আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধূসর রবিবার ...

হারিয়ে গিয়েছি, এ নয় কোনও জরুরী খবর ... ধূসর রবিবার। কাটে আমার নির্ঘুম প্রহর। ছায়াগুলো হয় গাঢ়তর। আর অন্তহীনতার মাঝে আমার বসবাস। শ্বেত-শুভ্র ফুল ভাঙাবেনা তোমার ঘুম।

অথবা তোমায় নিয়ে যাবে না কৃষ্ণ, বিষাদ গাড়ি দূর, বহুদূর। দেবদূতেরা ফিরিয়ে দিবে না তোমায়। অথবা, আমি যদি পৌঁছে যাই তুমি আছো যেখানটায়? ধূসর রবিবারে, যখন আমার সময় কাটে ছায়াদের সাথে, যখন আমি ভেবে নেই সময় এসেছে সবকিছুর ইতি টানার। আর অল্পকিছু সময় পরেই এখানে জ্বলবে স্নিগ্ধ, শ্বেত মোমবাতি। আর তার স্মিত আলোয় জেগে উঠবে সব প্রার্থনা ,আমার জন্য।

তাদের চোখে যেন থাকে না বিদায় অশ্রু। তারা জেনে যাক, এখানেই আমার আনন্দ। মৃত্যু কোন স্বপ্ন নয়। মৃত্যুর মধ্য থেকে আমি আলতো ছুঁয়ে যাবো তোমাকে এবং আমার নিঃশ্বাসে রয়ে যাবে তোমার প্রতি আশীষ। স্বপ্নে ভেসে যাই।

যখন জেগে উঠি, দেখি তোমাকে নিদ্রামগ্ন, আমার হৃদয়ের গহীনে কোথাও। স্স্মৃতি পিছু টানেনি তোমাকে । তবু বুকের গহীন থেকে নিয়ত বলে যাই, কতটা কাছে তুমি ! কোনও এক ধূসর রবিবারে! --- ‘Gloomy Sunday’ -এর পেছনের গল্প ‘Gloomy Sunday’ গানটা Reszo Seress নামের একজন হাঙ্গেরিয়ানের পিয়ানোবাদকের লেখা। ১৯৩২ সালের শেষের দিকে Reszo Seress প্যারিসে একজন গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার লেখা গানগুলো ফ্রান্সের মিউজিক পাবলিশারদের মনোযোগ আকর্ষনে ব্যর্থ হয়।

কিন্তু Reszo Seress পিছু হটেননি। তার লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিখ্যাত একজন গীতিকার হওয়ার। কিন্তু তার বান্ধবীর উচ্চাভিলাষী এবং একটি নিরাপদ জীবনের প্রতি আগ্রহের কারনে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। একদিন Reszo Seress তার অ্যাপার্টমেন্টে পিয়ানোটি সামনে নিয়ে জানালা দিয়ে দেখছিলেন প্যারিসের স্কাইলাইন। ঝড়োমেঘ জড়ো হয় ধূসর আকাশে এবং ভারী বর্ষন শুরু হয়।

আপন মনেই তিনি বলে উঠলেন, "What a gloomy Sunday!" হঠাৎ করেই তার পিয়ানোতে বেজে ওঠে বিষাদী এক সুর। পোস্টকার্ডে লিখে ফেলেন ‘Gloomy Sunday’ । এরপর গানটি পাঠিয়ে দেন মিউজিক পাবলিশারের কাছে। অল্পকিছুদিন পরেই গানটা ফিরিয়ে দেওয়া হয় বিষণ্ণ কিন্তু অদ্ভুত বলে। গানটি আরেকজনের কাছে পাঠান।

এবারে আর তাকে আশাহত হতে হয়নি। কিন্তু গানটা প্রকাশিত হওয়ার কয়েকমাস পরেই অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। বার্লিনে এই গানটা শুনে বিষাদগ্রস্ত হয়ে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে আত্নহত্যা করে একজন। সপ্তাহখানেক পরে এক তরুনী নিজ ফ্ল্যাটে আত্নহত্যা করে। এর দুইদিন পর আরো একজন ।

