আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে সব কিছু মনে রাখবেন!!

আপনি আপনার চিরুনী কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না, দরজার চাবি যে বাসায় ঢুকে কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না, এক রুম থেকে আরেক রুমে এসেছেন কিছু নেবার জন্য কিন্তু কি নেবার জন্য এসেছেন আর মনে নাই.. এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আমরা প্রায়শই হয়ে থাকি। কেউ কেউ বলে থাকেন আমার মেধা কম, যা পড়ি সব ভুলে যাই, তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। হ্য়তো অনেকের অভ্যাস, পরিবেশ, প্রতিবেশ, অধ্যবসায়, মনোযোগ প্রভৃতি কারনে মুখস্ত করার প্রবণতা বেশি। কোন কিছু মুখস্ত করা বা মস্তিস্কে কপি/ পেষ্ট করার জন্য যে পূর্বশর্ত রয়েছে তা হল মনোযোগ কোন কিছু মনে রাখতে গেলে অবশ্যই তার প্রতি আপনাকে মনোযোগী হতে হবে। আর আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আপনাকে অনুশীলন করতে হবে।

আজ আপনাদের জন্য একটি ট্রেইনিং উপস্থাপন করব- কিভাবে সব কিছু মনে রাখবেন ব্রেইন আমাদের সবারই আছে, কিন্তু সমস্যা হলো আমরা সবাই এ জিনিসটার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত নই, আমাদের মস্তিস্ক আমাদের জন্য অসীম তথ্য ধারনের ক্ষমতা রাখে এবং ধারন করে, আমরা এর খুব ক্ষুদ্র অংশ্যই সঠিক কাজে ব্যাবহার করি। মানুষের সফলতার একটাই গোপন রহস্য সেটা হলো ‘সচেতনতার সাথে কঠোর অনুশীলন’ আমরা বীজ রোপন ছাড়া গাছের আশা করতে পারি না, আগাছা আশা করতে পারি। মার্ক টোয়েন বলেছিলেন “সবাই কেবল কপালের দোষ দেয়, কেউ এটার পরিবর্তনে কিছু করে না” আসলে আমরা অনেকে হয়তো মস্তিস্কের সঠিক ব্যাবহার করতে চাই.. কিন্তু উপায় জানি না। আসুন ভুমিকা ছেড়ে শুরু করি… আচ্ছা বলুন তো ট্রাফিক সিগনালের সবচেয়ে উপরে কোন লাইট টি থাকে? সবুজ নাকি লাল? মনে করুন আপনি একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় বসে আছেন এবং আপনাকে সঠিক উত্তরটিই দিতে হবে – লাল নাকি সবুজ? জানি, খুব কমই আপনারা উত্তরটি সঠিক ভাবে দিতে পারবেন। আমরা সবসময় রাস্তার সিগনাল গুলো দেখি কিন্তু এখানেও যে ব্যাপার কাজ করে সেটা হলো মনোযোগ আমরা আসলে সব কিছু দেখি কিন্তু লক্ষ্য করি না।

ট্রাফিক সিগনালে লাল সবসময় উপরে থাকে এবং সবুজ থাকে সবার নিচে..আর হলুদ বলার অপেক্ষা রাখেনা মাঝখানে থাকে। আরেকটা প্রশ্ন : আচ্ছা বলুন তো আমাদের দশ টাকার নোটে কোন কোন স্থাপনার ছবি আছে যেকোন একটা বলতে পারলে আপনি পাশ। আমরা দশ টাকার নোট সব সময় ব্যাবহার করি কিন্তু লক্ষ্য করি না যে আসলে কি কি আছে এতে। দশ টাকার নোটে একপাশে থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, অপর পাশে জাতীয় সংসদ ভবন। আসুন দেখি ব্রেন কিভাবে ঘটনা/স্মৃতি সংরক্ষন করে আমাদের ব্রেন আমাদের চোখে যা স্বাভাবিক সে রকম কিছু ধারন করলেও পর্যাপ্ত গুরুত্ব না পেলে মুছে দেয়।

সাধারনত অস্বাভাবিক কিছু ব্রেনকে বেশি আলোড়িত করে এবং তা স্থায়ী সংরক্ষন সম্ভব হয়। আপনি আপনার ছোট বেলার কোন একটা দুর্ঘটনা,মজার, অথবা মধুর স্মৃতির কথা ভাবুন দেখবেন আপনার চোখের সামনে পরিস্কার ভেসে উঠছে সেই ঘটনা, কিন্তু আপনি যদি কাল দুপুরে কি দিয়ে ভাত খেলেন মনে করতে চান হোচট খেতে হবে কারন এটা একটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। একারনেই আমরা কোন কিছু চাবি,চিরুনী ইত্যাদি খুঁজে মরি কারন আমরা যখন এগুলো নিয়ে কাজ করি তখন এগুলোর দিকে গুরুত্ব দিই না। আপনার ব্রেনকে একটু টাইট দিলেই (প্রশিক্ষন) দিলেই সব মনে করতে পারবেন যে কোন কবিতা, নোট, আর্টিকেল হুবহু বলে দিতে পারবেন এমন কি অংকের ক্যালকুলেশন আপনি ক্যালকুলেটরের থেকে দ্রুত করতে পারবেন। মনে কইরেন না এই পুষ্ট পরার সাথে সাথেই সব পারবেন।

