আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌনতাকে পুঁজি করে কী হতে চান তারা ?

বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... সম্প্রতি সোশাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে বসলেই নানা সংবাদ, লেখা কিংবা ভিডিও লিংক পাই। কিছু মানুষ এসব লিংক শেয়ার করে পাঠক বাড়ানোর জন্য। তবে সম্প্রতি তানিয়া হোসেন নামে এক নারীর লিংক পাচ্ছি বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে। নি নিজেও মাঝে-মধ্যে এসব লিংক শেয়ার করেন। কৌতুহলের বিষয় হচ্ছে তথাকথিত এই লেখিকার লেখার ঢং, শিরোনাম আর তসলিমা নাসরিনের মতো যৌন উদ্দীপক বিষয়গুলো নিয়ে কালচার করা।

উৎসাহ নিয়ে তার কয়েকটি লেখা পড়ে নিশ্চিত হলাম, যৌন চুলকানিমূলক লেখায় তার আগ্রহ বেশি। তার কয়েকটি লেখা এবং ফেসবুকে একাধিক অর্ধখোলা পোষাকে উদোম বক্ষ প্রদর্শনরত তার ছবি পোষ্ট দেখে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আসলে কী হতে চান তানিয়া হোসেন। তার জন্যই বা যৌনতাকে কেনো পুঁজি করছেন। সম্প্রতি তার বিদেশ সফর নিয়ে সিরিজ লিখেছেন, যার প্রতিটিতেই রয়েছে যৌনাচারের বিষয়। প্রথম লেখার শিরোনাম ছিল ‘যোনি কি অক্ষত’।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আর ইউ আ ভার্জিন?’ এ প্রশ্নের সম্মুখীন দেশ-বিদেশে অবিবাহিত আমাকে বহুবার হতে হয়েছে। শুদ্ধ বাংলায় যদি এ প্রশ্নের অনুবাদ করা হয় তবে তা দাঁড়ায় ‘আপনার যোনি কি অক্ষত?’ ‘ভার্জিন’ অথবা ‘অক্ষত যোনি’–এই শব্দের গুরুত্ব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো বিদ্যমান। বাংলাদেশসহ অসংখ্য মুসলিম বিশ্বে এ শব্দের গুরুত্ব অন্যান্য দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃতভাবে একটু বেশি। মুসলিম বিশ্ব ব্যতীত অন্যান্য বিশ্বের পুরুষেরা মৌখিকভাবে যদিও বলে থাকেন যে তাদের কাছে এ শব্দের গুরুত্ব তেমন নেই তবে মনের ভেতর অনেকেই ভিন্নমত প্রদর্শন করে থাকেন। আবার উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের মাঝেও রয়েছে এ শব্দের গুরুত্বের ব্যবধান।

যদিও পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষরা ‘অক্ষত যোনি’ বা ভার্জিন নারী খোঁজেন আবার তারাই অন্যের ‘অক্ষত যোনি’কে যে কোনো মুহূর্তে ক্ষত করতে সদা প্রস্তুত থাকেন। কোনো কিছুকে একবার ক্ষত করে আবার কীভাবে তাকে অক্ষতভাবে পাওয়ার আশা করা যায় এটা আমার চিন্তায় আনতে বেশ কষ্ট হয়। পরের লেখার শিরোনাম ছিল, ‘ভালোবাসা না দেহের প্রতি আসক্তি? ছেলেদের ঠিক বুঝি না’। এখানে তিনি লিখেছেন, ব্লু মস্কে প্রবেশপথে একজনকে ছবি তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে ভদ্রলোক আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন। বললেন, যে উনি একজন চিত্রকর।

পথে বসে ছবি আঁকেন। সেদিন ছবি আঁকার সরঞ্জাম কাছে ছিল না বলে আমার ছবি আঁকতে পারেননি, তবে আমাকে চা খাওয়ান। তুরস্কের চা সাধারণত ছোট ছোট কাচের গ্লাসে দেওয়া হয় এবং খুবই সুস্বাদু। এক কাপ চায়ের মূল্য দুই লিরা। এরপর আমার সাথে ভদ্রলোকের অনেক কথোপকথন হয়।

