"রূপ নিয়া তোর অনেক বড়াই, তোর রূপের বড়াই দেখাই দিলাম শেষ কইরা। এবার আসমানে লটকায়া থাকবি তুই'। এ কথা বলেই ফল কাটার ছুরি দিয়ে আমার কপালে পোচ দেয় আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নারায়ণগঞ্জের সহকারী জজ আফরোজা চৌধুরী। " কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তেজকুনীপাড়ার ১৪৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি প্রয়াত আবদুর রহমান বিশ্বাসের মেয়ে।
জান্নাতুল আরো বলেন, "আফরোজার সঙ্গে আসা ডিবি অফিসার পরিচয়দানকারী ফরিদ আমাকে বলেন, 'বারান্দা দিয়া উইঠ্যা তোকে রেপ করুম। ডান্ডা দিয়া পিটাইয়া তোরে পাগলাগারদে ভরুম। তখন তুই কী করবি দেখুম'। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় প্রথমে জিডি ও পরে মামলা করেছি। "
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'আমার কাবিন হলেও সংসার শুরু করার আগেই ভাই ফয়সাল আমার সব শেষ করে দিয়েছে।
আমার স্বামীকে বলেছে, ওর সঙ্গে থাকতে পারবা না। ও পাগল, ওকে কোনো কিছু দিব না। অনুষ্ঠানও করব না। '
জান্নাতুল ফেরদৌস অভিযোগ করেন, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করে ছোট ভাই ফয়সাল একা ভোগ করার উদ্দেশ্যে গত ১১ নভেম্বর রাতে বাসার দরজা ভেঙে তাঁর ওপর হামলা চালায়। ফয়সাল ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তাঁর হাঁটুতে আঘাত করে।
ওই সম্পত্তির মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
জান্নাতুল বলেন, 'এত বড় বাড়িতে ছোট্ট একটি স্যাঁতসেঁতে কক্ষে আমাকে থাকার জায়গা দিয়েছে। এর বাথরুম ও রান্নাঘরে পাশ ফেরা যায় না। অথচ কেবল পরিবারের স্ট্যাটাসের কথা চিন্তা করে এত দিন চুপ করে ছিলাম। কিন্তু শারীরিক হামলার পর আর চুপ থাকতে পারলাম না।
মামলা করতে বাধ্য হলাম। যদিও পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। তারা বলে, থানায় মামলা নিলে ম্যাডাম (সহকারী জজ) তাদের চাকরিছাড়া করবে। তখন আমাদের এক আত্মীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দিয়ে ফোন করানোর পর পুলিশ মামলা নেয়। '
জান্নাতুল বলেন, 'মামলা করার পর আমি বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢুকতে পারছি না।
প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হুমকি নিয়ে এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার ছোট ভাই ফয়সাল যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ সে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করেছিল। সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। তর্ক করার অভিযোগে আরেক কাজের মেয়ে লতিফের মায়ের মাথা ফাটিয়ে দেয় ফয়সাল।
ওই কাজের মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অপরাধে আমার ওপর চলে সীমাহীন নির্যাতন। '
জান্নাতুল বলেন, 'আমার মা আমাকে ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য রাজিও হয়েছিলেন। ভাড়াটিয়াকে নোটিশও দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার ভাই এবং ভাইয়ের বউয়ের জন্য পারেননি। আমাকে কোনো কিছু দিতে গেলেই ওরা বাধা দেয়।
এমনকি আমার মাকে উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। '
এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা মাসুদা খাতুন লাভলি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার বউয়ের মতো ভালো মেয়ে একটিও নেই। সে আমার জন্য রঙ বুটিক থেকে দুই হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনে আনে। বছরে এক ডজন পেটিকোট-ব্লাউজ কিনে দেয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে মোবাইল কোট নিয়ে বের হলে ওরা মণ মণ কেক, মজার মজার দই বৌকে ফ্রি দেয়।
বউ এসব এনে বলে, মা খান। আমার সম্পত্তি আমি কাউকে দেব না। আমার সম্পত্তির ভাগ চাইলে খুন করে ফেলব। '
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুনু আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তা হবে না।
ওর (জান্নাতুল) মাকে কন্ট্রোল করা যাবে না। কিছুদিন আগে ওই বাড়িতে কাজের মেয়েকে ছাদ থেকে ফেলে মেরে ফেলেছিল। এটা পত্রিকায় এসেছিল। '
একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ফয়সালের কারণে মাজেদা নামে তাদেরই বাড়ির এক কাজের মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল। তাকে মেরে ফেলার পর বিচার হয়নি বলেই এই সাহস দেখাচ্ছে।
ছেলে সেফ করতেছে মাকে, মা সেফ করতেছে ছেলেকে। তদন্ত হলে আরো অনেক কিছু বেরোবে। তার ওপর বউ জজ_এই দাপটও আছে। মেয়েটার সম্পত্তির অংশ ওকে না দিয়ে কুক্ষিগত করতে চাইছে। তার (জান্নাতুলের) ওপর অত্যাচার জঘন্য পর্যায়ে চলে গেছে।
যেকোনো মুহূর্তে তাকে মেরে ফেলতে পারে ওরা। '
অভিযোগ অস্বীকার সহকারী জজের : এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাইয়ের বউ সহকারী জজ আফরোজা চৌধুরীর দৃষ্টি করা হলে আকর্ষণ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। আফরোজা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই লেভেলে থেকে আমার এমন কাজ করা যৌক্তিকতার মধ্যে পড়ে না। যারা ওই বিল্ডিংয়ে থাকে, তাদের জিজ্ঞেস করুন। তার (জান্নাতুল) কোনো টপিকের মধ্যেই আমি নেই।
ওই বাড়িতে অনেক ঘটনা ঘটেছে, আমি এসবের কোনো কিছুতেই নেই। হয়রানির উদ্দেশ্যে আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছে। আমি যদি বিন্দুমাত্র দোষ করতাম, তাহলে গিল্টি বোধ করতাম। আমি সেই ধরনের পরিবার থেকে আসিনি। '
জান্নাতুলের ছোট ভাই নুরুদ্দিন ফয়সালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন, আলমগীর হোসেন, বিলকিস, কুলসুম বলেন, ওই পরিবারে ঝামেলা বেশি। ঘটনার দিন অনেক 'চিল্লাচিলি্ল' তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু গেটে তালা লাগানো থাকায় ভেতরে গিয়ে আসল ঘটনা দেখতে পারেননি।
জানা যায়, প্রয়াত আবদুর রহমান বিশ্বাস ও মাসুদা খাতুন লাভলির বড় ছেলে মিজানুর রহমান বিশ্বাস নিউ ইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মেজ ছেলে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস রাশিয়ার সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, সেজ ছেলে নুরুদ্দিন ফয়সাল ঠিকাদার এবং ছোট ছেলে মেহফুজুর রহমান বিশ্বাস একজন স্থপতি। একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।
অন্যরা ভালো অবস্থানে থাকলেও নুরুদ্দিন ফয়সালের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী ধর্ষণ ও খুন এবং যুবকের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের অন্যরা দেশের বাইরে থাকার সুযোগে ফয়সাল বাড়ি ভাড়ার আয়সহ অন্যান্য সম্পত্তি একা ভোগ করে যাচ্ছে। জান্নাতুল তাঁর অংশ চাইলে সে জান্নাতুলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এমনকি মারধর করে। জান্নাতুল এখন মৃত্যুভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চান।
------------কালের কণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।