আপনাকে প্রচুর সচেতনতার সাথে অনুশীলন করতে হবে। একটি প্রশিক্ষিত ব্রেন কোন কিছু ভোলে না। আপনাকে যেটা করতে হবে আপনার ব্রেনের উপর আপনাকে আস্থা রাখতে হবে। তাহলেই প্রয়োজনে সে সাড়া দেবেই। মনোযোগ দিয়ে তো সব কিছু মস্তিস্কে ঢুকানো হলো এখন তা প্রয়োজনে বের করব কেমন করে? যারা প্রোগামার তারা কোন একটি মডুইউল ফাংশনকে যেভাবে কল করে ব্রেন থেকে তথ্য অনেকটা সেভাবে আমরা কল করব।

ননটেকীদের বলছি আপনি একটি ড্রয়ারে যদি লেবেল দিয়ে ফাইল সাজিয়ে রাখেন তাহলে লেবেল দেখেই আপনি প্রয়োজনীয় ফাইল টি বের করতে পারবেন। আমরা আমাদের ব্রেন থেকে অনেকটা সেভাবেই তথ্য বের করব। প্রথম অধ্যায়ে যাবার আগে, অনুশীলন -১ এখানে ১৫ টি বিভিন্ন জিনিসের নাম দেয়া আছে- আপনারা মুখস্ত করার চেষ্টা করুন- বই, অ্যাসট্রে,গরু, জামা, দিয়াশলাই, শেভিং রেজর, আপেল, মানি ব্যাগ, কড়াই, ঘড়ি, চশমা, দরজার নব, বোতল, সোফা,জীবানু। মুখস্ত শেষে একটি কাগজে না দেখে লিখুন এবং অবশ্যই যেভাবে সাজানো আছে সেভাবে, দেখুন তো কয়টি উত্তর সঠিক হয়েছে, প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ২ নম্বর, ৩০ এর মধ্যে কত পেলেন দেখুন। বিঃদ্রঃ লেসনের কোন অংশ স্কিপ না করার জন্য অনুরোধ করছি।

প্রথম অধ্যায় – লিংক সিস্টেম বা গিট্টু পদ্ধতি “একজন মানুষের আসল সম্পদ হলো তার স্মৃতি শক্তি, যার থাকার কারনে সে অনেক ধনী, না থাকার কারনে সে গরীব” — আলেক্সান্ডার স্মিথ লিংক মানে হলো সংযোগ সাধন। আপনারা এখন থেকে সব কিছু এমন ভাবে মুখস্ত করতে পারবেন যা আগে সম্ভব হয়নি। কারন আপনার মস্তিস্ক প্রশিক্ষিত হতে যাচ্ছে। আসল মুখস্তকরনের আগে আমাকে যে কথা বলতেই হচ্ছে তা হলো- একটি প্রশিক্ষিত মস্তিস্ক সব কিছু ধারন করবে মানসিক ছবি ধারনকে কেন্দ্র করে। আর আপনি কোন কিছু মুখস্ত করার আগে যদি অস্বাভাবিক ছবি কল্পনা করেন সেটা হতে পারে হাস্যকর অথবা ভাংচুর টাইপের, হরর যা খুশি কিন্তু শর্ত হলো স্বাভাবিক হইতে পারবে না।

আমি আপনাদের হাস্যকর কল্পনা করে দেখাবো। স্বাভাবিক ভাবে হাত দিয়া খাইলে কল্পনায় খাইতে হবে পা দিয়া এই টাইপের। আপনি যদি এ কাজটি অর্থাৎ কল্পনা ঠিক মতো করতে পারেন তাইলে আপনার ৫০% মুখস্ত কমপ্লিট। এখন কাজ হলো খালি লিংক বা সংযোগ করা- উপরের অনুশীলনী ১ থেকে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি - বই, অ্যাসট্রে,গরু, জামা, দিয়াশলাই, শেভিং রেজর, আপেল, মানি ব্যাগ, কড়াই, ঘড়ি, চশমা, দরজার নব, বোতল, সোফা,জীবানু। প্রথমে আছে ‘বই’ মনে মনে একটা বইয়ের ছবি কল্পনা করুন শুধু ‘বই’ শব্দটার দিকে খেয়াল দিবেন না বইয়ের ছবি কল্পনার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিন হতে পারে এটা আপনার কোনো পছন্দের বই, তবে যা কল্পনা করবেন অবশ্যই অনেক বড় করে অস্বাভাবিক করে কল্পনা করবেন যেমন চারতলা বাড়ি সমান বই।

