...
দিনগুলো কেমন করে যেন দৌড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আমরা প্রতি বছর ২ মাসের ছুটি পাই। জুলাই,আগস্ট দু’মাসের ছুটিতে দেশে ফিরব। এর আগের প্রতিটি উইকএন্ডেই ব্যস্ত থাকতে হবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি, শপিং আর আড্ডায়।
গত ১৩ মে ঘুরে আসলাম আবহা’র পাশের ছোট একটি গ্রাম “মালাহা” হতে।
দিবা’র গ্রাম সম্পর্কিত এক কাকা ওখানে কফিলের মাজরায় (কৃষি) কাজ করেন। উনি দিবা’র কাছে মাঝে মাঝেই আসেন, নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ান। উনার রান্না করা খেবসা আর বিরিয়ানি এখনো জিভে জল আনে। আমাদেরকে প্রায়ই উনার গ্রামে ঘুরে আসতে বলেন। যাব যাব করেও এতদিন যাওয়া হয়নি।
... একদিন ফোন করলেন, এবার আসতেই হবে। কয়েকজন মিলে দুম্বা জবাই করেছেন, দুম্বা’র মাংস খাওয়াবেন। আমি সৌদি এসে এখনো দুম্বা’র মাংস খাইনি, ভাবলাম এ সুযোগ হারালে চলবেনা। কিন্তু বিধি বাম। পরপর দুটি ট্রিপে রিয়াদ ও দাম্মাম যেতে হলো।
তাই ফিরে এসে আর দেরী করলাম না, কাকার বাসায় হানা দিলাম।
মালাহা গ্রাম
মালাহা আমাদের এখান থেকে মাত্র ২৫ মিনিটের ড্রাইভ, মাহাইল যাবার পথেই পড়ে। রাস্তা থেকে সৌদি পাহাড়গুলোকে শুষ্ক, রুক্ষ আর ন্যাড়া মনে হয়। কিন্তু মালাহা ঢুকেই মনে হলো বাহির হতে যা দেখেছি তা ঠিক নয়। প্রতিটি বাড়িতেই গাছ আছে, মিসমিস, ফিরকিস আর ত্বিন (সৌদি ফল) ধরে আছে।
কাকা’র বাসাটি ১ রুমের, পাহাড়ের এক কোনে। বাহিরে গরম থাকলেও, বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি ঘরের ভেতর তেমন গরম ছিল না। জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস বইছিল। এধরনের বাতাসে আমার চোখ বুজে আসে, কোনমতে আটকে রাখলাম।
কাকা’র বাসা
কাকা’র কফিলের বয়স প্রায় ১১০ বছর।
কয়েকদিন আগে সিরিয়া হতে বাচ্চা একটা মেয়ে বিয়ে করে এনেছেন। এটা তার ৩য় বিয়ে। কফিল নাকি চেয়েছিল বাংলাদেশি মেয়ে বিয়ে করবে, কিন্তু অনুমতি পায়নি। বাংলাদেশি মেয়েরা নাকি ভালো !! কাকা কফিলকেও দাওয়াত করেছিলেন, যখন শুনলেন আমরা কয়েকজন ছেলে, মেয়ে বেড়াতে আসছি- লজ্জায় আর আসেননি। কফিলের নিজস্ব মসজিদ, দুম্বা’র খামার আর বিস্তৃত ফল বাগান আছে।
আরো কয়েকজন বাংলাদেশি নাকি ছিল, সবাই পালিয়ে চলে গেছে, শুধু কাকা থেকে গেছেন। সবকিছু এখন কাকাই দেখে রাখেন।
গ্রামের বড় মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়লাম। আসর পড়লাম কফিলের মসজিদে। সবকিছু কেমন যেন ছিমছাম, নীরব।
আমরা যাওয়ার পর কাকা রান্না বসালেন। পোলাও আর দুম্বা’র মাংস। খেতে বসে আমার আর মিলনের নাক ও চোখের পানি এক হয়ে গেল। মারাত্নক ঝাল কিন্তু সুস্বাদু। ঝাল লাগছে কিন্তু জিভ বলছে আরো খাই, আরো খাই।
মেয়েরা দেখলাম ঝালে তেমন কাবু হলোনা। বিকেলে মিসমিস ভর্তা আর তরমুজ খেলাম। সৌদিতে যে কত ভালো তরমুজ হয় তা মক্কা যাবার পথে দেখেছিলাম (অন্য আরেকটি পর্বে মক্কা/মদীনা নিয়ে লিখবো)।
মিসমিস
সূর্য একটু হেলে পড়লে কাকাকে নিয়ে বের হলাম ফলের বাগান দেখতে। চোখে বিষ্ময়।
আমরা সবাই চিৎকার করছিলাম, এতোসবকিছু সৌদি আরবে দেখবো কখনো ভাবিনি। থোকা থোকা আঙ্গুর ঝুলে আছে, এই প্রথম আপেল গাছ দেখলাম, মিসমিস, ফিরকিস, আনার আর বিখ্যাত ত্বীন। ক্বোরান শরীফে আল্লাহ ত্বীন ও জয়তুনের শপথ নিয়েছেন। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। সব গাছেই ফল মাত্র ধরতে শুরু করেছে, ২/১ মাসের মাঝেই পাড়ার সময় হবে।
আফসোস, তখন দেশে থাকবো।
আঙ্গুর গাছ
আনার গাছ
ফিরকিস (Apricot নামেই সবাই মনে হয় চেনে)
আপেল গাছ
আলু বোখারা
ত্বীন গাছ
দুম্বা চড়ছে
তুর্কি আমলের ওয়াচ টাওয়ার
ঘুরে দেখছি
সন্ধ্যায় ফেরার পথে কাকা তার কফিলের ভাইয়ের বাসায় নিয়ে গেলেন। আরো বিষ্ময় অপেক্ষা করছিল। ওখানে একটা মিনি চিড়িয়াখানা দেখলাম। ময়ূর, ঘুঘু, আরো বিভিন্ন রকমের পাখি, হরিণ।
গোলাপের একটা বাগানও ছিল। একটি রুচিশীল পরিবারের দেখা পেলাম।
নাম জানিনা ( টার্কী ... ১০ নং কমেন্ট দ্রষ্টব্য)
ময়ূর
ঘুঘু
সাদা তিতির
নাম জানিনা (সবসময় আড়ালে থাকে) ... ( মিউজিক বার্ড ... ১০ নং কমেন্ট দ্রষ্টব্য)
হরিণ
গোলাপ বাগান
বাসায় ফিরে ল্যাপটপে ছবিগুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম -এটা কি সৌদি আরব? এতো রূপের কথাতো আগে জানিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।