আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুখকর হলো না বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি সামু ব্লগারের ইউরেকা।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ আজ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আটকে পরেছি দিল্লিতে। তাই সারাদিন ঘুরবো বলেই সিদ্ধান্ত। কুতুব মিনার ও লোটাস টেম্পল দেখে ফিরছিলাম লাল কেল্লা ও চাদনি চকের দিকে। মেট্রোতে দাড়িয়ে ষ্টেষনের নাম গুলোর দিকে নজর বুলাচ্ছিলাম।

হটাত চাদনি চকের সামনের ষ্টেষন 'জরুরুল লাল নেহরু ষ্টেডিয়ামে'র দিকে নজর পড়ল। তরিত ভেবে ফেল্লাম মাঠটা দেখেই যাই। মাট্রো ছেড়ে বেরুতেই বিশাল ষ্টেডিয়াম নজরে পড়ল। উত্তেজনা সৃষ্টি হতে লাগল। ঘরিতে ৩টা ১০ বাজে।

হটাৎ কয়েকজন দৌড়ে সামনে চলে গেলো। ভাবলাম মাঠে হয়ত খেলা হচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম যার খেলাই হোক ঢুকে মাঠটা দেখে নিব। মাঠের কাছাকাছি চলে এলাম। একজনকে ডেকে জিজ্ঞেসকরলাম কার খেলা এবং কি খেলা।

জবাব শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বুঝতে একটু সময় লাগল। আরেকটু সামনে গিয়ে আরেকজনকে জিজ্ঞাস করলাম। সেও তাই বলল। বাংলাদেশ বনাম আর নেপালের খেলা।

ফুটবল খেলা। সাফ গেম্সের গুরুত্ব পুর্ন খেলা। আমিতো আকাশে উরতে লাগলাম। এ যেন এক ইউরেকা। নিজেকে অনেক লাকি মনে হতে লাগল।

হটাৎ মাঠের ভিতর উচ্চ ধনি শুনে মনটা আকাশে উরে দিল। গেটের পাশে এসেই দেখি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ৭৫ রুপি দিয়ে টিকিট হাতে পেতেই দেশ প্রেম জেগে উঠল। বাংলাদেশ বনাম নেপাল। ৩.০০ পিএম।

এখন বাজে ৩.২০। এক দৌড়ে মাঠের ভিতর চলে গেলাম। গ্যালারিতে হাজার খানেক দর্শক। বেশ হৈচৈ করছে। দ্রুত স্কোর বোর্ডের দিকে নজর দিয়ে দেখলাম ০/০।

যাক, ভাল সিট দেখে বসা যাক। বসে পরলাম। কিন্তু পাশে শুধুই নেপাল নেপাল শ্লোগান। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম সবাই নেপালের সাপোর্টার। অনেকের হাতেই পতাকা।

দেখতে দেখতে আরো হাজার ঝানেক দর্শক চলে এলো। সবাই নেপালের। কেমন কেমন বোধ করতে লাগলা। একা একা লাগতে লাগল। উঠে দাড়িয়ে এদিক থেকে সেদিক দেশী দর্শক খুজতে লাগলাম।

কিন্তু পেলাম কই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষের মুখের দিকে তাকালাম, কিন্তু কাউকেই আপন মনে হলো না। এক পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া এটা কি শুধু নেপালের গ্যালারি? সে বলল জানিনা। তাকে জিজ্মঘেস করলাম, দুরের ঐ গ্যালারিতে যাব কিভাবে? সে বলল, এই গেট দিয়ে বের হয়ে ঐদিক দিয়ে যাও। প্রথমার্ধের বাকি পাঁচ মিনিট।

সেটা শেষ করে দ্রুত বের হয়ে হাটা দিলাম দুরের ঐ গ্যালারির দিকে। বিশ্বাস ঐখানের সবাই আমাদের দর্শক। যেতে যেতে দ্বিতিয়ার্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু একি!!!!!! এখানেও সবাই নেপালের। সবার মুখেই নেপাল নেপাল।

এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে একটা দর্শকও পেলাম না। সবার হাতে পানির বোতল। সেটা দিয়ে চেয়ার জোড় বাড়ি দিচ্ছে আর সবাই আওয়াজ তুলছে নেপাল, নেপাল। আওয়াজটা যেন আমার বুকে গিয়ে বিধছে। কারণ আমি কোন আওয়াজই করতে পারছি না।

কয়েকজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে কি গ্যালারি ভাগ করা আছে? তারা বলল, না। সবাই মিলে মিশেই বসেছি। তারমানে এখানে বাংলাদেশের কোন মানুষই নেই। আমি একাই হলাম বাংলাদেশেরর প্রতিনিধি। মনে সাহস যোগাতে লাগলাম।

পানির বোতল কিনে তা খালি করে আমিও সবার সামনে এক সিটে গিয়ে বসলাম। আর বাংলাদেশের ভাল মুহুর্ত গুলোতে চেয়ারে জোড়ে আওয়াজ তুলতে লাগলাম, আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম অন্তত অস্তিত্ব তো প্রকাশ পাচ্ছে। খেলায় বাংলাদেশ দুইবার ভাল চান্স পেয়ে যায়। এতে আমার চিতকারে সবাই মোটামোটি বুঝতে পেরেছে যে একজন হলেও এখানে বাংলাদেশের সাপোর্টার আছে। যাক মনে মনে অনেক দোয়া করতে লাগলাম, আজ যেন বাংলাদেশ জিতে।

তাহলে নিজেকে অনেক শুখি মনে করব। আমার ভারত সফর সফল মনে করব। কিন্তু খেলায় নেপালের প্রাধান্য দেখে মনে মনে ড্রই আশা করলাম। উল্লেখ্য যে, এটাই আমার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম লাইভ খেলা দেখা। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, খেলা শেষে খেলুয়ারদের সাথে দেখা করতে যাব।

কারণ এত দূরে আসাতে হয়ত আমাকে সেই সুযোগ দেয়া হবে। খেলা প্রায় শেষ। তাই এদি সেদিক ছবি তুলতে লাগলাম। একজনকে নিজের ছবি তুলে দিতে বললাম। সে আমাকে দেখেই বলল, তুমি মনে হয় বাংলাদেশের?? আমি বললাম, হ্যা।

সে বলতে লাগল, তোমার বাংলাদেশ আজ আক্রমনাত্বক খেলছে না। মনে হয় অনেক নতুন খেলোয়ার নামিয়েছে। আমি বললাম হ্যা। (আসলে আমি টিম সমন্ধে কিছুই জানি না)। সে বলতে লাগল, আমি বাংলাদেশের অনেক খেলা দেখেছি, তারা অনেক আক্রমনাত্বক খেলা খেলে আমরা জানতাম।

কিন্তু আজ কেন যেন ডিফেন্সিভ খেলছে। বলতে বলতেই বাংলাদেশের জালে বল চলে গেল। সে আমার ক্যামেরা আমার হাতে দিয়ে নেপাল নেপাল বলে চিতকার করতে লাগল। গ্যালারির হাজার তিনেক সবাই এক স্বরে চিতকার করে নেপাল নেপাল করতে লাগল। আমি হাতের বোতল ফেলে দিয়ে মুখ ভাড় করে গেটের দিকে পা বারালাম।

খেলুয়ারদের সাথে দেখা করার আড় মন চাইল না। এখন নেটে এসে দেখলাম বাংলাদেশ নাকি টুর্নামেন্ট থেকেই আউট হয়ে গেল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।