... ১ নভেম্বর বিকাল ৪.৩০ SAPTCO এ বাসে উঠি। যেমন ভীড় আশা করেছিলাম তেমন ভীড় দেখলাম না। তবে জানলাম ২-৩ দিন পর হতেই ভীড় শুরু হবে। অনেকেই তায়েফ হয়ে পালিয়ে হজ্জ্ব করতে যায়। এখানে নতুন নিয়ম হয়েছে ৫ বছরের মাঝে কেউ ২য় বার হজ্জ্ব করতে পারবেনা।
অনুমোদিত কাফেলা ছাড়াও হজ্জ্ব করতে দেয়না। তাই যারা ৫ বছরের মাঝে ২য় বার হজ্জ্ব করতে চায় অথবা কম খরচে হজ্জ্ব করতে চায় তারা পালিয়ে হজ্জ্ব করে। হজ্জ্বের সময় মক্কা প্রবেশের পথে পুলিশি চেকিং হয়, তাই এসব অবৈধ হাজীরা পাহাড়ের অলি গলি দিয়ে পুলিশদের ফাঁকি দেয়। হজ্জ্বের অন্যতম প্রধান শর্ত “নিয়্যাত”, এভাবে পালিয়ে হজ্জ্ব করে আল্লাহকে কতটুকু খুশী করা যায় তা আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন।
রাত ১২.৩০ এ পৌছার কথা থাকলেও আমরা তায়েফ পৌছলাম ৩.৩০ এর দিকে।
বেশ ঠান্ডা লাগছিল। আদিল ভাই আমাদের গাইড মাহমুদ ভাইকে ফোন দিলেন। ১০ মিনিটেই উনি হাজির। বেশ স্মার্ট। উনি আমাদেরকে হোটেলে নিয়ে গেলেন।
হোটেলের নামটি শুনেই আমার বেশ ভালো লাগলো। Hotel Casablanca। সুন্দর একটি হোটেল, প্রতি রাতে ১৫০ রিয়াল দিতে হবে। Casablanca (1942) আমার অন্যতম প্রিয় একটি মুভি। বিটিভিতে যখন মুভিটি দেখেছিলাম, এর নায়িকা Ingrid Bergman আমাকে মোহিত করেছিল।
আজও তার সেই রূপশ্রী আমাকে আবিষ্ট করে।
Casablanca'র এই গানটি আমাকে এখনও আলোড়িত করে
Hotel Casablanca
রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে ৫ টা বেজে গেল। উঠলাম সকাল ৮.৩০ এ। কিন্তু কেউই ক্লান্ত নই। নতুন একটি শহর দেখব, ঘুরে বেড়াব সেই আনন্দ সবার চোখে মুখে।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয় আমাদের সাথে একজন ইংলিশের টিচার আছেন যিনি ঘুরতে পছন্দ করেননা, একা একা থাকেন। তার মতে টাকা খরচ করে ঘুরার কি আছে? ...
কিন্তু আমাদের এ ৬ জনের কোন কিছুতেই “না” নেই – আড্ডাবাজি, খাওয়া, ঘুরাঘুরি সব সমানতালে চলছে- এতেই আমাদের বেঁচে থাকার আনন্দ।
নাস্তা করার জন্য মাহমুদ ভাই আমাদেরকে একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। অনেকদিন পর পারোটা, ডাল ও ডিমভাজি দিয়ে নাস্তা করলাম।
শহর হতে ৫ মিনিটের ড্রাইভে হযরত আলী (রাঃ) মসজিদ।
আমরা প্রথমে সেখানে গেলাম। পাথরের তৈরি ১ তলা ছোট একটি মসজিদ। সাথে মিনার আছে। প্রায় ২০জন একসাথে নামাজ পড়তে পারবে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
মিনারের ভেতর দিয়ে সিড়ি আছে, মিনার চূড়ায় উঠলাম। মিনারের উপরে কিছুটা অংশ ভাঙ্গা।
হযরত আলী (রাঃ) মসজিদ
হযরত আলী (রাঃ) মসজিদের একটু সামনে গেলেই চোখে পড়লো তায়েফের সেই বিখ্যাত বুড়ি'র বাড়ি আর তার বড়ই গাছ। পাশেই একটা মসজিদ আছে যেখানে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নামাজ পড়তে আসতেন। মনকে ভীষণ নাড়া দিল।
ছোটবেলায় কত গল্প শুনেছি … দুষ্ট বুড়ি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর যাত্রা পথে গাছের কাটা বিছিয়ে রাখতো, কিন্তু মহানবী (সাঃ) কখনো অভিযোগ করেননি। পরপর কয়েকদিন তিনি দেখলেন পথে কোন কাটা নেই, চিন্তিত হয়ে তিনি বুড়িকে দেখতে যান,নিশ্চয়ই বুড়ি অসুস্থ। গিয়ে দেখেন তাই, বুড়ি বিছানায় পড়ে আছে। মহানবী (সাঃ) তার সেবা করে সুস্থ করে তুললেন। বুড়িতো অবাক ... যাকে রোজ কষ্ট দেই, সেই আমাকে সারিয়ে তুললো? বুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ইসলাম গ্রহন করে।
মসজিদটি ...
