চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা আমাদের দেশটির সেক্যুলার হওয়াটা এত বেশি প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে কেন? সেক্যুলার হয়ে গেলেই কি আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেক্যুলার হওয়ার উপকারীতা কি আর অপকারীতাই বা কি? তার আগে কিছু তথ্য দেওয়া যাক। পাকিস্তান সেক্যলার ছিল ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত (১০ বছর) বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালের আগ পর্যন্ত আর ইরান খোমেনির আগ পর্যন্ত। মজার ব্যাপার ইরাক সেক্যুলার ছিল ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত। অনেকেই একমত হবেন যে শাহের আমলের চাইতে এখনকার ইরান অনেকদিক থেকেই এগিয়ে।
আফ্রিকার ২১টি দেশ সেক্যুলার। (বুরুন্ডি , বেনিন, ইথোপিয়া, সোমালিয়া, চাদ, মালি...)
আমেরিকার ১৪ টি দেশ (হন্ডুরাস, চিলি, মেক্সিকো, কিউবা, এল সালভাদর.....) এশিয়ায় ২০টি দেশ (উত্তর কোরিয়া, কিরঘিস্তান, নেপাল, লাওস, ভারত, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, মন্গোলিয়া.........)
ইউরোপের সবচাইতে গরীব দেশটির একটি আলবেনিয়া সেক্যুলার। এরা সবাই অফিসিয়ালী সেক্যুলার। উইকির মতে সেক্যুলার দেশগুলি ধর্মীয় ব্যপারে সবচাইতে বেশি অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারে। যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি।
এবং ধর্মের জায়গাটি নিয়ে নিতে পারে নাস্তিকতা।
Secular states run the risk of prefering nonreligion over religion or of establishing a religion of secularism
রাষ্ট্রের ধর্মের প্রতি বিরূপ কিংবা উগ্র আচরন স্পেন এবং মেক্সিকোতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করেছিল।
কমিউনিস্ট দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মরতে হয়েছিল এসব সেক্যুলার শাসকদের হাতে আর ধংস হয়েছিল প্রায় সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সবগুলো দেশেই অর্থনীতির বারটা বেজে গিয়েছিল (সোভিয়েত রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, মংগোলিয়া, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া)।
সেক্যুলারিজমের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের অনেক সরকারী ছুটি পালন করা হয় ধর্মীয় উতসবগুলোকে মাথায় রেখে, ক্যাথলিক স্কুলের শিক্ষকেরা বেতন পান রাষ্ট্র থেকে।
আমি জানি না বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালিত মাদ্রাসা কয়টি আছে।
আমেরিকায় মুদ্রায় খ্রিষ্টানদের গডের কথা লেখা থাকে, সংসদের শপথ নেয়া হয় হাতে বাইবেল রেখে। একবার প্রথমবারের মত এক হিন্দু ভদ্রলোকে গীতা হাতে কংগ্রেসে শপথ নিলে চারিদিকে গেল গেল বলে রব উঠে।
ওমাবার পরিবারকে হাত জোড় করে আমেরিকার জনগনকে বোঝাতে হয়েছে যে ওমাবা কখনো মুলসমান ছিলেন না, কেননা বিরোধী পদপ্রাথ্রী সদম্ভে বলেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ড কেবল একজন খ্রিষ্টানই হতে পারবেন।
এবার কয়টি দেশের নাম দেয়া গেল যেখানে রাষ্টধর্ম হিসাবে একটি ধর্মকে বেছে নেয়া হয়েছে।
ফিনল্যান্ড (Finnish Orthodox Church has a special relationship with the Finnish state.[17] The internal structure of the church is described in the Orthodox Church Act. The church has a power to tax its members and corporations if a majority of shareholders are members. The church does not consider itself a state church, as the state does not have the authority to affect its internal workings or theology.)
ডেনমার্ক (Church of Denmark)
আইসল্যান্ড (Church of Iceland)
নরওয়ে (Church of Norway)
ইংল্যান্ডের ২কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের উচ্চ কক্ষের (হাউস অব লর্ডের) ২৬ জন সংসদ সদস্য আসেন চার্চ থেকে। এই ২৬ জন মোল্লার আসন সংরক্ষিত। একবার ভাবুন ত বাংলাদেশের কথা মোল্লাদের জন্য সংসদে ২০টি আসন যদি সংরক্ষন করা হয়, কি রকম হৈ চৈ পড়ে যাবে।
শ্রীলংকা (Theravada Buddhism - The constitution accords Buddhism the "foremost place," but Buddhism is not recognized as the state religion.