এখন পড়ের শব্দ হলো অ্যাসট্রে এখন আপনার কাজ হলো বইয়ের সাথে অ্যাসট্রের সংযোগ ঘটানো কল্পনা করুন চারতলা সমান বইয়ের প্রতি পাতায় হাজার হাজার অ্যাসট্রে তা দিয়া খালি কলের চিমনির মত ধুয়া উড়তেছে। যা কল্পনা করবেন অবশ্যই বেশি বেশি। যদিও আমার লেখা অনেক আপনার কল্পনা করতে লাগবে এক সেকেন্ডের শত ভাগের এক ভাগ সময়ে তার পরের শব্দ গরু, এখন আপনাকে গরুর সাথে অ্যাসট্রের সংযোগ করতে হবে, কল্পনা করুন একটি হাতির সমান গরু চুরুট খেয়ে অ্যাস ফেলছে অ্যাসট্রেতে। গরুর পরে জামা- কল্পনা করুন একটি হাতির সমান গরু, রঙচঙা জামা গায়ে দাত কেলিয়ে ফটোসেশন করছে.. জামার পরে দিয়াশলাই- কল্পনা করুন একটা ইয়া বড় দিয়াশলাইয়ের বাক্সে হাজার হাজার জামা রাখা আছে.. দিয়াশলাইয়ের পরে শেভিং রেজর, শেভিং রেজরের পরে আপেল, আপেলের পরে মানি ব্যাগ, …….. জীবানু আপনি আপনার নিজের মত করে কল্পনা করুন। মনে রাখবেন যাই কল্পনা করুন না কেন তা যেন অনেক বড় বা বেশি এবং অস্বাভাবিক হয় মুখস্ত শেষে যখন মনে করবেন তখন যে সমস্যা হয় তা হল প্রথম শব্দ কি ছিল আর প্রথম শব্দ মনে থাকলেও লিষ্ট কখন শেষ হইলো এইটা বুঝা যায় না।

প্রথম যে শব্দ তার সাথে আপনার সাথে গিট্টু লাগাই দিবেন তাইলেই হয়া গেলো। এইবার লাষ্টের জীবানুর সাথে ফাষ্টের বইয়ের গিট্টু লাগাই দেন, তাইলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার লিষ্ট শেষ হইছে। (আকাশ_পাগলার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে) এইটা যেহেতু গিট্টু পদ্ধতি, তাই আপনাকে ৪/৫ এরকম সিরিয়াল মনে রাখতে হবে না, আপনি যেটা করবেন তা হলো খালি একটার পর একটা গিট্টু লাগাবেন, আসেন বিস্তারিত দেখাই… প্রথমে আছে বই আপনি বইয়ের সাথে আপনার নিজের গিট্টু লাগান, বই এর পর অ্যাসট্রে, এর সাথে বই এর গিট্টু লাগান, তারপর গরু, এর সাথে অ্যাসট্রের গিট্টু লাগেন বইকে নিয়া আর কল্পনার দরকার নাই, গরুর পর জামা, শুধু জামা আর গরুতে গিট্টু লাগান, তারপর দিয়াশলাই,তারপর শেভিং রেজর,,,,,,,,,জীবানু থাকে শেষে এর সাথে আবার প্রথমের বইয়ের গিট্টু লাগান। এভাবে যে শব্দটা নতুন ঠিক তার আগের শব্দটার সাথে গিট্টু লাগাবেন। মনে করার সময়, এমন হতে পারে যে প্রথমে কি ছিল আপনি ভুইলা গেছেন তাইলে আপনি আপনার নিজের কথা মনে করেন দেখবেন বইয়ের কথা মনে পড়ছে, এবার বইয়ের কথা চিন্তা করেন, অ্যাসট্রে মনে পড়ে গেল, অ্যাসট্রের কথা চিন্তা করতে গেলেই গরু আসল কিনা কন? গরুর পর আসল জামা, এই তো শুরু হয়া গেল বায়োস্কোপের খেলা… জামার পরে এই তো আইল দিয়াশলাই, আইল আইল আইয়া পড়ল শেভিং রেজর, তারপরেতে দেখা গেল একটি আপেল….চইলা আসল এক গাদা জীবানু, তারপরেতে? তারপরেতে আসল গিয়া বই, -বই? বইতো প্রথমেই দেখছি B:-) ।

তারমাইনে আপনার লিষ্ট শেষ The End. সব শেষে সিরিয়ালি শব্দগুলান একটা কাগজে মুখস্ত লিখে ফেলেন, দেখেন তো এইবার ৩০ এ কত পাইছেন (২৮ এর নিচে পাইলে ফেল) প্রথম প্রথম মনে করতে একটু সময় লাগবে, ঠিকমত প্রাকটিস করলে আপনার মুখ থেকে বাইরাইতে যা দেরী… এইটা অনেক টা টাইপিং প্রাকটিসের মতো কি-বোর্ড চিনতে যতটুকু সময় তারপর প্রাকটিস করতে থাকলে গতি এমনিতে বেড়ে যায় আজ এ পর্যন্তই পরের বার থাকবে- গজাল পদ্ধতি- সিরিয়ালি মনে রাখার অব্যর্থ পদ্ধতি, এমনকি আপনি উল্টা দিক দিয়া সিরিয়ালি কোনো ভূল ছাড়াই বলতে পারবেন। র‌্যানডমলি নাম্বার উল্লেখ করলে সে নাম্বারে কোন শব্দ আছে আপনি বলে দিতে পারবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.