বুড়ির বাড়ি আর মসজিদটি নিতান্তই সাদামাটা ভাবে রয়েছে। এটা যে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, কোথাও লেখা নেই, কোন সাইন বোর্ড নেই। বর্তমান সরকার এসব নিদর্শন সংরক্ষণ করতে চায় না। এসব স্থানে দর্শনার্থীরা যে আবেগ প্রকাশ করে তা নাকি অনেক সময়ই শিরকের পর্যায়ে পড়ে যায়। তাই সৌদি সরকার ঢালাওভাবে প্রচুর ইসলামী স্থাপনা, নিদর্শন, সাহাবীদের কবর, ঐতিহাসিক পাহাড় নষ্ট করে ফেলেছে।
মসজিদটি বেশ পরিপাটি। কয়েকজন পাকিস্তানিকে দেখলাম আবেগী হয়ে মসজিদের ময়লা পরিস্কার করছে, ঝাড়ু দিচ্ছে। পাশেই বুড়ির বাড়িতে গেলাম। প্রথমেই তার বড়ই (?) গাছটি চোখে পড়লো। এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
কালপরিক্রমায় শুকনো কান্ডটাই শুধু আছে। বুড়ির বাসাটিও ভাঙ্গা, তবে স্ট্রাকচার ঠিকই বুঝা যায়।
বড়ই (?) গাছটি
বুড়ির বাড়ির ভেতরে ...
তায়েফে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন ইসলাম প্রচারে আসেন তখন তায়েফবাসীরা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে রক্তাক্ত করে ফেলে। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার শরীরের রক্ত মাটিতে পড়তে দেননি, কেননা তা হলে ফেরেশতারা তায়েফকে ধ্বংস করে ফেলত। তারপরও ফেরেশতারা একটি পাহাড়ের পাথর দিয়ে তায়েফবাসীদেরকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।
বুড়ির বাড়ি আর মসজিদের পেছনেই পাহাড়টিকে দেখতে পেলাম। তায়েফবাসীদেরকে মারার উদ্দেশ্যে বড় একটি পাথর গড়িয়ে নামছিল, শেষ মূহুর্তে ছোট একটি পাথর দিয়ে তা আটকানো হয়। এখনো পাথর দুটি সেভাবেই আছে।
বুড়ির বাড়ি ও পেছনে সেই পাহাড় ...
এখান হতে আমরা চললাম আল সাফা পাহাড়ে। সেখানে বিভিন্ন হলিডে রিসোর্ট আর পার্ক আছে।
সামারে পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে আসে। এখন সবকিছুই ফাঁকা, লোকজন তেমন ছিল না। এক যায়গায় উট দেখে আমরা থামলাম। শাকিলা আগেই উটের পিঠে চড়েছিল। আমিতো চড়িনি, সুতরাং এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না।
এক সৌদি বেদুঈন গান শুনিয়ে আমাদের বেশ আনন্দ দিলো,আমরা ৫ রিয়াল দেই, সে বেশ খুশী। আমি ও শাকিলা উটের পিঠে উঠলাম, ১০ রিয়াল দিতে হবে। সে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। উটের পিঠ হতে নামার পর সৌদি ২০ রিয়াল চেয়ে বসল। সে নাকি জনপ্রতি ১০ রিয়াল বলেছে।
কথার মারপ্যাচে অনেক সৌদিই প্রতারনা করে থাকে। শেষে ১৫ রিয়াল দিয়ে মুক্তি পেলাম। সৌদি বলেই তারা যে ভালো মানুষ তা কিন্তু নয়। আমাদের দেখাদেখি মিলন ও লিজাও উটের পিঠে চড়লো।
বিকেলে আমরা দূরে কোথাও যাইনি।
আশে পাশেই হেটে বেড়ালাম। আমাদের হোটেলের পাশেই মহানবী (সঃ) এর চাচা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস মসজিদ। বেশ বড়। মসজিদ দেখে, বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস মসজিদ
মসজিদের কবরাস্থানে বাংলায় লেখা নির্দেশাবলী
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।