তার শেষের অংশ খানিকটা এমন– -তুমি কি একা ঘুরতে এসেছ? -জি -আমি কি তোমার সাথে আসতে পারি? তোমাকে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাব। -অবশ্যই। এতে আমার উপকার হবে। [একটু বিরতির পর] -তুমি কি বিবাহিত? -না - তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে? - আছে এবং ইনশাল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছি। একথা শুনে ভদ্রলোকের বাতি কেমন জানি ধপ করে নিভে গেল।

কুপি যেমন একটু বাতাস পেলে ধপ করে নিভে যায় ঠিক তেমন করে ওনার বাতিও নিভে গেল। আমি কারনটা ঠিক ধরতে পারলাম না। চা শেষে বললাম চলুন যাই। ভদ্রলোকের আচরন কেমন যেন বিচিত্রভাবে পাল্টে গেল এবং বললেন দুঃখিত আমি তোমার সাথে যেতে পারব না। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি।

আমার পিঠে ব্যথা। আমি এত পথ হাঁটতে পারব না। তুমি একা যাও। আমি একথা শুনে একটু অবাক হলাম। আমার পুরুষমিত্রের কথা শুনে তার মন কেনও এত খারাপ হল তা ঠিক বুঝতে পারলাম না।

মাঝে মাঝে আমি না ছেলেদের ঠিক বুঝতে পারি না, আমার সাথে এক মিনিটের পরিচয়েই প্রেমের স্বপ্ন দেখে। এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয় কীভাবে নাকি শুধু দেহের প্রতি আসক্তি তা বুঝতে পারি না। পরের লেখার শিরোনাম ছিল, ‘বিছানায় নেওয়ার ভাষা সব দেশের পুরুষেরই এক’। সেখানে তিনি লিখেছেন, খেতে খেতে মুজাহদি আমাকে জিজ্ঞাসা করল সেদিন রাতে আমার কি প্ল্যান? আমি বললাম বোসফারাস ট্যুর থেকে এসে ঘুমাবো। মুজাহদি চোখ চকচক করে বললো আমার সাথে নাইট ক্লাবে যাবে? আজ থাকো সারারাত আমার সাথে।

আমার বুক একটু ধ্বক করে উঠলো। কেমন জানি কিসের আভাস? বিশ্বভ্রমন একটা জিনিস আমাকে খুব ভালোভাবে শিখিয়েছে এবং সেটা হচ্ছে রহস্যময় নারীদেহের প্রতি পৃথিবীর সব পুরুষই বিচিত্রভাবে আকৃষ্ট। সে দেহ যে দেশেরই হোক না কেন? বাংলাদেশী অথবা তুর্কী দেহ। দেহ হলেই হল। সে দেহের স্বাদ সব পুরুষই গ্রহন করতে চায়।

হোক না সে দেহের সাথে এক মিনিটের পরিচয়। পুরুষমাত্রই কেন জানি যে কোনও জায়্গায় যে কোনও সময়ে বস্ত্র উন্মোচনে প্রস্তুত। বিছানায় নেবার ভাষা সব দেশের পুরুষেরই এক। ভালোবাসা না থাকলেও তাদরে শরীর জাগ্রত হতে সময় লাগে না। আর শরীরে লাল বাতি তো সব সময়ই জ্বালানো থাকে।

তার বেশিরভাগ লেখাই ভ্রমণকাহিনীর মতো। অথচ কারণে-অকারণে এখানে তিনি যৌনতা নিয়ে এসেছেন। লেখা পড়লে বোঝা যাবে তার বেটপ-ঢাউশ মার্কা শরীরের প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের কামনার শেষ নেই। সিঙ্গাপুরের ভ্রমণকাহিনীতেও এমনই একটি ঘটনা উল্লেখ আছে। সেখানে অবশ্য তিনি পতিতাদের সমাজ সেবায় নিয়োজিত বলে উল্লেখ করেছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। তানিয়া সেই কৌশল নিয়েই নিজের পাঠক বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবাক লাগছে এই তানিয়াই আবার উপদেশ দিয়েছেন তসলিমা নাসরিনকে। তসলিমা নাসরিনকে কিছু বলার আছে শিরোনামে লেখায় তিনি লিখেছেন, গত সপ্তাহে তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রতিক কালের দু’টি লেখা পড়লাম। প্রথম লেখাটি্কর শিরোনাম ছিলো হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কিত।

