প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ততা হচ্ছে মানুষের শরীরের কোনো অংশের মাংসপেশির কর্মক্ষমতা হারানো। মাংসপেশি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাড়াচড়া করিয়ে থাকে, আর যদি ওই অংশের মাংসপেশির কর্মক্ষমতা হারায় তখন রোগী শরীরের ওই অংশের নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারায়। অনেক সময় ওই অংশের বোধ বা অনুভূতি শক্তিও হারিয়ে ফেলে।
প্যারালাইসিস যে কোনো বয়সে, যে কোনো কারণে যদি হয়েই যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আমাদের সবার উচিত এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
প্যারালাইসিস রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার মাধ্যমে পুনর্বাসন তথা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, প্যারালাইসিসের প্রধান কারণই হচ্ছে রোগীর স্নায়ু বা নার্ভাস সিস্টেম অকেজো হওয়া। স্নায়ুই মূলত মানুষের মাংসপেশিতে এক ধরনের বৈদ্যুতিক শক্তি প্রেরণ করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আর যখনই স্নায়ু বা নার্ভাস সিস্টেম অকেজো হয় তখন রোগী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—ব্রেইন স্ট্রোক, স্পাইনালকর্ড ইনজুরি, নার্ভ ইনজুরি, এমায়েট্রপিক লেটেরাল স্ক্লেরোসিস, বটুলিজিম যা এক ধরনের টক্সিসিটি, মালটিপল স্ক্লেরোসিস, জিবিএস। তাছাড়া মাংসপেশির রোগ মাসকুলার ডেসট্রপি হলেও প্যারালাইসিস হয়ে থাকে।
শিশুদের পলিও রোগ, সেরিব্রাল পলসি উল্লেখযোগ্য।
যেহেতু প্যারালাইসিস বা প্রক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে, তাই সর্বপ্রথম আমাদের খেয়াল রাখতে হবে রোগী কি কারণে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলো। হঠাত্ করে প্যারালাইসিস হলেও রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে, তা না হলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের দেশে প্যারালাইসিসের একটি বড় কারণ হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোক।
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে বা রক্তনালী ছিড়ে গেলে স্ট্রোক হয়ে থাকে। তার জন্য কিছু কারণ দায়ী। যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, হাইপোসাইথেমিয়া, থ্রম্বসাইথেমিয়া, আঘাত পেলে, মদ্যপান, জণ্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ, বংশগত। তাই স্ট্রোক প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ধূমপান বা মাদকদ্রব্য পরিহার করতে হবে। নিয়মিত গোসল, হাঁটা চলাফেরা করতে হবে। হঠাত্ উত্তেজিত হওয়া যাবে না। পরিমিত সুষম খাবার খেতে হবে, খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, ফার্স্টফুড পরিহার করতে হবে। পরিমিত ঘুমাতে হবে।
শিশুদের প্যারালাইসিসের অন্যতম কারণ পলিও। তাই সব শিশুকে পলিও টিকা খাওয়ানো উচিত। এ ব্যাপারে শিশুর অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
প্যারালাইসিসের চিকিত্সার ক্ষেত্রে একিউট বা ক্ষণস্থায়ী অবস্থা এবং ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা এই দু’ভাগে চিকিত্সা দেয়া হয়ে থাকে। একিউট স্টেজে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়।
সেক্ষেত্রে চিকিত্সকরা প্যারালাইসিসের কারণ নির্ণয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অনেক সময় রোগীকে লাইফ সাপোর্ট দিতে হয়। আর ক্রমিক স্টেজে রোগীর দেখা যায় শরীরের একপাশ প্যারালাইসিস বা যে কোনো একহাত বা এক পা বা দুই পা বা চার হাত-পা প্যারালাইসিসে আক্রন্ত হতে পারে। প্যারালাইসিস রোগীকে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা চালিয়ে যেতে হবে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার মাধ্যমে রোগীকে পুনর্বাসন করা সম্ভব, তার জন্য প্রথমদিন থেকেই ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা চালিয়ে যেতে হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিত্সায় চিকিত্সক বিভিন্ন কৌশলগত ব্যায়াম করিয়ে থাকেন, পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ইলেক্ট্রোথেরাপি, প্রয়োজনে অর্থসিস বা প্রসথেসিসের মাধ্যমে চিকিত্সা দিয়ে থাকেন।
লেখক : চেয়ারম্যান, ডিপিআরসি
প্রবাল হাউজিং, রিং রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।