বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরীর একটি মন্তব্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের চেয়ে বেশি নৃশংসতা চালিয়েছে রাজাকাররা। তার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, শিল্পী হাশেম খান। শুধু তা-ই নয়। তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি করেছেন ত্রিপুরার মহারানী বিভু দেবী পর্যন্ত।
কিন্তু শঙ্কর রায় চৌধুরী তার বক্তব্যে অটল। তিনি বলেছেন, আমি যা বলেছি সত্য বলেছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। এ বিষয়ে আমার কাছে রেকর্ড আছে। গতকাল অনলাইন দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে।
এতে বলা হয়, আইসিসিআর-এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘ফোর ডিকেডস অব মুক্ত বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্দো-বাংলা রিলেশনশিপ’ শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠান হয় গত ১৮ই ডিসেম্বর। এতে সমাপনী ভাষণে জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী ওই মন্তব্য করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যে নৃশংসতা ঘটিয়েছে তার ওপর ‘সেই সব পাকিস্তানি’ নামে বই লিখেছেন মুনতাসীর মামুন। তিনি ভারতীয় সাবেক সেনাপ্রধানের ওই ভাষণের তীব্র বিরোধিতা করেন। মুনতাসীর মামুন বলেন- তার এ যুক্তি অবিশ্বাস্য।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন- তাহলে কি আপনি বোঝাতে চাইছেন পাকিস্তানি সেনারা আমাদের ওপর নির্যাতন করেনি? আমি আপনার এ বক্তব্যকে সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তার বক্তব্যের সঙ্গে যোগ দেন শিল্পী হাশেম খান। তিনি ভারতীয় সাবেক সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা কি নির্যাতন, অত্যাচার করেছে তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। পরে ঢাকা থেকে মুনতাসীর মামুন বলেন, জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী যা বলেছেন আসলে তা বাস্তব নয়। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে যারা নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের স্মৃতিতে সেই ক্ষত থকথকে ঘায়ের মতো জীবিত হয়ে আছে।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে যুদ্ধবন্দিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে? কিন্তু শঙ্কর রায় চৌধুরী তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, আমি যা বলেছি তা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। আমি যা বলেছি তা খাঁটি সত্য। এর পিছনে রেকর্ড আছে। শঙ্কর রায় চৌধুরী আরও বলেছেন, তাকে মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ও নবম সাব সেক্টরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
ফলে তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তার সেই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ভিতরে বাঙালিদের সবচেয়ে জঘন্য শত্রু ছিল রাজাকাররা, যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সমর্থক ছিল। তার ভাষায়- বাংলাদেশের বাঙালিরা ছিল বাঙালিদের প্রধান শত্রু। তিনি আরও বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাদের জানাশোনা ছিল সীমিত। তাই তারা বিপুল সংখ্যক রাজাকার নিয়োগ করেছিল।
ওই সব রাজাকার ব্যাপক আকারে নৃশংসতা চালিয়েছিল। শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেন, আমার মতে পাকিস্তানি সেনাদের চেয়ে তাদের এই নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। আমি নিজ চোখে ওইসব দৃশ্য দেখেছি। বাংলাদেশী মানুষের কাছ থেকেও এসব নিয়ে অভিযোগ এসেছে। তিনি বলেন, ওপার বাংলায় যখন মৌলবাদের উত্থান ঘটছে শুনি তখন আশঙ্কিত হই।
এখন আমরা এটাকে মৌলবাদ বলি। কিন্তু ১৯৭১ সাল থেকেই এ ঘটনা বাংলাদেশে চলছে। রাজাকাররা ছিল মৌলবাদী এবং তারাই নির্যাতন চালিয়েছে। এখনও টিকে আছে এই মৌলবাদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ভারত সরকারকে সহযোগিতা করছে, যা শুরুর দিকে ছিল না।
শঙ্কর রায় চৌধুরী আশা করেন, শিগগিরই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হবে। ওদিকে ত্রিপুরার মহারানী বিভু দেবী ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শঙ্কর রায় চৌধুরীর ভাষণ শেষ হওয়ার পর তিনি ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন তাকে।
সূত্রঃ এখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।