আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সমকামী অভিজ্ঞতা

ভার্চুয়াল যুদ্ধ আজ আমি যে পোস্টটি লিখতে বসেছি তার আগে অনেকবার আমাকে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। আমি কি লিখব? লিখে কি কোন লাভ আছে? সমকামীতা নিয়ে এই ব্লগে এবং আরো অনেক ব্লগে অনেক পোস্ট আছে। সেগুলোতে সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখেছি সেটা অনেকটা এরকম - ১। সমকামীরা মানুষ না, অন্য কোন প্রজাতি ২। তাদেরকে সমাজচ্যুত করা উচিত ৩।

তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া উচিত ৪। সমকামীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে লাইনে নিয়ে আসা উচিত প্রথম তিনটা পয়েন্ট নিয়ে আমি কোন আলোচনায় যাবো না, আমার পোস্টের মূল কেন্দ্র হচ্ছে চার নম্বরটি। চার নম্বর ধারনা যারা পোষন করেন তারাই এই সমাজে সমকামীদের ব্যাপারে সবচেয়ে উদার অংশ। তারা মনে করেন মানুষ সমকামী হতেই পারে, এটা আর দশটা মানসিক রোগের মতই চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় কিংবা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এবারে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

আমার বয়স এখন ২৮, জীবনের প্রথম ২২ বছর আমি আমার সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া সত্যেও চেষ্টা করেছি মেয়েদের সাথে সম্পর্কে যাওয়ার। এবং কিছু সম্পর্ক হয়েছেও, যদিও তার একটিও টেকেনি সঙ্গত কারণেই। আমি নিজেকে বলেছি, এর সাথে আমার ভালো মেলে না, তাই হয় নি; কিন্তু সময় গেলে আমি আমার পছন্দের একটি মেয়ে খুঁজে পাবোই। আমার বাইশতম জন্মদিনে আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি আর মেয়েদের সাথে সম্পর্কে যাওয়ার চেষ্টা করব না, কারণ এতে শুধু শুধু কিছু মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমার যা দুঃখ সেটা আমার একারই বহন করতে হবে।

সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ আমি সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়েছি। নিজেকে বলেছি, অনুভুতিগুলো চাপা দিতে থাকলে নিশ্চয়ই এক সময় পুরোপুরি চাপা পড়ে যাবে। মাঝে মাঝে খুবই খারাপ লাগত, আত্মহত্যার ইচ্ছেও জাগত। কিন্তু কখনো সাহস করে উঠতে পারি নি। আমি জানতাম নিজেকে সমকামী হিসেবে প্রকাশ করার পরিণতি কি হবে, তাই কাউকেই বলি নি।

মাঝে মাঝে ইয়াহু মেসেঞ্জারে চ্যাটরুমে বসে থাকতাম। ওখানে এই শহরেরই অনেকে আমাকে হিট করত, আমি টপ নাকি বটম জিজ্ঞেস করত। শুধু শারীরিক চাহিদা মেটানো এখানে খুব কঠিন কিছু না, কিন্তু আমি এটাও বুঝতে পেরেছিলাম অপরিচিত কারো সাথে সেক্স করা আমার একাকীত্ব দূর করবে না। আমি ধীরে ধীরে একা হতে থাকলাম। আমার একমাত্র ভরসা ছিল বিদেশীরা।

আমি ইয়াহুর অ্যাডাল্ট রুম কিংবা বিভিন্ন ক্যামিং সাইটে গিয়ে অজস্র অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতাম। তারা আমাকে পছন্দ করত, কিন্তু লোকেশন জানার পরই নিজেকে গুটিয়ে নিত। বলত যদি কখনো তোমার দেশে আসি তাহলে অবশ্যই তোমার সাথে দেখা হবে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বাইরে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সম্ভব হয় নি।

একটা বিদেশী কোম্পানিতে কপালগুণে চাকরি হয় (কোন মামার জোর আমার নেই, রেজাল্টও ভালো না, তারপরেও চাকরিটা হয়েছে)। নিজেকে এর পরে ডুবিয়ে দিলাম কাজে। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠেছে অনেকবারই, কায়দা করে এড়িয়ে যেতে যেতে আমি ক্লান্ত। বাংলাদেশে প্রচুর সমকামী আছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ইয়াহুর বাংলাদেশ রুমে একটা গে আইডি নিয়ে বসে থাকুন।

১০-১৫ মিনিট পর পরই আপনাকে কেউ না কেউ হিট করবে। তুলনামূলক সামর্থবানদের একটা ক্লাবও আছে ঢাকায়। সেখানে পার্টিও হয় মাঝে মাঝে। আমি এসব অনুষ্ঠানে কখনো যাই নি। খুবই কাছের দুইজন বন্ধুকে শুধু বলেছি, তারাও এই পোস্টের শুরুতে উল্লেখিত চার নম্বর দলে ছিল।

অনেক বোঝানোর পরে, অনেক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের পরে তারা বিশ্বাস করেছে যে আমি আমার এই জীবনধারা ইচ্ছে করে বেছে নেই নি। বাংলাদেশের বয়স্ক সমকামীদের জীবন দেখে আমার করুণা হয়। তারা বিয়ে করেছে, তাদের বাচ্চাকাচ্চাও আছে। তারা তাদের অফিসের কিংবা বাসার অবসরটুকু কাজে লাগায় পার্টনার হান্টে। কেউ যদি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে তারা কোন হোটেলে এক ঘণ্টার জন্য রুম ভাড়া করে, সেক্স করে, তারপর যে যার পথে চলে যায়।

