চায়নায় পড়ার জন্য ০১৬৮৪৪৪৩০৮৬, ০০৮৬১৩৭১৯২৭৫০৪৬ www.xueonline.info যেসব সড়ক সর্বক্ষণ যানবাহনের স্রোতে সয়লাব থাকে; সেসব সড়কে এক-আধ কিলোমিটার পর পর ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা রাখা হলে কোন অবস্থাতেই যানজট নিরসন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। পথঘাটের চলমান দৃশ্যের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, ট্রাফিক সিগনালের অধিকাংশই চৌপথি ধরনের। একদিক ছেড়ে দিলে তিন দিক আটকে রাখতে হয়। ফলে সিগনালওয়ালা মোড়গুলো মুহূর্তেই যানবাহনে সয়লাব হয়ে ওঠে।
এমনকি সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার পরও যানবাহনগুলোকে ভেড়ার পালের মতো গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলতে দেখা যায়। প্রধান প্রধান সড়কে চলা যানবাহনের স্রোতকে ঘন ঘন ট্রাফিক সিগনালের মাধ্যমে আটকিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা কতটা ফলপ্রসু হবে সময়ই তা বলে দেবে। কিন্তু ফলাফল দেখার জন্য ততদিন অপেক্ষা করলে সর্বনাশের বোঝা এতটাই ভারী হবে, যা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হয়। কাজেই যানজটের ত্রাহি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চলমান বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চতুর্ভুজ ফর্মুলা বাস্তবায়ন জরুরি।
কারণ এটি এমনই এক ফর্মুলা যার মাধ্যমে কোনরকম অবকাঠামোর উন্নয়ন না ঘটিয়েও দ্রুত যানজট নিরসন করা সম্ভব। আসুন, তাহলে যানজট নিরসনে চতুর্ভুজ ফর্মুলা নিয়ে কথা বলা যাক।
চারটি ভুজ বা বাহুর সমন্বয়ে চতুর্ভুজ গঠিত। মহানগরীর সমন্বিত মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রধান সড়কগুলো সংযোগ সড়ক দ্বারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চতুর্ভুজের সৃষ্টি করেছে। চতুর্ভুজগুলো যেসব বাহুর সমন্বয়ে গঠিত সেগুলোর দৈর্ঘ্য এক বা আধাকিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এক্ষেত্রে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুদ্বয়ের একটিকে শুধু যাওয়া ও অন্যটিকে ফিরে আসা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমন পল্টন-বিজয়নগর-ফকিরাপুল-দৈনিকবাংলাÑ এ চার স্টপেজ একটি চতুর্ভুজের সৃষ্টি করেছে। যদি পল্টনকে অ, বিজয়নগরকে ই, ফকিরাপুলকে ঈ ও দৈনিক বাংলাকে উ বিন্দু ধরা হয় তাহলে অই, ইঈ, ঈউ, উঅ বাহুবিশিষ্ট অইঈউ চতুর্ভুজ পাওয়া যাবে। সূত্র অনুযায়ী অই অর্থাৎ পল্টন টু বিজয়নগরকে যাওয়া ও ঈউ অর্থাৎ ফকিরাপুল টু দৈনিক বাংলাকে আসা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। আবার উঅ অর্থাৎ দৈনিক বাংলা টু পল্টনকে যাওয়া ও ইঈ অর্থাৎ বিজয়নগর টু ফকিরাপুলে আসা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
পদ্ধতিটি চালু করা হলে দৈনিক বাংলা থেকে কাকরাইলগামী গাড়িগুলো যাওয়ার সময় পল্টন মোড় হয়ে যাবে এবং ফিরে আসার সময় ফকিরাপুল হয়ে ফিরে আসবে। এক-আধ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসার বিনিময়ে যদি পথ চলাচলকে লালবাতির খপ্পর থেকে মুক্ত করা যায়, তাহলে যানবাহনগুলো জট পাকানোর সুযোগ পাবে না। যে সড়কগুলো চতুর্ভুজ ফর্মুলার আওতায় আসবে সেগুলো মূলত একমুখী হিসেবে ব্যবহার হবে। একমুখী সড়কে বামের লেনে শুধু বাস ও ভারী যানবাহন এবং ডানের লেনে প্রাইভেট কার ও হালকা যানবাহন চলবে। রোড ডিভাইডারের মাধ্যমে যানবাহনের ক্যাটাগরি অনুযায়ী লেন বরাদ্দ দেয়া গেলে একই লেনে রকমারি যান চলাচলের আসুরিক দৃশ্য চোখে পড়বে না।
চতুর্ভুজ ফর্মুলা বাস্তবায়িত হলে চলাচলের জন্য বিনা খরচে দ্বিগুণ প্রশস্ত সড়ক পাওয়ার পাশাপাশি ট্রাফিক সিগনাল প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। ফলে কোনরকম অবকাঠামোর উন্নয়ন না ঘটিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে যানজটের কবল থেকে মুক্ত করা যাবে, এটা আশা করা যায়।
