আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্যারালাইসিস রোগীকে মাটির গর্তে পুতে কবিরাজের অদ্ভুত চিকিৎসা !

আইরিন বিবি। স্বামি জহির উদ্দিন সরকার প্রায় ৫০ বছর আগে মারা গেছেন। আইরিন বিবির বয়স কত তা নিশ্চিত নন কেউই। স্বজনদের ধারনা প্রায় ৯০বছর বয়স হয়েছে তার। ৩ মেয়ে ১ ছেলে সন্তানের জননী আয়রিন বিবি।

কৃষি শ্রমিক ছেলে মংলা সরকার তার মা’র দেখাশুনা করেন। আইরিন বিবির বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার পারনাটাবাড়ী গ্রামে। গত দুই সপ্তাহ যাবত আইরিন বিবি প্যারালাইসিস রোগে শয্যাশায়ি। গ্রামের মানুষের ভাষায় তিনি নুলা রোগে আক্রান্ত। তার শারীরিক অবস্থার কথা শুনে স্বপন মিয়া নামের এক কবিরাজ চিকিৎসা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

কবিরাজ স্বপন মিয়া মংলা সরকারের পুত্রবধূ আজিরন খাতুনের ভাতিজা। গত বুধবার সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩য় দিনের মত কবিরাজের অদ্ভুদ চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনার মাঝখানে গর্ত করে রোগীকে বুক পর্যন্ত পুতে রাখা হয়। পাশে রাখা হয় লোহার তৈরী ছুরি, দা, কোদাল, ডালা-চালুনসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র। সেখানে একটি ডালার ভিতর ধান, দুবলা ও ফুল রাখা হয়েছে।

রোগীকে মাটিতে পুতে রাখার আগে এসব দিয়ে এক ধরনের পূজা অর্চনা করা হয়। রোগীর চারপাশে কাপড় দিয়ে ঘর তৈরী করে ঢেকে দেয়া হয়। বাহিরে শত শত উৎসুক মানুষের সমাগম। ঢোলের তালে জারী গান গায় কবিরাজ স্বপন মিয়া। নেমে যাও নেমে যাও, নুলার বাও, ভাটির দিকে নেমে যাও....।

মা ফাতেমার দোহায় লাগে নেমে যাও....। এছাড়া আরও বিভিন্ন অশ¬ীল কথা দিয়ে তৈরী গানের এক চরন কবিরাজ বলে দেন। পাশে বসা পাঁচ দোহার বলে পরিচিত যুবকেরা সাথে সাথে ওই চরনগুলো বলে গান করেন। ঢোলের শব্দ আর গানের তালে তালে কহিনুর, রাজিয়া, ফেরদৌসী, সাথি সহ গ্রামের স্কুল পড়–য়া ৯ কন্যা শিশু চারপাশ ঘুরতে থাকে। এ ভাবেই ৭পাক ঘুরে গান শেষে ৯ কন্যার দলনেতা কাপড়ের ঘরটিতে ঢুকে হাতে থাকা ঝাড়– দিয়ে রোগীর শরীরে ঝাড়তে থাকে।

একই সাথে মন্ত্র পাঠ করে কবিরাজ রোগীর শরীরে ঝাড়-ফুক দেয়। এরপর কবিরাজ বাম পা দিয়ে রোগীর মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত স্পর্শ করেন। এভাবেই প্রতিদিন এশার নামাজের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে স্বপন কবিরাজের অদ্ভুদ চিকিৎসা। কবিরাজ স্বপন মিয়াকে চিকিৎসাকাজে উৎসাহ যোগালে সে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়। চিকিৎসাকাজের বিরতী দিয়ে স্বপন মিয়া (২৮) জানান, ধুনট উপজেলার আড়কাটিয়া গ্রামে তার বাড়ি।

বাবা মমতাজ আলী শেখ। পেশায় গোশত বিক্রেতা (কসাই) ও কৃষি শ্রমিকদাবী। ৫ বছর আগে পাশ্ববর্তি কাজিপুর উপজেলার মেঘাই গ্রামের খুদু হাওয়ালদার তার ওস্তাদ। দীর্ঘদিন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এ পদ্ধতিতে ১০৫জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বপন মিয়া জানায়, কন্যা শিশুরা সতি নারী।

সতি নারী দিয়ে রোগীকে ঝাড়তে হয়। ৭দিন এভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। ৩দিন মাটিতে পুতে রেখে, পরবর্তিতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঝাড়-ফুঁক ও গাছান্ত ঔষধ দেয়া হবে। তার পারিশ্রমিক কত জানতে চাইলে স্বপন মিয়া বলেন, রোগী সুস্থ্য হবার পরে যা দিবেন, আমি তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। তবে এ চিকিৎসায় রোগীর সুস্থ্য হওয়ার বিষয়ে কোন গ্যারান্টি নেই।

মংলা সরকার বলেন, মা’র বয়স হইছে। গ্রামের লোকরা কইছে এটা নুলা রোগ। কবিরাজি অসুধ (ঔষধ) ছাড়া ভাল হবে না। কবিরাজ ৪ হাজার টাকা চাইছে, তাক এক হাজার টাকা আগাম দিছি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিকিৎসার কাজে কবিরাজের কথামত অনেককেই কাজ করতে হয়।

কিন্তু শিশুদের নাচিয়ে বাদ্যের তালে জারি গান করে এ চিকিৎসা করেন। গানের মধ্যে কবিরাজ কখনো আল¬াহ, কখনো মা ফাতেমা, আবার কখনো কালির মাতার নাম সহ সব অশ¬ীল কথা বলা হয়। বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হক বলেন, কবিরাজের এই অদ্ভুদ চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নয়। প্যারালাইসিস রোগীর জন্য আধুনিক অনেক চিকিৎসা রয়েছে। এজন্য রোগীদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে যোগাযোগ করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আতাউল গনি বলেন, বিষয়টি অমানবিক, অপচিকিৎসা এবং বেআইনী ও দন্ডনীয় অপরাধ। ঘটনার সত্যতা মিললে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।