তাদের অসহায়ত্ব দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি আমার পুরো জীবনও একা থাকতে হয় তবে তাই সই। কিন্তু এভাবে প্রহসনের মাধ্যমে আমি কিছু মানুষের জীবন ধ্বংস করবো না। আপনারা হয়তো বলবেন, কেন ঐ লোকটি কি তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে আছে না? উত্তরটা আমি জানি, নেই। মিথ্যের উপরে দাঁড়ানো সম্পর্ক যত ভালোই দেখাক না কেন এক সময় তা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়বেই। সবশেষে আপনারা যারা ধৈর্য নিয়ে আমার এই পোস্ট পড়েছে তাদের জন্য একটা ভিডিও।

পুনশ্চ: কারো কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে করতে পারেন। আমি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব পুনশ্চ ২: ফেসবুকে পাওয়া দুটো কমেন্ট এখানে যোগ করলাম। এই কমেন্টকারী চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেছেন। একসময় সনাতনী প্রথা অনুযায়ী সমকামিতা কে মানসিক ব্যাধি বলা হতো, এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও পড়ানো হতো সমকামিতা একটি মানসিক রোগ । ফরেনসিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এ SEXUAL PERVERTION অধ্যায় এ হস্ত মৈথুন কেও PERVERSION বলা হতো ।

সে অনুযায়ী পৃথিবীর বলতে গেলে অধিকাংশ পুরুষই মানসিক ব্যাধি তে আক্রান্ত । কিন্তু এখন মডার্ন PSYCHIATRY , MEDICINE , PSYCHOLOGY তে সমকামিতা কোণো মানসিক ব্যাধি না। মানসিক ব্যাধির সংজ্ঞায় আছে " A mental illness is something that disrupts a persons ability to reason and perform everyday activities ." যেমন সিজোফ্রেনিয়া , মুড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি । এসব অসুখে আক্রান্ত মানুষ স্বাভাবিক কাজ কর্ম সঠিকভাবে করতেপারে না । আবার সমকামিতা necrophilia ( যারা মৃতদের সাথে sex করে মানসিক শান্তি পায় ) নয়।

সমকামী মানুষ কিন্তু সমাজের বাকি ১০ তা মানুষের মতই স্বাভাবিক। একজন স্বাভাবিক ( heterosexual ) মানুষ এর মত সমকামি মানুষও অফিস করছে, গাড়ী চালাচ্ছে, সেনাবাহিনীতে যাচ্ছে, চিকিৎসক -প্রকৌশলী -শিক্ষক -বিজ্ঞানী হচ্ছে , গান শুনছে , সিনেমা দেখছে, কেউ মারা গেলে দুঃখ পাচ্ছে, অর্থাৎ আনন্দ, অনুভুতি, সুখ, দুঃখ, বেদনা সব ব্যাপারগুলোই তার মাঝে আছে। তাই এটা কোন মানসিক ব্যাধি না, এটা বলতে গেলে পৃথিবীতে যেমন ডান হাতি মানুষ আছে তেমনি বাম হাতি মানুষও আছে। আপনি ত বাম হাতি মানুশদের পাপি বা মানসিক রোগ এ আক্রান্ত বলেন না । ধর্মীয় আর সামাজিক বেড়াজাল আর সনাতনী পন্থা তাদের পাপী কিংবা মানসিক ব্যাধি গ্রস্ত বানিয়েছে ।

বাইবেল, কোরআন এবং তৌরাত এ উল্লেখ আছে সৃষ্টিকর্তা সমকামিতা নামক জঘন্য পাপ এর কারণে সদম এবং গোমরা শহর এবং তাদের অধিবাসীদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল । ধর্মগ্রন্থে জঘন্য পাপ উল্লেখ এর কারনে সমাজ এবং মানুষে মাঝে ধিরে ধিরে এই এই বিষময় মতবাদ প্রতিশ্তিত হয়ে গেছে যে সমকামিতা অপ্রাকিতিক, পাপাচার এবং ঘৃণার বস্তু । তাই সমকামিদের স্বাভাবিক মানুষের দৃষ্টিতে থেকে দেখা্ হয় না । অবশ্যই সমকামিতা কোন সুবিধা বা advantage না। কিন্তু এটা কোন ব্যাধি কিংবা পাপ ও নয় এটা একধরনের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা ভেরিএসন যা তাদের মাঝে তৈরি হয়ে যায় ।

জতদুর জানি মাইকেল অ্যাঞ্জেলো , দা ভিঞ্চি , plato , এলটন জন এরা সমকামি ছিল । এরা সমাজের কি ক্ষতি করেছে? না পৃথিবীকে স্বাভাবিক মানুষদের মতই অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে ? সমকামীদের মাঝে AIDS কিম্বা STD (Sexual transmitted disease ) হবার সম্ভাবনা বেশী । কিন্তু অবাধ মেলামেশা কিংবা যৌনাচার করলে সেটা বিষমকামীদের মাঝেও হতে পারে । সমকামীরা যদি তাদের মেলামেশা তার সঙ্গীর সাথে শুধুমাত্র করে , কিম্বা এ বাপার এ সচেতন থাকে তবে কিন্তু তার STD হবার সম্ভাবনা নেই । এ ব্যাপার এ contraceptive method , নেশা গ্রহণকারীদের ইনজেকশন এর অপব্যবহার রোধ , এবং সর্বোপরি সামাজিক সচেতনটা এবং নৈতিকতাবোধ বাপারগুলা থাকলে অনেকখানি সহজ হয়ে যায় ।

আর এ ব্যাপারগুলো বা সচেতনতা সমকামি বা বিষম কামি উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য । শুধু সমকামীদের দোষ দিচ্ছেন কেন? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।