ভূমিকা
রোম এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে উঠেছি। যাবো ইস্তামবুল, তুরস্ক। দীর্ঘ, একঘেয়ে, কান্তিকর বিমান ভ্রমণ। তবে একঘেয়ে বিমানযাত্রা বিনোমুখী করার নানান ব্যবস্থাও আছে। বিমানে বসে গাদাখানেক সিনেমা দেখা যায় এবং প্রচুর খানাপিনার আয়োজনও থাকে।
বিশেষ করে পিনার আয়োজন বেশ সন্তোষজনক। নানান পদের মদ্যপানের সুব্যবস্থা আছে, বিনামূল্যে।
কথায় আছে, বাঙালি মাগনা পেলে আলকাতরাও খেয়ে ফেলে। আমি আবার জাতে মাতাল এবং বাঙালি- উভয়ই। কাজেই আমার জন্য বিমানযাত্রা - শশুরবাড়িতে যাওয়ার আনন্দের চাইতে কোনো অংশে কম নয়।
বিমান তখনো আকাশে সোজা উড়তে শুরু করেনি, এরই মধ্যে আমি দু বোতল ওয়াইন শেষ করে ফেলেছি। বোতলগুলো সাইজে বেশ ছোট ছিল। অবশ্য নিন্দুকেরা বলবে, বোতলের সাইজ ঠিক আছে, তোমার জিহবাই বরং ...
যাই হোক, আমি হ্যাংলা নই। কেবল হতচ্ছাড়া বোতলগুলো সাইজে ছোট হওয়ার কারণেই সুবেশি বিমানবালাদের কাছ থেকে আমি কিছুক্ষণ পর পর ওয়াইনের বোতল চেয়ে নিচ্ছি।
বিমান তখন মাঝরাস্তায় - এমন সময় এক কাণ্ড হলো।
পেটে অলরেডি ছয় বোতল সুপেয় ওয়াইন নিরাপদে পৌছে আমার সাথে ইস্তামবুলের দিকে যাচ্ছে। সিটের সামনে একটা খাবারের ট্রে আছে, সেখানে আরও চার বোতল মজুদ রয়েছে। তবুও মনে হচ্ছে , দীর্ঘ যাত্রায় এই স্টক খুবই সামান্য, সমুদ্রে আধা লিটার পানির মতো। বিমানবালারা যেরকম ব্যস্ত ভাব দেখাচ্ছে, পরে আবার বোতল চেয়ে পাই কিনা - কে জানে। অনেকণ ধরে বেল বাজাচ্ছি, এয়ারহোস্টেসের দেখা নেই।
ঠিক সেই সময়ই আমার সিটের পাশ দিয়ে দারুন সুবাস ছড়িয়ে জনৈক বিমানবালা যাচ্ছিলেন। আমি লাফ দিয়ে, হাতছুড়ে বলে উঠলাম, এই মেয়ে আমাকে আরও দুটো বোতল দিয়ে যাও। উত্তেজনার চোটে হাতটা বোধহয় বেশি জোরেই ছুড়েছিলাম। হাতের ধাক্কার খাবার ট্রে গেলো উল্টে । ফলে সেখানে মজুদ করে রাখা ওয়াইনের মুখখোলা ছোট ছোট বোতলগুলো নিমিষেই ছিটকে শূণ্যে উড়ে গেল।
আমি ভিজলাম, আমার পাশে বসা শ্রদ্ধেয় বড় ভাই সাইফুল আজিমও ভিজে গেলেন , আশেপাশে আরও জনাচারেক মানুষ বিশুদ্ধ ওয়াইন দিয়ে প্রায় গোছল সেরে ফেললেন। আমি মরমে মরে গেলাম, বিশেষত, এই ওয়াইন ভেজা যাত্রীদের মধ্যে একজন সাচ্চা ধার্মিক মুরুব্বিও ছিলেন, যিনি হালাল খাবার , হালাল খাবার, বলে কিছুক্ষণ আগেও এয়ারহোস্টেসের সাথে ক্যাঁচক্যাচ করছিলেন।
