রমজান মাসে বিক্রির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রতি কেজি চিনির খুচরা দর বেঁধে দিয়েছে ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ডিলারদের চিনি দিচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। এসব চিনি দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত।
আবার যে দরে চিনি করপোরেশন ডিলারদের চিনি দিচ্ছে, বাজারে খুচরা দোকানে তার চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এখন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়।
করপোরেশন অবশ্য ডিলারদের কাছে আমদানি করা পরিশোধিত চিনি বিক্রি করছে ৪১ টাকা কেজি দরে।
ডিলারদের অভিযোগ, বেশি দাম রাখার মাধ্যমে ডিলারদের চিনি তুলতে নিরুৎসাহিত করছে করপোরেশন।
বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিনি করপোরেশন প্রতি কেজি চিনির দর ৫০ টাকা ধরে রেখেছে বেসরকারি মিলমালিকদের চিনি বিক্রি হওয়ার জন্য, দেশীয় চিনিকলগুলো ধ্বংস করার জন্য। ’
করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বছর খানেক ধরেই করপোরেশনের চিনি বিক্রি হচ্ছিল না। সে কারণে করপোরেশন চিনি রপ্তানি শুরু করেছে।
চিনি রপ্তানি হলে প্রতি কেজির জন্য ৫৩ টাকা করে পাচ্ছে করপোরেশন। ডিলারদের কাছে বিক্রির চেয়ে একেই বেশি লাভজনক মনে করছে করপোরেশন। সে কারণে দাম কমানো হয়নি, যেন ডিলাররা চিনি না তোলেন।
জানতে চাইলে চিনি করপোশেনের সচিব আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সরকার যে চিনির দর বেঁধে দিয়েছে, তা করপোরেশনের জন্য নয়। বাজারে এখন খুচরা পর্যায়ে চিনির কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা জানালে তিনি বলেন, করপোরেশন চিনি না ধরে রাখলে ৪৬ টাকায় চিনি খেতে পারতেন না।
চিনি তুলছেন না ডিলাররা: করপোরেশনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত এক লাখ ১৮ হাজার ১৮০ এবং আমদানি করা ৩৮ হাজার ১৩ টন মোট এক লাখ ৫৬ হাজার ১৯৩ টন চিনি মজুত রয়েছে। কিন্তু দাম বেশি বলে ডিলাররা করপোরেশনের চিনি তুলছেন না।
করপোরেশন সূত্র জানায়, গত ২০ দিনে ডিলাররা দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত কোনো চিনিই নেননি। কারণ, মিলগেটে এ চিনির দর ৪০ থেকে ৪১ টাকা। কিন্তু করপোরেশন তাদের চিনি নিতে বলছে ৫০ টাকায়।
তবে সেনা ও নৌবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি কিছু পরিমাণে চিনি তুলেছে।
অন্যদিকে, গত ২৪ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডিলাররা মাত্র ১৬ টন আমদানি করা চিনি তুলেছেন।
ডিলারদের অভিযোগ, চিনি না তুললে প্রতি টনে ২০০ টাকা করে জামানত থেকে কেটে রাখে করপোরেশন। করপোরেশন একদিকে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছে, আবার জামানত থেকে অর্থ কেটে রাখছে। এটা অন্যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চার হাজার ডিলারের ৪০ কোটি টাকা জামানত করপোরেশনের কাছে দেওয়া আছে। সেই অর্থ ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করে রেখে বছরে ৪০ লাখ টাকা করে সংস্থাটি পাচ্ছে। আবার আমাদের জামানতও কর্তন করছে। চলতি মাসের বরাদ্দসহ গত দেড় বছর মোট চার কোটি টাকার জামানত কর্তন করেছে করপোরেশন। ’
অতীতেও একই কাণ্ড: বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রির নজির এবারই প্রথম দেখায়নি করপোরেশন।
গত বছরও বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনির দর নির্ধারণ করেছিল করপোরেশন। এর ফলে চিনির দর কেজিতে পাঁচ টাকার মতো বেড়ে যায়।
গত বছর জুলাইয়ে রমজানের ঠিক আগমুহূর্তে খুচরা বাজারে যখন প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়, সে সময় বিএসএফআইসি ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি শুরু করে। ফলে হঠাৎ করেই বাজারে চিনির দাম কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় উঠে যায়। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তখন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছিলেন, সরকারকে বিপাকে ফেলতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে কম দামে চিনি বিক্রি করছেন!
পরে অবশ্য সংবাদ সম্মেলন করে শিল্পমন্ত্রী দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত চিনির কেজি ৫০ এবং আমদানি করা চিনি ৫৫ টাকা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তত দিনে ব্যবসা করে নেন বেসরকারি মিলমালিকেরা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।