আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খায়রুল কবির খোকনকে কেনই বা গ্রেফতার করা হলো আর কেনই বা ছেড়ে দিল ?? : বাংলাদেশে জাতীয় মিথ্যাচার কবে বন্ধ হবে.??? আ'লীগের গৃহ কোন্দলে লোকমানের মৃত্যুতে শাক দিয়ে মাছ ডাকার আর কত ব্যর্থ চেষ্টা দেখব......????

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" খায়রুল কবির খোকন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। নরসিংদী পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হতে শুরু করছে। এই হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার সংশ্লিষ্টতার তথ্য বের হয়ে আসছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার সেলিম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী ডিবি পুলিশ। এর আগে গত ৯ নভেম্বর টঙ্গী এলাকা থেকে সেলিমকে নরসিংদীর ডিবি পুলিশ আটক করে।

তাকে নরসিংদী নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি ও পরিকল্পনাকারীর সম্পর্কে সে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে সেলিমের জড়িত থাকার তথ্য পায়। গতকাল সেলিমকে মেয়র লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদীর ডিবির ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ মণ্ডল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।

আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সেলিমকে রিমান্ডে এনে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর নরসিংদী ডিবি পুলিশ গোপালগঞ্জস্থ গোপীনাথপুর থেকে লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পেশাদার কিলার টিপ্পন কাজীকে গ্রেফতার করে। সে নরসিংদী পৌর এলাকার কুমিল্লা কলোনীতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের পর পলাতক ছিল।

সেলিম এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নরসিংদী পৌর এলাকার আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবার ভাইঝি জামাই। মোবারকের মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে পুলিশ টঙ্গী থেকে সেলিমকে আটক করে। সে নিজেকে একজন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে মোবা ও নূরুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

ঘটনার এক মাস আগে তারা দেশ ত্যাগ করেন। নরসিংদীর প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতা নূরুল ইসলাম নরসিংদীতে অস্ত্রবাজি ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ আছে। নরসিংদীর তিনবার বিএনপির এমপি মরহুম শামসুদ্দিন আহমেদ এসহাকের পুত্র মাসুদ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি এই নূরুল ইসলাম। এছাড়া মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদেরও একজন নূরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ নেতা মোবা নরসিংদী মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রাজনীতিতে তাদের অবস্থান দুই মেরুতে হলেও আসল পেশা হলো নরসিংদীর কোটি কোটি টাকার মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। কয়েক মাস আগে নরসিংদীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে মোবা ও তার বন্ধু কবির সরকার টেন্ডারের সিডিউল ছিনিয়ে নেন। এই ঘটনায় মামলা হয়। মোবা ও কবির সরকার গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে মেয়র লোকমানকে হত্যার হুমকি দেন মোবা ও কবির সরকার।

কিন্তু এ ব্যাপারে মামলা না করার জন্য মন্ত্রী রাজুর আপনজনের বাধা ছিল। তারপরও মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় মোবা ও কবির সরকার গ্রেফতার হয়। এর পিছনে লোকমানের হাত ছিল বলে মোবা ও কবির সরকার অভিযোগ করেন। নরসিংদী শহর থেকে বড় বড় মাদকের স্পট উচ্ছেদ করে ঈদগাহ্, কবরস্থান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন মেয়র লোকমান।

এই বিষয়টি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম গডফাদার মোবা, নূরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতিপয় নেতা মেনে নিতে পারেনি বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। ঢাকা ও নরসিংদীতে একাধিক বৈঠকে হত্যার বিষয়টি চূড়ান্ত হয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও নরসিংদীতে একাধিক বৈঠকে মেয়র লোকমানকে হত্যা করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সেই বৈঠকে পলাতক মোবা, নূরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকারী যোগাড় ও অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয় মোবা ও নূরুল ইসলামকে। মন্ত্রী রাজুর এক আপনজন ঐ বৈঠকে ছিলেন বলে মেয়র লোকমানের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

নরসিংদীতে রিভলবার উদ্ধার গতকাল সন্ধ্যায় নরসিংদী পৌরসভার ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ থেকে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি অত্যাধুনিক রিভলবার উদ্ধার করে। রিভলবারটিতে ২/১টি গুলি থাকতে পারে বলে পুলিশ জানায়। এই রিভলবারটি দ্বারা কারো ক্ষতি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান। কিছু লোক ঐ আবর্জনা স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঐ সময় তারা অস্ত্রটি দেখে পুলিশকে সংবাদ দেয়।

এলাকাটি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের কমিশনার মানিক মিয়া যাত্রামঞ্চে খুন হন। ঐ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন মেয়র লোকমান হোসেন। তিনি তখন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ নেতা। এই হত্যা মামলা নিয়ে মেয়র লোকমান ও মানিকের পরিবারের মধ্যে ছিল চরম দ্বন্দ্ব বলে এলাকাবাসী জানায়।

নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিন অতিবাহিত হবার পর এখনও পর্যন্ত প্রকৃত কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি’র ইন্সপেক্টর মামুনুর রসিদ মণ্ডল জানান, এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তত্পরতা শুরু করেছি। উদ্ধারকৃত মোটর সাইকেলের সূত্র ধরে প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আশাকরি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এর সুরাহা হবে।

এদিকে লোকমান হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং এর সাথে জড়িত খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল রবিবার নরসিংদী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর পরিষদের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। নরসিংদী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলর এম.এ. দাইয়ান, অনিল ঘোষ, মোবারক হোসেন, কামাল মোল্লা, আজিজুর রহমান আক্তার, দিদারুল ইসলাম ফটো, অ্যাডভোকেট সুলতানা রাজিয়া জুপি, ইয়াসমিন সুলতানা, নার্গিস আক্তার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক ওবায়দুল আজম বলেন, জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনের হত্যাকারীদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, গত শনিবার দুইজন এডিশনাল ডিআইজি নরসিংদীতে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এমপি হিরুর বক্তব্য নরসিংদী সদরের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মোঃ নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক জানিয়েছেন, নরসিংদীর অত্যন্ত জনপ্রিয়, মেয়র লোকমান হোসেন খুনের সাথে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এর থেকে এক চুলও বিচ্যুত হবেন না। এ লক্ষ্যে তিনি লোকমানের পরিবারের পাশে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো লোকমান হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে সাফাই গাননি। আসামিদের পক্ষ্যে সাফাই গাওয়া সংক্রান্ত গতকাল রবিবার দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবরের প্রতি তিনি বলেন, তার বক্তব্য সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। রায়পুরায় প্রতিবাদ সভা লোকমান হোসেন হত্যার প্রতিবাদে এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল রবিবার রায়পুরার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে আয়োজিত এক বিরাট প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুতালিব পাঠান, ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হক, রায়পুরা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা মিলন মাস্টার, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাদেক, ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমেদ দুলু, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক, মোবারক হোসেন, সুবেদার আব্দুল ওয়াহিদ, ওয়াহিদুজ্জামান পলাশ, জালাল মোল্লা প্রমুখ। চরসুবুদ্ধিতে আওয়ামী লীগের সমাবেশ লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত চরসুবুদ্ধি মাদ্রাসা মাঠে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোঃ ইলিয়াছ মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির সরকার, রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাদেক। সভায় লোকমান হত্যার প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয় এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ কয়েকজন নেতাকে জড়িত করায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.