চতুর্ভুজ ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে মডেল হিসেবে সুবিধাজনক একটি চতুর্ভুজকে ফর্মুলায় ফেলতে হবে। তারপর এটির সুযোগ-সুবিধা দেখে এর নিকটতম অন্য চতুর্ভুজকেও ফর্মুলায় ফেলতে হবে। এভাবে সোয়েটার গাঁথুনির মতো একটির পর একটি চতুর্ভুজকে ফর্মুলার আওতায় এনে একটি বৃহৎ চতুর্ভুজ গঠন করতে হবে।
যেমনÑ পল্টন-বিজয়নগর-ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলাÑ এ চার স্টপেজ নিয়ে গঠিত চতুর্ভুজকে ফর্মুলায় ফেলার পর এর পাশের চতুর্ভুজকে বিবেচনায় নিতে হবে। এর নিকটতম চতুর্ভুজ হচ্ছে পল্টন-জিরো পয়েন্ট-গণিরোডের মাথা-হাইকোর্ট। চতুর্ভুজ পেলেই যে তার চার বাহুকেই ফর্মুলায় ফেলতে হবে এমনটি নয়। ব্যবহারের সুবিধার্থে অনেক সময় দুই বাহুকেও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনÑ দ্বিতীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে পল্টন টু হাইকোর্ট ও জিরো পয়েন্ট টু গণিরোডের মাথাÑ এ দুই বাহুকে ফর্মুলায় ফেলাটা বেশি ফলপ্রসু হবে।
এ অঞ্চলে আরও একটি চতুর্ভুজাকৃতির মোড় আছে। সেটি হচ্ছে ফকিরাপুল থেকে আরামবাগ হয়ে শাপলা চত্বর এবং শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা। এটিকে চতুর্ভুজের মতো মনে হলেও আসলে এটি একটি ত্রিভুজ। শাপলা চত্বরকে যদি ঊ ধরা হয় তাহলে ত্রিভুজটির নাম হবে ঈঊউ। এখানে শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলাকে (ঊউ) তে যাওয়া ও ফকিরাপুল থেকে শাপলা চত্বরে ফিরে আসা (ঈঊ) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পল্টন বা ফকিরাপুলের মতো চৌধা-বিভক্ত মোড়গুলোতে চতুর্ভুজ ফর্মুলা বাস্তবায়িত না হলে অদূরভবিষ্যতে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়বে। কারণ দৈনিক বাংলা থেকে পল্টনগামী গাড়িগুলো পল্টন মোড়ে সিগনাল পেলে যে জটের সৃষ্টি হয় তার লেজ যদি দৈনিক বাংলাকে ছাড়িয়ে যায় এবং এর কুপ্রভাবে ফকিরাপুল থেকে দৈনিক বাংলাগামী জটের লেজ যদি ফকিরাপুলকে ছাড়িয়ে যায় তাহলে যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসবে। এই ভীতিকর পরিস্থিতি বর্তমানে সৃষ্টি না হলেও যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন যে হারে বাড়ছে তাতে খুব অচিরেই যে এ অবস্থায় পড়তে হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তখন এ জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় চতুর্ভুজ ফর্মুলা ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে কোন ফর্মুলাই কাজে আসবে না। কাজেই এরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার আগেই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, চতুর্ভুজ ফর্মুলা কেবল ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনেই ভূমিকা রাখবে এমনটি নয়। এ পদ্ধতিতে রাজধানীকে যানজটের কবল থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য মহানগরীকেও যানজটের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করা যাবে। এ ফর্মুলার বড় সুবিধা যে, এটি বাস্তবায়নে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। ফলে বাড়তি বাজেট বা সময় ব্যয়েরও প্রয়োজন হবে না। যে মুহূর্ত থেকে কার্যক্রম শুরু হবে সে মুহূর্ত থেকেই ফল পাওয়া যাবে।
এখানে আরও একটি কথা স্মর্তব্য যে, পদ্ধতিগত ত্র“টি রেখে অবকাঠামোগত উন্নয়নে গেলে তা কখনই সুফল বয়ে আনবে না। বরং তা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গলেরই কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যান্ত্রিক ত্র“টি নিয়ে বিমান উড্ডয়ন যেমন বিপজ্জনক; সেরকম চলমান পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে অবকাঠামোগত পরিবর্তনে গেলে কালের বিচারে তা ভোগান্তিই বাড়াবে বলে মনে হয়। কাজেই যানজট নিরসনে যে কোন কাজে হাত দেয়ার আগে চলমান পদ্ধতির ত্র“টি দূর করা প্রয়োজন। এ ত্র“টি দূরীকরণে চতুর্ভুজ ফর্মুলা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক
সূত্র: যুগান্তর ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।