...
ভাবতেও পারিনি আমার ভিসা রিজেক্টেড হতে পারে। কন্সুলার সাহেবের সাথে দেখা করতে চাইলাম। উনি ছিলেননা বলে দেখা হলোনা। আরো দু’জন শিক্ষককে পেলাম, তাদেরকেও ভিসা দেয়া হয়নি। একজন ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।
উনি বাকহারা ও নিজেকে অপমানিত মনে করছিলেন। উনি কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির নিউক্লিয়ার & এনার্জি ডিপার্টমেন্টে হেড হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগেও উনি একই ডিপার্টমেন্টে হেড হিসাবে কাজ করেছেন। আবার উনাকে বিশেষ রিকোয়েস্ট করে ডিপার্টমেন্টে যোগ দেবার জন্য রাজী করা হয়েছিল। উনি আক্ষেপের সাথে বললেন, আগেরবার উনাকে এম্বাসেডর ডেকে এনে ভিসা দিয়েছিলো ...
বাংলাদেশ হতে আমরা এবার ৯ জন কিং খালিদ ইনিভার্সিটিতে নিয়োগ পেয়েছিলাম।
৮ জনই ছিল ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের, আমিই একমাত্র বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ড। তাই কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ ছিল না। প্রসঙ্গত বলতে হয়, শাকিলা ছুটিতে দেশে চলে এসেছিল। সে সবার সাথে যোগাযোগ করল। ৯ জনের মাঝে আমি, ইশরাত আর সুরাইয়া এ্যাম্বাসিতে এপ্লাই করে ছিলাম, বাকী ৬ জন নাকে তেল দিয়ে আরাম করছিল।
এর মাঝে শাহরিয়ার নামে একজনে সাথে পরিচয় হলো, খুলনা ইউনিভার্সিটির। মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন দিত, কি কি করতে হবে তা জানতে। যখন শুনলো আমরা কেউই ভিসা পাইনি, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না – যাবে কি, যাবে না। আমি তাকে ফোনে সাহস যোগাতাম- চলেন চেষ্টা করি, না হলে একটা সুযোগ হারাব। এক সপ্তাহ লাগলো তার সিদ্ধান্ত নিতে।
একদিন সে আমার অফিসে এসে ঘুরেও গেল ... আমি কাগজপত্র ঠিক করে দিলাম।
ইশরাতের হয়েছিল আরেক সমস্যা। এ্যাম্বাসি তার কাগজপত্রই হারিয়ে ফেলেছিল ...
... পরেরদিন সকালে আমি আর শাকিলা আবার এ্যাম্বাসি গেলাম কন্সুলার সাহেবের সাথে দেখা করতে। অনেক রিকোয়েস্টের পর দেখা মিলল। আমার সাথে পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন।
কন্সুলার সাহেব নতুন জয়েন করেছেন, যা বললেন তা হলো- উনার কিছু করার নাই, নতুন ম্যানেজমেন্ট, নতুন রুলস, নতুন পলিসি। একেবারে স্ট্রেইট কথা, আমি দমে গেলাম।
এবার আমার ওয়াইফ তার কিং খালিদ ইনিভার্সিটির অফিসিয়াল কার্ড দেখিয়ে কথা বললো। কন্সুলার সাহেব একটু নরম হলেন, বললেন- ওকে, ইনিভার্সিটি থেকে অফিসিয়াল কাউকে আমার সাথে কথা বলতে বলো।
এ্যাম্বাসি হতে বের হয়েই ইনিভার্সিটির রেজিস্টার সাহেবকে ফোন দিলাম।
রমজান মাস... ইনিভার্সিটি ছুটি ছিল। তবে আশা ছিল এডমিনিস্ট্রেসন অফিস খোলা থাকতে পারে ... রেজিস্টার সাহেবকে গর গর করে সব বললাম, কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম উনি ইংলিশ বলতে পারেননা, বুঝেনওনা। উনি “খালাস, খালাস” বলে ফোন রেখে দিল। এখন সৌদি এসে বুঝেছি- “খালাস” শব্দটা ওদের কাছে কতটা প্রিয়। কাজ হোক বা নাহোক, “খালাস” করে দিতে পারলেই তারা বাঁচে।
উপায় না দেখে আমার ডীনের সাথে কথা বললাম, SMS দিলাম, বিভিন্ন ই-মেইলে মেইল করলাম। যত প্রচেষ্টা দরকার, করলাম। মেইলে কাজ হলো, একদিন একটা রিপ্লাই পেলাম- তারা আমার ব্যাপারটা দেখবে। এভাবে কেটে গেল যন্ত্রণাময় আরো ১০টি দিন। অফিস করতাম যন্ত্রের মতো, সবাই জিঙ্গাসা করতো- কবে যাচ্ছি? হেসে হেসে বলতাম, এইতো ১৮ সেপ্ট. জয়নিং।
১০ দিন পর মেইল পেলাম, তারা এ্যাম্বাসিতে কথা বলেছে, আমাকে এ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করতে বলল। পরেরদিন সকালেই এ্যাম্বাসি গেলাম। ভাগ্যক্রমে কন্সুলার সাহেবকে পেয়ে যাই। উনি নিজে কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই আমার পাসপোর্ট রেখে পরেরদিন বিকেলে আসতে বললেন...
পরেরদিন বিকেলে অফিস হতে এ্যাম্বাসি যাই... ভিসা সহ পাসপোর্টটি হাতে পেলে বুঝতে পারি সত্যিই আমি ১৮ সেপ্ট. জয়েন করতে পারবো।
মূলত আমার যোগাযোগের কারণে বাকী সবার সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
কিন্তু আমি, ইশরাত ও শাহরিয়ার ছাড়া আর কেউ আসেনি। বাকী সবাই হবে কি, হবেনা এই চক্রে আর এপ্লাই করেনি। মূলতঃ আমাদের দেশের দূর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারনে আমরা অনেক সুযোগ হারাচ্ছি। ... এ্যাম্বাসি কেন আমাদের সাথে এমন ঝামেলা করলো, তা পরে জানতে পেরেছিলাম। এখানে আর তা শেয়ার করতে চাই না, সৌদি প্রবাসি সবাই বোধয় ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারেন, কিন্তু সেভাবে কি আমরা কাজ করছি? ... আমাদের ভাবমূর্তি কি আমরা ধরে রাখতে পারছি?
... অবশেষে ১৮ সেপ্ট. জয়েন করলাম ... সে আরেক গল্প ... (চলবে)
http://www.aimdhaka.blogspot.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।