আত্নহত্যা করার আগে সুইসাইড নোটে লিখে রেখে যায়, তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যেন এই গানটি বাজানো হয়। নিউ ইয়র্ক শহরে পিয়ানোতে গানটি বাজানোর পর সাততলা বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে আরো একজন। প্রায় একই সময়ে রোমে এক টিনেজার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে। এতগুলো অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য দায়ী গানটিকে ব্যান করে দেওয়া হয়। গানটির লেখক নিজেও এই অদ্ভুত অনুভূতির বাইরে যেতে পারেননি।

তিনি একদিন প্রাক্তন বান্ধবীকে চিঠি লিখেন পুনর্মিলনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো, জানা যায় তার বান্ধবীও অন্যান্যদের মত গানটি শুনে আত্নহত্যা করে। এবং কম্পোজার আত্মহত্যা করেন ১৯৬৯ সালে ১৩ জানুয়ারীতে তার জন্মদিনের কিছু পরে । জানা যায়, ১৯৩৩ এর শেষের দিকে Lazlo Javor লিরিকসহ গানটি sheet music হিসাবে প্রকাশ করেন এবং গানটি ১৯৩৫ এ Pal Kalmar প্রথম হাঙ্গেরী ভাষায় রেকর্ড করেন। এরপর গানটি ১৯৩৫ এ রাশিয়ান ভাষায়, ১৯৩৬ এ ফ্রেঞ্চ এবং জাপানী ভাষায় রেকর্ড করা হয়।

ইউনাইটেড স্টেট্‌স এ কয়েকটি ভার্সনে প্রকাশ করা হয় যার মধ্যে সফলতম Sam M. Lewis । এটি ১৯৩৬ এর মার্চে রেকর্ড করা হয়। ৩০ দশকের শেষের দিকে সারা পৃথিবীতে হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির ডামাডোলে অভিশপ্ত এই গানটি বিস্মৃত হয়। কিন্তু গানটি এখনো খুঁজে পাওয়া যাবে। এখনো কেউ না কেউ আগ্রহী , গানটার অভিশপ্ত সুরের বিষাদী প্রভাব জানতে... ফাহাদ ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে - " বিলি হলিডের স্কোরটা সবচেয়ে জনপ্রিয় ।

আমেরিকা, ইংল্যান্ড ইভেন হাংগেরিতেও এই মিউজিক নিষিদ্ধ করা হয় । সোরেস কিন্তু এই কম্পোজিশন টা নিয়ে যা যা ঘটেছে যেমন দুই শতাধিক মানুষের আত্মহত্যার সাথে এর সংশ্লিষ্টতা, বিভিন্ন দেশে এই কম্পোজিশন এর ব্যান হওয়া- এইসব কারনে আত্মহত্যা করেনি । নাজী কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তাকে আর তার মাকে বন্দী করা হয়েছি । তার মা সেখানে মৃত্যু বরন করে আর তার মাঝে ফেলে প্রচন্ড ডিপ্রেসনের একটা ছাপ । এ কারনেই বুদাপেষ্টে তার ফ্লাটের জানালা দিয়ে লাফিয়ে সে আত্মহত্যার ট্রাই করে ।

হাসপাতালে নেয়ার পর গলায় তার পেচিয়ে শ্বাষরোধ করে আত্মহত্যা করে । পাবলিশার ফায়দা লুটার জন্য রিউমার ছড়ায় গানটার জন্য তিনি আত্মহত্যা করেন । ল্যাডিলাস জ্যাভর একজন কবি ছিলেন এবং সোরেস এর বন্ধু । তিনি এর লিরিক লিখেন । তার গার্লফ্রেন্ডের আত্মহত্যার পর পুলিশ তার রুমে এই গানটার স্কোর খুজে পেয়েছিল ।

সোরেস তার কম্পোজিশন এর নাম দেন প্রথমে এন্ড অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড । জ্যাভর এর লিরিকটা ছিল মিলাঙ্কোলিক মিউজিং ফর দ্য মিউস, চন্দ্রবালিকার প্রতি শেষ চিঠি , আফটার লাইফে তার সাথে আবার দেখা হবার বাসনা । আবার বলা যায় ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা ও ততকালীন যুদ্ধবিগ্রহ আক্রান্ত পৃথিবীর জন্য ডিরিজ হিসাবে । " Gloomy Sunday তথ্যসূত্র wiki ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।