আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হঠাৎ করেই কাজটা করে ফেললাম

'জীবন' হলো এক কাপ গরম চা আর একটা জ্বলন্ত বেনসনের মতো। গরম চা একসময় জুড়িয়ে যাবে, বেনসনের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত কিছুই জানতামনা, আদৌ করবো কি করবোনা, সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলামনা। প্রচণ্ড এক দ্বন্দ্ব কাজ করছিল মনে। বাসায় কাউকে কিছুই জানাইনি।

জানালে সমস্যা হতে পারে, এ চিন্তাটি মাথায় এসেছে। কিন্তু আমি জানি, এটাই উপযুক্ত সময়। কাজেই আর দেরি না করে সেরে ফেললাম কাজটা। এখন আমি অনেক বেশি নিশ্চিন্ত এবং আনন্দিত। পাঠকের মনে হয়তোবা প্রশ্ন জাগতে পারে, কি এমন সেই কাজ যে কাজ হঠাৎ করেই করে ফেলতে হলো আমাকে? হ্যাঁ, সেটা বলার জন্যেই উপরের ভূমিকার অবতারণা।

ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি। গতকাল দুপুরে কাজে ব্যস্ত ছিলাম অনেক। হঠাৎ বন্ধু রাহাত ফোন করলো। বললো, "ই-মেইলে ছবি পাঠিয়েছি, দেখে তাড়াতাড়ি জানান আমাকে; আপনি বললে আমি উনাদের সাথে কথা বলবো এবং এ ব্যাপারে আগাবো"। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম আমি।

যাকে বলে 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট'। তৎক্ষণাত রাহাতকে মনের ইচ্ছাটা জানিয়ে দিলাম। বললাম, আমার পূর্ণ মত আছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন রাহাত ব্যবস্থা নেয়। বিকালে দু'জন রওনা হলাম।

গন্তব্য, বংশাল লায়ন সাইকেল স্টোরের মেইন অফিসে। গিয়ে দেখি রবিন ভাইয়ের অফিসে ৭/৮ জন দাঁড়িয়ে। সামনে রাখা আছে মাউন্টেন বাইকের বিখ্যাত ব্র্যাণ্ড 'ট্রেক' এবং 'মেরিডা' এর ৬ টি বাইক। আমরা ওখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ৪ টা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তাই আর দেরী না করে 'মেরিডা ৩৫০' মডেলেরটা দ্রুত কনফার্ম করলাম।

দাম পড়লো ২৭,০০০ টাকা। মেরিডা ৩৫০ বেশ অনেকদিন থেকেই রাহাত আমাকে বলছিল একটা ভালো মাউন্টেন বাইক কেনার কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা মোটরবাইক ব্যবহার করি। কিন্তু ব্র্যাণ্ডেড মাউন্টেন বাইক কেনার কথা মাথায় কখনো আসেনি। কিন্তু যখন এর উপকারিতা সত্যিই উপলব্ধি করতে পারলাম, তখন আর দেরী না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম একটা ভালো বাইক কেনার।

এই ব্র্যাণ্ডেড বাইকগুলো শুধুমাত্র 'লায়ন' -এর রবিন ভাই-ই বাইরে থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রতি ১/২ মাস পরপর এরকম ৮-১০ টা বাইকের চালান আসে এবং যথারীতি কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। এবারের চালানটা আসার আগে রাহাত বেশ সতর্ক ছিল। তাই রবিন ভাই ফেসবুকে বাইকগুলোর ছবি আপলোড দেওয়ার সাথে সাথেই সে ফোনে বুকিং দিয়ে ফেললো এবং গতকাল সন্ধ্যায় গিয়ে আমরা বাইকগুলো হস্তগত করি। মেরিডা ৫৫০, রাহাত এটা কিনেছে ৩১,০০০ দিয়ে মেরিডা ৬৫০, সাজিদ ভাই এটা কিনলেন ৩৩,৫০০ দিয়ে কেন মাউন্টেন বাইক কিনলাম?: ১. প্রথম কারণটিই হলো ওজন কমানোর জন্যেই এই বাইক কেনা।

সারাদিন ব্রেনের কাজ করতে করতে শারীরিক কোন পরিশ্রম বলতে গেলে হয়ইনা। সুতরাং এই বাইক চালিয়ে আশা করছি খুব দ্রুত বেশ কিছু ওজন কমিয়ে ফেলবো এবং আমার ছোট কদু ভুড়িটা দ্রুত সাইজ হয়ে যাবে। ২. দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন অসহ্য জ্যাম পার হয়ে চলাচল করতে হয়, যা ইদানিং রীতিমতো বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইক চালিয়ে আমি অনেক সময় সেভ করতে পারবো। ৩. একটা হিসাব করে দেখেছি, প্রতিমাসে আমার মোটরসাইকেলের পিছনে তেল এবং মেইনটেন্যান্স খরচ বাবদ প্রায় ৪০০০ টাকা খরচ হয়।

এই টাকার প্রায় পুরোটাই সেভ হবে মাউন্টেন বাইকটি চালিয়ে। ৪. আমরা সবাই মুখে বায়ু দূষণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলি। কিন্তু কয়জন আমরা নিজে সেটা মেনে চলি? প্রতিদিন গাড়ি-মোটর সাইকেলের ধোঁয়া কি পরিমাণ বায়ু দূষণ করছে, তা আমরা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারি। সুতরাং মাউন্টেন বাইকের মতো পরিবেশবান্ধব একটি বাহন চালিয়ে অবশ্যই আমি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবো আশা করছি। বাইকটি কেনার পরেই আমি 'বিডি সাইক্লিস্ট ' গ্রুপের সদস্য হয়ে গিয়েছি।

বর্তমানে বাংলাদেশে এটি সবচাইতে বড় এবং জনপ্রিয় সাইক্লিস্ট গ্রুপ। শুধু সাইক্লিং নয় বরং সামাজিক বন্ধন তৈরিতেও এই গ্রুপটি বড় ভূমিকা পালন করছে। বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপের সামনে একটি বড় ইভেন্ট রয়েছে। আগামী ২৩-২৫ ডিসেম্বর, ২০১১ এই গ্রুপের সদস্যরা বান্দরবান থেকে থানচী পর্যন্ত সাইক্লিং করবেন। আরেকটি কথা উল্লেখ্য যে, এই গ্রুপের সদস্যবৃন্দ সবাই হেলমেট ব্যবহার করেন।

সুতরাং সাইক্লিংও যে একটা সৌন্দর্য্যের প্রতীক হতে পারে, তা তারা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন। শেষের কথা: শরীর সুস্থ্য রাখতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। আর সাইক্লিং-এর মতো চমৎকার একটি ব্যায়ামের কথা অনস্বীকার্য। আজ সকালে অফিসে এলাম সাইক্লিং করেই। বাসায় রেখে এসেছি এ্যত দিনের ব্যবহার করা মোটরবাইকটি।

পিঠের ব্যাক-প্যাকে ছিল গামছা, একসেট কাপড় আর পানির বোতল। অফিসে এসেই ড্রেস বদলে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি এভাবেই সাইক্লিং করে নিজে সুস্থ্য থাকবো এবং অপরকেও উৎসাহ যোগাবো সাইক্লিং করার প্রতি। সবাইকে শুভেচ্ছা। কিছু ব্র্যাণ্ডেড মাউন্টেন বাইকের ওয়েবসাইট: Conor Merida TREK Giant Python Format Moose Fuji ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।