থাইল্যান্ড (Theravada Buddhism)
উপরের তথ্যগুলো যাচাইবাছাই করলেই বোঝা যাবে আমাদের জন্য সেক্যুলার হওয়াটার প্রয়োজন আছে কিংবা নেই।
জীবন যাপনে আপনারা কি ধরনের সমস্যায় ভোগেন জানিনা, তবে আমাদের দেশের ৪০ ভাগ মানুষ এখনো দুবেলা খেতে পায়না এটা হয়ত অনেকেই জানেন না।
উত্তরবংগে মংগায় প্রতিবছর মানষদের চরম অর্থনৈতির দুর্বিপাকে পড়তে হয়, অনেকটা না খেয়ে মরার মত। গ্রামে গন্জের ইস্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েরা দুএক ক্লাস পড়া শেষ করতে না করতেই ইস্কুল ছাড়ে জীবিকার তাগিদে, যদিও বই কিংবা মাইনের জন্য টাকা গুনতে হয় না। অথচ মোবাইল আর কিছু মাল্টি নেশনাল কোম্পানির এডগুলো দেখলে মনে হয় বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে ব্যঘ্রের গতিতে উন্নতির সোপান বেয়ে। ঠিকই এগিয়ে চলেছে তবে বাংলাদেশ নয় গোটা কিছু মানুষ এদেশের রাজনীতি, ব্যবসাবানিজ্য, মিডিয়া ইত্যাদি সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রনে। এদের উন্নতির চাকাতলে পিষে মরছে সিংহভাহ খেটে খাওয়া মানুষেরা (গার্মেন্টসের মেয়েরা এর সবচেয়ে বড় উদাহরন)।
আবার একটি বড় অংশের সরকারি আমলা কর্মচারিদের যোগসাজশে চলেছে দেশকে ছিলে ছোবড়ে খাওয়ার মহা উৎসব।
দেশের এই যখন অবস্থা কিছু কিছু মানুষ সমস্যা খুজে বেড়াচ্ছেন অন্যত্র, জেনে বা না জেনেই কাজটি করছেন ওনারা।
রাতজেগে বয় বা গারলফেরন্ডের সাথে মোবাইলে কথা বলা যৌক্তিক না অযৌক্তিক। মদের লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজতর করা উচিত না অনুচিত। পরকিয়া উপকারি না অপকারি? একটা মেয়ের দুটা ছেলের সাথে একসাথে প্রেম করাটা জায়েজ না নাজায়েজ।
বাংগালি মেয়েদের বোরখা পড়া উচিত নাকি স্কার্ট পড়া উচিত।
একটি খেটে খাওয়া গার্মেন্টসের মেয়ের সমস্যাগুলো এক্ষেত্রে গৌণই বলতে হয়।
এদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলাটা অবান্তর কেননা এরা অতি সুবিধাভোগি সমাজের অংশ, এটের পেটের বা কাপড়ের চিন্তা নেই।
এখন আবার বল্গে শুরু হয়েছে বাকস্বাধিনতার রক্ষা কল্পে মহারণ, ধর্ম যার প্রধান উপজীব্য।
এক্ষেত্রে সেনসেটিভ ইস্যু হিসাবে ধর্মটা আবার সবারই পছন্দনীয়, এতে তথাকথিত সমাজের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা খোচাখোচি ইন্টেলেকচুয়ালদের পোয়া বারো আর ধর্ম
বানিজ্যে মত্ত ধর্মব্যবসায়ীদের পোয়া চৌদ্দ।
দুপক্ষের সুবিধাবাদিরাই দেশের আর সমাজের জন্য ক্ষতিকারক ।
আশাকরি আমাদের দেশের ইন্টেলেকচুয়ালরা আমাদের সত্যিকার অর্থের সমস্যাগুলোতে দৃষ্টি দিবেন যাতে করে দেশের দেশের মানুষের সত্যিকার অর্থে মুক্তি ঘটে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।