বিরোধীদলীয় নেতার দাবি, সরকার দেশকে বিদেশের হাতে তুলে দিচ্ছে। অতএব, দেশ রক্ষায় আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। কাদের নিয়ে সেই যুদ্ধ হবে, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা ও বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগই হলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।
আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। (প্রথম আলো, ২০ অক্টোবর)
এর আগে তিনি বগুড়ার জনসভায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা একাত্তরে যুদ্ধ করেননি। তাঁরা এপার-ওপার করেছেন। বিএনপিই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের দল।
এই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি এবং তার নেত্রী খালেদা জিয়া এখন নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীদের নিয়ে আরেকটি যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন।
অন্যদের কথা না হয় বাদই দিলাম, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁরা একাত্তরে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন তাঁরা কি তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দেবেন? এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করতে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে তার জামায়াত বা অন্যান্য মৌলবাদী শক্তির সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে। তাই বলে তিনি ইতিহাসের সত্য উল্টে দিতে পারেন না। রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারেন না।
একাত্তর সালে এ দেশে একটি যুদ্ধ হয়েছিল— মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।
নানা দুর্বলতা-ব্যর্থতা সত্ত্বেও সেই যুদ্ধে আওয়ামী লীগই নেতৃত্ব দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার পরিচালিত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে। আর সেই যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী, তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ভূমিকা কী ছিল, তা সবার জানা। তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি, পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধও সংঘটিত করেছে। সে সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী।
আর এই সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের নিয়েই গঠিত হয়েছিল আলবদর-আলশামস বাহিনী, যারা বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপিসহ অনেক পাকিস্তানপন্থী দল। আজ পাকিস্তানিরা যখন একাত্তরের ভুলের জন্য অনুতপ্ত, তখন খালেদা জিয়া সেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।
খালেদা জিয়া যখন এসব কথা বলছেন, তখন কি তাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের কথা একবারও মনে পড়েনি? জিয়া সেদিন কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন—আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে, না রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে? মুক্তিযুদ্ধে যে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, তাঁরা সবাই মুজিবনগর সরকার তথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে যুদ্ধ করেছেন।
শাসক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেসব ভুল ও অন্যায় করেছে, আমরা তার সমালোচনা করব। প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে বিচারও দাবি করব। তাই বলে রাজাকারকে তো বিএনপির নেত্রী মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানাতে পারেন না। খালেদা জিয়া আমাদের কথা বিশ্বাস না করলে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিনকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
জিজ্ঞেস করতে পারেন শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনকেও। এমনকি তিনি পড়ে দেখতে পারেন তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের সেই বিখ্যাত লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধটিও, যেখানে জিয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা রাজনীতিতে শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিহার করার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি যে অন্য একজনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, সেটি কোন শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে? আমরা রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসুক, তা চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।