অদ্ভুত পৃথিবী মহাখালীর একটি হোটেলে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, মান-অভিমানের একপর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেন স্বামী (৩০)। হোটেলের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। আর তাতেই বিপাকে পড়েন হোটেলের কর্মকর্তা ছিফাত উল্লাহ ও মো. মিলন।
গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুই কর্মকর্তা হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের কর্তব্যরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক পীযূষকান্তি মিত্র ওই যুবকের বিষয়ে প্রতিবেদন লিখতে তাঁদের কাছ থেকে ঘুষ চেয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই চিকিৎসক তাঁদের বলেছেন, ‘এ যুবক বাঁচবে না।
মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯৮ পারসেন্ট (শতাংশ)। এটি পুলিশি মামলা। তবে কলম আমার হাতে। যা লিখব, তা-ই সই। অতএব আমার সাথে কনট্রাক্ট করেন।
পুলিশি ঝামেলায় যাতে না পড়েন, সেভাবেই প্রতিবেদন লিখে দেব। ’
অভিযোগ শোনার পর পরিচয় গোপন করে অভিযোগকারীদের সঙ্গে হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে যান এই প্রতিবেদক। হোটেল কর্মকর্তারা প্রতিবেদককে ভাই পরিচয় দিয়ে চিকিৎসক পীযূষকান্তির সঙ্গে কথা বলেন। তখন পীযূষ বলেন, ‘যে রকম আছে সে রকম লিখব। কোনো তদবিরে-টতবিরে কাজ হবে না।
এটি পুলিশি কেস। ঝামেলা আছে। ’
এরপর চিকিৎসক মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে হাসপাতালের বারান্দায় রাখা ওই যুবকের পাশে যান। তিনি মুঠোফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন, ‘তারা জানে না, আমি মহাখালীতে থাকি। মহাখালীর সব হোটেলে (অশ্লীল শব্দ) চলে।
এ লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি হমিসাইডাল (হত্যাজনিত)। ’ এরপর তিনি মুঠোফোন নিয়ে বারান্দার একটি কক্ষে চলে যান।
ওই কক্ষ থেকে ফিরে এসে চিকিৎসক পীযূষ ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে করতে বলেন, ‘আমি এ কাজের এসি আকরাম। এ রোগী বাঁচবে না।
৯৮ পারসেন্ট মৃত্যুর সম্ভাবনা। ’ এরপর তিনি দুই হোটেল কর্মকর্তার কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চান। মো. মিলন ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন। চিকিৎসক তা লিখেও নিচ্ছিলেন। মিলন বলছিলেন, ‘যুবক নিজেই গলায় ফাঁস দিয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী দাবি করেছেন।
স্ত্রীর চিৎকার-চেঁচামেচিতেই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। ’ প্রত্যুত্তরে চিকিৎসক বলেন, ‘ফালতু কথা। তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই হোটেলগুলোতে এ কাজ চলে। ওরা ভুয়া স্বামী-স্ত্রী।
’
পরে চিকিৎসক পীযূষ এই প্রতিবেদককে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বলেন, ‘আসলে এগুলো টাকা-পয়সা ছাড়া হয় না। ’ এ কথা বলে তিনি আবারও বের হয়ে যান। পরে এই প্রতিবেদকসহ দুই হোটেল কর্মকর্তাকে নিয়ে আবার কক্ষে ঢোকেন। কিন্তু পরক্ষণেই হোটেল কর্মকর্তা ছিফাত উল্লাহ ছাড়া বাকি দুজনকে বের হয়ে যেতে বলেন।
চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে ছিফাত উল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন, “সাথে যা টাকা-পয়সা আছে দেন।
আপনাকে ১০ মিনিট সময় দিলাম। দেরি হয়ে গেলে কাজ হবে না”। ’
সঙ্গী মিলনের পরামর্শে ছিফাত উল্লাহ আবার চিকিৎসকের কাছে যান। বের হয়ে জানান, ‘ডাক্তার ১০ হাজার টাকা চেয়েছেন। ’
হোটেল কর্মকর্তা ছিফাত উল্লাহর সঙ্গে চিকিৎসক পীযূষের কথোপকথনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর বলা অধিকাংশ কথাই রেকর্ড করা আছে।
কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার নাম ডা. পীযূষ। আমি সারা রাত ডিউটিতে থাকব। সকাল পর্যন্ত আছি। যা করার এ সময়ের মধ্যে করতে হবে। ’ তাঁর মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি তা দেননি।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে এ প্রতিবেদকসহ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন এমন পাঁচজন সাংবাদিক ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডা. পীযূষকান্তি মিত্রের কাছে যান। এই প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দেওয়া মাত্র তিনি বলেন, ‘আপনি সাংবাদিকদের কী বলছেন?’ ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে—বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই প্রতিবেদককে তেড়ে আসেন, গালমন্দ শুরু করেন। সব সাংবাদিক ও উপস্থিত রোগীদের সামনে তিনি এই প্রতিবেদককে বলতে থাকেন, ‘তুই ওয়ার্ড থেকে বের হ। তোর মতো অনেক সাংবাদিক আমি বাংলাদেশের মাটিতে পুঁইতা ফেলছি। ’ এই প্রতিবেদক তাঁকে শান্ত ও ভালো ব্যবহার করার অনুরোধ জানালে তিনি তেড়ে এসে শরীরে কয়েকবার ধাক্কা দেন।
উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকেন, ‘যা, গিয়ে ডিরেক্টররে বল। দেখি, সে কী করে। আমি এখানকার ডাক্তার এখানেই থাকব। ’ তাঁকে শান্ত করতে গেলে তিনি অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন।
এরপর সাংবাদিকেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে যান।
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মল্লিক বলেন, ‘ঘুষ চাওয়া ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ওই চিকিৎসককে ডাকা হবে। তবে যারা দুর্ব্যবহার করে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, তা বোঝা যায়। ’
সূত্র জানায়, পীযূষ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি ঢাকা মেডিকেলে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক।
যুবকের জ্ঞান ফিরেছে: গত সোমবার সকালে ফাঁস দেওয়া ওই যুবকের জ্ঞান ফিরে আসে।
ওই দিন দুপুরে এই প্রতিবেদক গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে যুবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিই ওরে (স্ত্রী) ভয় দেখানোর জন্য করছি। ফাঁস লাইগা গেছে। ’
জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ‘তাঁরা স্বামী-স্ত্রী, তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ’
ফাঁস দেওয়া যুবকের বাড়ি বরিশাল। তাঁর স্ত্রীর বাড়ি নেত্রকোনা।
ঘটনার পর স্ত্রীকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাঁদের অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলে স্ত্রীকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
সূত্র ঃ প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/news/203137 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।