আমি অনেক ছোট একটা মানুষ। ছাত্ররা নাকি জাতির ভবিষ্যৎ। তারাই জাতির কর্নধার। তাদের দিকে চেয়ে আছে সারা দেশ, তারা একদিন দেশের হাল ধরবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নতির পথে। সব ভুল।
এ দেশ এমন এক দেশ, যেখানে উপরের কথাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। এ দেশে ছাত্র হচ্ছে এমন এক প্রাণীর নাম, যাদের জীবনের কানাকড়িও মূল্য নেই। সামান্য কারণে তাদের জীবন দিতে হয় গাড়ির নিচে, দুর্ঘটনায়, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা বখাটেদের হাতে। বাবা মা অনেক আশা নিয়ে তাদের সন্তান কে পাঠান বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, একদিন তাদের সন্তান অনেক বড় হবে এই ভেবে। আর সেই সন্তানেরা ঘরে ফেরে লাশ হয়ে।
কারন কি? খুবই সামান্য। তারা চোখের সামনে ঘটতে দেখা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল।
পেপার পত্রিকা পড়া হয় না অনেক দিন, টিভি ও দেখি না। দেখতে ইচ্ছে করে না। আজ সন্ধায় যখন ফেসবুকে ঢুকলাম, একটা পেজের স্ট্যাটাস দেখে চমকে উঠলাম।
“শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। “ আমার একটা বন্ধু সেখানে পড়ে। বুকটা কেঁপে উঠল, তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম ওর কাছে। বিস্তারিত সুনলাম ওর কাছেই।
পাঁচজন ছেলে ও তিনজন মেয়ে, গিয়েছিল ক্যাম্পাস থেকে এক কি দুই কিলোমিটার দূরে সুরমা ব্রিজ নামে একটা জায়গায় ঘুরতে।
সেখান থেকে ফেরার পজায়। ডাকাত ছদ্মবেশে তাদের উপরে চড়াও হয়। তাদের টাকা পয়সা ও অন্যান্য মুল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়া হয়, একপর্যায়ে বখাটেরা তাদের সাথে থাকা মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করার চেস্টা করে। বাকিরা প্রতিবাদ করলে বখাটেরা ক্ষিপ্ত হয়ে তিনজনকে অপহরন করে নিয়ে যায়। পরে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয় সুরমা নদী থেকে।
আমার বন্ধুকে যখন আমি ফোন দেই, ও বলল সারাদিন ওরা আজ বিক্ষোভ করেছে, অংশ নিয়েছে প্রতিবাদ মিছিলে। কিন্তু কি লাভ এতে? যে দুইজন প্রান হারাল, তারা কি আর ফিরে আসবে তাদের পরিচিত ক্যাম্পাসে? তাদের বাবা মা কি কোনদিন ভুলতে পারবে সন্তান হারানর বেদনা?
একটা সময় অবাক হতাম, এ কোন দেশে বাস করছি আমরা? এ কেমন অস্থির সময় যাচ্ছে আমাদের উপর দিয়ে? এখন আর অবাক হই না। আমার নিজের দুই সহপাঠি বন্ধু কে হারিয়েছি সড়ক দুর্ঘটনায়। মনটা অনেক শক্ত হয়ে যাচ্ছে, মেনে নিচ্ছি নিজের নিয়তিকে। বুঝে গেছি, একমাত্র বাংলাদেশ বলেই এটা সম্ভব।
এ দেশের নিয়ম সব উলটে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।