আমার "কত অজানা রে" সিরিজের সব গুলো পোষ্ট সংগ্রহে থাকা বই, গুগোল মামা ও বিভিন্ন সাইট থেকে অনুবাদ করা, তবে কোন ভাবেই কপি-পেষ্ট নয়। জানার জন্য পড়ন, ভুল হলে সঠিকটি বলার দায়িত্ব আপনাদের। আনন্দের সাথে পড়ুন। আমার ব্লগ কেচাল মুক্ত।
""পাকিস্তানী কয়েদ থেকে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর কোলে ওঠার সৌভাগ্য হয়েছিলো একজন মুক্তিযোদ্ধারই।
শহীদুল ইসলাম লালু। কি তার বীরত্ব? একটু পেছন থেকেই বলা যাক। যুদ্ধের সময় ভেঙ্গুল কেরমাজানি বাজারে লালুর চোখে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির দল। ‘আমারে আপনাগো লগে লন’-আব্দার তার। এত ছোটো ছেলে যুদ্ধ করবে কি।
লালুর তাতে কিছু যায় আসে না, সে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ফাইফরমাশ খাটা শুরু করে দেয়, অস্ত্রশস্ত্র পরম যত্নে পরিষ্কার করে। পাহাড়ি এরপর সদলে সীমান্ত পাড়ি দেন। মেঘালয়ের তুরাতে ট্রেনিঙ নেন। লালুও জুটে যান। তার কাজ ছিলো ভোরে উঠে হুইসেল বাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্যারেডের জন্য ডাকা।
এরপর জাতীয় পতাকা টাঙ্গানো আর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া। তার সঙ্গী ছিলো সমবয়সী আরেক কিশোর বুলু। দুজনকেই বিচ্ছু বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ট্রেনাররা তাদের শেখান কিভাবে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়, অস্ত্র চালাতে হয়, গ্রেনেড ছুঁড়তে হয়, শত্রুর গতিবিধির খবর নিতে হয়। আসার পথেই মাইনকার চরে কাদের সিদ্দিকীকে প্রথম দেখেন লালু।
২৫ দিনের ট্রেনিং শেষ করে তার দলে ভিড়ে যান।
অপারেশন গোপালপুর থানা নামে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের ঘটনাটি একান্তই শহীদুল ইসলাম লালুময়। যুদ্ধের উত্তুঙ্গ দিনগুলোতে গ্রুপ কমান্ডার পাহাড়ি তাকে নির্দেশ দেন গোপালপুর থানার হালহকিকত জেনে আসতে, মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে তা দখল করতে পারে। লালু গিয়ে সেখানে তার এক দূর সম্পর্কের তুতো ভাই সিরাজের দেখা পান। সিরাজ পাকিস্তানী সেনাদের দালালী করে, তাকেও একই কাজ করার প্রস্তাব দেয়।
লালু রাজী হয়ে যান। পরের দফা তিনটি গ্রেনেড নিয়ে থানায় হাজিরা দেন তিনি। অল্পবয়স বলে তাকে চেক করা হয় না। মুক্তিযোদ্ধাদের আগেই জানান দিয়ে রেখেছিলেন তার অভিপ্রায়। পুরো পুলিশ স্টেশন একবার চক্কর মেরে এসে, এক বাংকারে প্রথম গ্রেনেড চার্জ করলেন লালু।
ভীত ও হতভম্ব পাকিস্তানীরা আন্দাজে গুলি ছুড়তে শুরু করে লক্ষহীন। শুয়ে লালু দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ছোড়েন, কিন্তু এটা ফাটে না। এখান থেকে আর বেরুনো হবে না- এই ভয় পেয়ে বসে তাকে। তারপরও তৃতীয় গ্রেনেডটি সশব্দে ফাটে আরেকটি বাংকারে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও এগিয়ে এসেছেন।
গোলাগুলির এই পর্যায়ে সিরাজ এসে লালুকে একটি অস্ত্র ধরিয়ে দেয়, জিজ্ঞেস করে চালাতে পারে কিনা। লালু তাকে পয়েন্ট ব্ল্যান্ক রেঞ্জে গুলি করেন। এই ঘটনায় কিছু পাকিস্তানী পালায়, কিছু ধরা পড়ে, মারা যায় অনেক। হতাহতের মধ্যে দিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেন গোপালপুর থানা। বলতে গেলে শহীদুল ইসলাম লালুর একক কৃতিত্বে।
"" {অমি রহমান পিয়াল ভাই এর ওই ছোটোলোকের পোলাটা কিন্তু বীরপ্রতীক ছিল }
আজ "শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ" পেইজে যখন নামটা জানতে পারলাম তখনই এর পিছনের ইতিহাস জানার চেষ্টা করলাম। কিছু সাইটে তার নাম পেলাম তাতে তাঁর বীরত্বগাথার চেয়ে কোন সংস্থা তাঁকে কত টাকার সাহায্য করছে তার হিসাবই বেশি দেখলাম। আরে যত ঋনী আমরা তা তো টাকায় শোধ করা যাবে না। খুব খারাপ লাগছিল তাঁর কথা পড়ে। বারবার মন বলছিল তারা কেমন মানুষ ছিলেন যারা মাএ ১২ বছর বয়সে গ্রেনেড হাতে তুলে নিয়েছিলেন দেশ স্বাথীন করার জন্য, খুব জানতে ইচ্ছে করে।
খুব লজ্জা লাগছিল এ কথা জেনে যে গোপালপুর আমার নিজের এলাকা আর আমি এমন একজন বীরের কথা জানি না। আমার হাতে পিয়াল ভাই এর এই পোস্টটি ছাড়া আর কোন সোর্স নাই। কারও কাছে থাকলে জানাবেন।
শাহবাগে "শহীদ রুমী স্কোয়াড" আছে কিন্তু বাচ্চাদের জন্য কি "লালু বাহিনী" যাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস শিখানো হবে। শুধু গোআ দের মেরে দেশ শত্রুমুক্ত হবে না, এর জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে জাতি বীরের সম্মান দিতে পারে না তারা কখনোই সামনে এগোতে পারে না ... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।