আমি আজীবন লিখতে চাই ইনশা আল্লাহ্ । তাকদীরের রহস্য সাধারনতঃ দূর্বোধ্য, তাই এ বিষয়ে জানার কৌতুহল অনেকেরই থাকতে পারে । আমি এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করছি । যা কিছু আল্লাহ্ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত তাহাই তাকদীর । তাই আল্লাহ্ পাকের সমগ্র সৃষ্টিই তাকদীরের বিধান অনুযায়ী হয়েছে ।
এই তাকদীরের বিধান আল্লাহ্ পাকের জারীকৃত দুইটি সুস্পষ্ট বিধান দ্বারা সীমিত । তার একটি হল আল্লাহ্ পাকের এখতিয়ারাধীন সৃষ্টিগত আইন যাকে ইসলামের পরিভাষায় তাকবিনী আইন বলে । তাকবিনী বলিতে সৃষ্টিগত কাজের ধারাবাহিক নিয়ম কানুনকে বুঝায় । যেমন "কুন" বলার সঙ্গে সঙ্গে "ফাইয়াকুন" হয়েছে । অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হইয়াছে এবং সৃষ্টির পর তাহা নিখুঁতভাবে কেয়ামত পর্যন্ত চলিতে থাকিবে ।
অপরটি হল মানুষের এখতিয়ারাধীন বাস্তব জীবন যাপনের জন্য কাজ যাকে ইসলামের পরিভাষায় তাশরিয়া আইন বলে । এইটি মানুষের ইচ্ছার স্বাতন্ত্র্য ও কর্মের স্বাধীনতার মধ্যে সীমিত । তাকদীরের বিধান অনুযায়ী তাশরিয়া কাজটি করিলে এই ফল দাঁড়াইবে, আর না করিলে এই ফল দাঁড়াইবে এইরূপ । এক্ষেত্রে যে বিজ্ঞোচিত ব্যবস্থায় কাজটি করা আর না করার ফলাফল ঝুলন্ত বা অচূড়ান্ত অবস্থায় তাকদীরে লিপিবদ্ধ থাকে সেই ব্যবস্থাকে তাকদীরে মুয়াল্লাক বলে ।
আবার তাকদীরে মুয়াল্লাকে রক্ষিত কাজটির ফলাফল আদৌ ঘটিবে কি ঘটিবেনা তাহা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া পূর্ব হইতে কেউই জানেননা ।
এমনকি ফেরেশতারাও তাহা জানেননা । এই চূড়ান্ত ব্যবস্থাকে তাকদীরে মুবরাম বলে । তবে তাকদীর আল্লাহ্ কর্তৃক একবার মুবরাম বা চূড়ান্ত হলে তাহা কখনও রদবদল হয়না । তাকদীরে মুয়াল্লাক এবং তাকদীরে মুবরাম উভয়ের মধ্যকার সময়ের পরিসরটিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কতিপয় ভাগ্য বিপর্যয় উত্তরণের সুযোগ রহিয়াছে । আর কতিপয় ভাগ্য বিপর্যয় যাহা আল্লাহ্ কর্তৃক মুবরাম বা চূড়ান্ত তাহার উত্তরণ সম্ভব নয় ।
যে কারনে দেখাযায়, মানুষ চেষ্টার দ্বারা অনেক সময় সফল হয়, আবার কখনো আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় । যেহেতু সৃষ্টিজগতের কেউই তাকদীরে মুবরাম সম্পর্কে জানিনা সেহেতু সকল ব্যাপারে সচেষ্ট থাকাই উচিত । চরম চেষ্টা সাধনা নামে অভিহিত তদবীরই একমাত্র প্রক্রিয়া যাহা ভাগ্য বিড়ম্বিতকে সৌভাগ্যে উত্তরণ ঘটাইতে সক্ষম ।
এ সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁহার এক হাদীসে বলেছেন, "তদবীরই তাকদীরের নিয়ামক । " অন্যত্র বলেছেন, "চেষ্টা সাধনা কখনও বৃথা যায়না ।
" পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক ঘোষনা করেন, "আল্লাহ্ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না সেই জাতি নিজেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে । " পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক আরও বলেন, "মানুষ যাহা চেষ্টা করে তাহার অতিরিক্ত কিছুই তাহার প্রাপ্য নয় । "
উপরোল্লিখিত আলোচনার আলোকে বলাযায়, বস্তুতঃ কর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য । এ কথা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য । সাবধানতা, ধৈর্য্য, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা, কর্মস্পৃহা, প্রচেষ্টা, সাহায্য গ্রহন, চিকিৎসা ইত্যাদিও তদবীরের সমার্থক যা তাকদীরে মুয়াল্লাকের বিষয় ।
এক্ষেত্রে দেখাযাচ্ছে ব্যক্তিই তার ভাগ্যের তথা তাকদীরে মুয়াল্লাকের নিয়ন্ত্রক থাকছেন । অনিবার্য নিয়তী বা তাকদীরে মুবরাম যাহাই থাক । আর সেজন্যই মানুষ সবসময় তার ভাগ্যকে সৌভাগ্যে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টাই করে যায়, ইহাই মানুষের ইতিহাস । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।