লেখাটিতে তসলিমা নাসরিন হুমায়ুন আহমেদকে পুরুষতান্রিক সমাজের বাহক বলে আখ্যায়িত করেছেন। লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, তসলিমা নাসরিন পুরুষতন্ত্র ও নারীবাদিতা সম্পর্কে একটু ভুল ধারণা পোষণ করেন অথবা দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে অবস্থান করার কারণে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটু কম অবহিত রয়েছেন। লেখার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ছেলেবেলায় হুমায়ুন আহমেদ পড়লেও যখন সাহিত্য বুঝতে শিখেছেন তখন তিনি হুমায়ুন আহমেদ পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। একই সাথে আরো বলেছেন যে যখন তিনি নাটক অথবা সিনেমা বুঝতে শিখেছেন তখন থেকে হুমায়ুন আহমেদ এর নির্মিত নাটক দেখা ছেড়ে দিয়েছেন। তসলিমা নাসরিন এর এ রকম মন্তব্যের পেছনে দুটো যুক্তি থাকতে পারে।

তে প্রথমত: তিনি হুমায়ুন আহমেদের লেখা পছন্দ করেননি কারণ এতে “যৌন-যৌনাঙ্গ ও যোনী”-এ তিনটি শ্বব্দের ব্যবহার অপেক্ষাকৃতভাবে কম। দ্বিতীয়ত: যে সাহিত্য হুমায়ুন আহমেদ তৈরী করে গেছেন সে সাহিত্য তা তসলিমা নাসরিনের মান সম্মত হয়নি। তবে তসলিমা নাসরিন কেন হুমায়ুন আহমেদের নাটক দেখতেন না তা আমার বোধগম্য নয়। গুটি কয়েক সিনেমা ছাড়া বাংলাদেশে এর চেয়ে মান সম্মত কোনো সিনেমা তৈরী হয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই। তসলিমা নাসরিন এ কথা স্বীকার করেছেন যে হুমায়ুন আহমেদ পাঠক তৈরী করেছেন।

অন্য অংশে লিখেছেন, হয়তবা তসলিমা নাসরিন ঠিক বলছেন এমন একদিন আসবে যখন বিয়ে নামক প্রথার বিরুদ্ধে সবাই মুখ খুলবে এবং এটা উঠে যাবে এবং সমাজবিজ্ঞানীরা হয়ত বলবেন যে ‘পৃথিবীতে একটি যুগ ছিল, সে যুগের নাম অন্ধকার যুগ। সেই অন্ধকার যুগে একটি প্রথা দীর্ঘদীর্ঘকাল টিকে ছিল, প্রথাটির নাম বিয়ে’। , এসব বোঝাতে গিয়ে পুরুষতন্ত্রের প্রসঙ্গ উঠবে, তখন নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের সেই সব মানুষের গা কেঁপে উঠবে বীভৎস একটা সমাজ কল্পনা করে”। -এটা হতে পারে সত্যি তবে ইউটোপিয়া? নাডিসটোপিয়া তা সময় বলে দেবে। তবে এসব অনেক ছোট ব্যপার।

বিয়ে, যৌন, যৌন চাহিদা, জরায়ুর স্বাধীনতা-সমাজে এছাড়া অনেক বিষয় আছে। তসলিমা নাসরিনের মতন একজন বড় লেখক সে সব দিকগুলো তুলে ধরে জাতিকে আলোর দিকে নিয়ে যাবেন বলেই আমার বিশ্বাস। প্রায় দেড় যুগের মতো তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে। নিজের কাজের জন্যই আজ তসলিমা নাসরিন নির্বাসনে। ভালো, গঠনশীল কাজের মাধ্যমেই ক্ষণজন্মা এই লেখক আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এই যদি হয় তার ভাষ্য তাহলে তার প্রতিটি লেখায় যৌনতা এনে কী হতে চান তানিয়া-এ প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলাতে পারিনি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।