সঙ্গে সঙ্গেই দুইজন বিমানবালা ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে। গভীর মমতা এবং পাতলা টিস্যু পেপার দিয়ে আমাদেরকে গা থেকে ওয়াইন মুছে ফেলার চেষ্টা করলেন।
ঘটনাটা মিটে যাবার কিছুক্ষণ পর - আমি বেল টিপে বিমানবালাকে ডাকলাম।
এরপর তার সঙ্গে আমার নিন্মলিখিত কথপোকথন হলো। সেই কথপোকথনের কোনো প্রকার তাফসির ছাড়া কেবল বাংলা তরজমাটুকু তুলে দিলুম।
- হে তরুনী, অনুগ্রহ করে দু বোতল ওয়াইন দিয়ে যান।
- স্যার, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। ওয়াইন শেষ হয়ে গেছে।
- ও আচ্ছা , খুবই হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা। ঠিক আছে, তাহলে স্কচ হুইস্কি দিন।
- হুইস্কিও নেই স্যার, শেষ।
- বলেন কি? পবিত্র গরু। খুবই আহত হলাম শুনে ।
ঠিক কাছে , একটা কিছু দিন, ভদকা, জিন অথবা রাম ..
- স্যার, আমি অত্যন্ত মর্মাহত এবং লজ্জিত। ভদকা, জিন, রাম- সবই শেষ।
- ঠিকাছে- কিছুই লাগবে না। দয়া করে একটা হ্যানিকেন বিয়ার দিয়ে যান।
- স্যার বিয়ারও শেষ।
এবার আমার মাথা টং করে উঠলো। খেপে গিয়ে বললুম, কি সর্বনাশ। এখনও অর্ধেক পথ আসলাম না, এর মধ্যে সব শেষ । আমার তো মনে হয়, তোমরা ‘লিকুইডিটি’ ক্রাইসিসে ভুগছো। টয়লেটে গিয়ে হয়তো দেখবো পানিও শেষ।
তোমার পাইলটকে বলো প্লেনের তেল শেষ হয়ে গেছে কিনা চেক করে দেখতে ? শেষ হয়ে থাকলেও কোনও সমস্যা নাই, আমাকে একটা প্যারাসুট দিয়ে যাও। নাকি প্যারাসুটও শেষ ?
এবার তরুণী চোখ পাকিয়ে বললো, স্যার, আপনাকে কোনো কিছুই সার্ভ করা যাবে না, ড্রিংক কিংবা প্যারাসুট। কেননা, আপনি আউট অব কন্ট্রোল।
একটি বিখ্যাত এয়ারলাইন্সের সুপ্রশিক্ষিত , অভিজ্ঞ এয়ারহোস্টেট বলেছেন, আমি আউট অব কন্ট্রোল। কথাটা আমি তাৎণিকভাবে মেনে নিলাম।
রূপবতী নারীদের কথা মেনে না নেয়ার মতো মেষবালক আমি নই।
কাজেই এই ভ্রমণকাহিনীতে যা লিখেছি , অনুগ্রহ করে সেইসব লেখাকে কেউ সিরিয়াসলি নেবেন না। এটি একজন ' আউট অব কন্ট্রোল' ব্যক্তির ব্যক্তিগত অনুভূতি। যারা শিল্পসম্মত রুচিকর জীবনবোধের লেখা পড়ে অভ্যস্ত, তাদের জন্য এই ভ্রমণকাহিনীটি স্পর্শ না করার হবেই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যারা পড়েই ফেলবেন ভুল করে, তারা দয়া করে, লেখাগুলোকে সিরিয়াসলি নেবেন না।
এই আমার বিনীত অনুরোধ।
ভবদীয়
আশীফ এন্তাজ রবি
মিরপুর, ঢাকা।
১৭ নভেম্বর ২০১১
(চলিবে, আগামী পর্বে চোখ রাখিতে পারেন। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।