মন্দায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে কিভাব আগলে রেখেছিল দেশের সচেতন নাগরিক মাত্র তা অবগত আছেন।
আমার এই লেখার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, সৌদি সরকার বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সকল ভিসা (হজ্ব ও ওমরা ভিসা ব্যতিত) বন্ধ রেখেছে।
গত এক বছর থেকে প্রবাসীদের শেষ ভরসা ভিসিট ভিসাও শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি সরকার ।
কারনটা যাই হোক না কেন, আমাদের সরকার এই ব্যাপারে এখনও কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করেন নি। এখনও করছেন না।
আমার নিজের উদাহরণই যদি দেই,
আমি বিগত প্রায় আট (৮) বছর ধরে সৌদি প্রবাসী।
নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে সুনাম ও সন্মানের সাথে আইটি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
দেশ ও দেশের মানুষকে এদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষদের কাছে পজিটিভলি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
একটি মধ্যমানের কোম্পানীতে ৮০,০০০ (আশি হাজার বাংলাদেশি টাকা) টাকা বেতনের চাকুরীর সিংহভাগ (৫৫,০০০) পঞ্চান্ন হাজার টাকা প্রতিমাসে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দেশে রেমিটেন্স হিসের বৈধ্য পথে গত ৮ বছর যাবত প্রেরণ করে আসছি।
২০০৮ এর শেষে বিয়ে করার পর ২০০৯ এর শেষ দিকে এক কন্যা সন্তানের পিতা হই। এরপর আমার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আমাকে ফ্যামিলি ষ্ট্যাটাস (বাসা ভাড়া, স্ত্রী সন্তানের জন্য হেলথ ইন্স্যুরেন্স, স্বাস্থ্যসেবা, আসা যাওয়ার প্লেন টিকেট। এছাড়া কোম্পানীর তরফ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ীতো আছেই) প্রদান করেছে।
এত কিছুর পরও আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে আমার কাছে সৌদি আরবে আনতে পারছিনা, কারন সৌদি সরকার শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য ফ্যামিলি ভিসা, ভিসিট ভিসা সব বন্ধ করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য আমার পার্সপোর্ট ও ইকমা বা আইডিতে আমার পেশা ইঞ্জিনিয়ার সমমানের।
আমাদের মহামান্য সরকার যারা আমাদের দেশেতো চাকরীর কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি বরং বিদেশে বসবাসরত সন্মানজনক ও উচ্চরেমিটেন্স প্রদানকারী প্রবাসীদেরও তাদের মূল্যবান চাকুরী ও ক্যারিয়ার ধ্বংস করছেন।
আমার স্ত্রী সন্তান যারা স্বামী ও পিতার অনুপস্থিতে নিরাপত্তাহীনতা সহ নানা বিধ প্রতিকূলতার মধ্যে দিন যাপন করছে তাদের কথা চিন্তা করে এবং আমাদের সরকারের এহেন কুম্ভকর্ণের ন্যায় দায়িত্বজ্ঞানহীন ভুমিকার কারনে আমি বাধ্য হয়ে এ বছরের শেষে আমার চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
এখানে আমার অনেক পরিচিত বন্ধু বান্ধব যারা আমার মত সন্মানজনক ও উচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণ করেন তারাও তাদের স্ত্রী সন্তানকে নিজের কাছে আনতে না পেরে বাধ্য হয়ে দেশে চলে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন।
এভাবে চলতে থাকলে দেশে বেকারত্বের হার যেমন বাড়বে তেমনি দেশ হারাবে মূল্যবাণ রেমিটেন্স যা আজ হোক কাল হোক দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনবে।
আমাদের সরকার যদি তাই চান, তবে থাকুন আপনারা কুম্ভকর্ণের ঘুমে, দরকার নেই আপনাদের কোন কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের। আমাদের মতো হতভাগ্য প্রবাসীদের অভিশাপ রইলো আপনাদের প্রতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।