চাই শুধু নিরবিচ্ছিন্ন নিরপত্তা নিজেকে বিকশিত করার জন্য। ।
মাহবুব মিঠু। ।
যারা বাঙলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটু আধটু ভাবেন, তারা লক্ষ্য করবেন যে, যতো দিন যায় শাসক দলের ভিতর দুটো লক্ষণ বেশ জোড়ালো হতে থাকে।
এর একটি হচ্ছে আভ্যন্তরীন কোন্দল বৃদ্ধি এবং এর কারনে দলের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এবং অন্যটি হচ্ছে, কিছু ব্যক্তির উত্থান যাদের নাম হয়ে পড়ে দুর্নিতি, অযোগ্যতা এবং সন্ত্রাসের প্রতীক। বিগত সরকারের আমলে যেমন পিন্টু, মামুন, আলতাফ ছিলেন এই দলে তেমনি বর্তমান শাসক দলে আবুল, শাজাহান, শামীমের পরে নতুন অভিষেক ঘটলো টেলি মন্ত্রী রাজুর। তিনি নিজ এলাকায় নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মেয়র লোকমানের হত্যার সংগে জড়িত বলে গুজব উঠেছে। নিহতের ভাই নিজে বাদী হয়ে তার ভাইসহ আওয়ামিলীগের আরো অনেকের নামে হত্যা মামলা করেছে।
এর আগের বারেও আওয়ামিলীগের সর্বনাশের জন্য দায়ী ছিল এমন কিছু নাম। সেবারে লক্ষীপুরের তাহের, ফেনীর হাজারী, বরিশালের হাসনাত, ঢাকার মায়া এবং অতি অবশ্যই নারায়নগজ্ঞের শামীমদের কল্যাণে আওয়ামিলীগের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।
দলও কোন রহস্যজনক কারণে এই সব লোকদের উপরে ঋনী থাকে। একের পর এক দুর্নিতি, অযোগ্যতা, হত্যা, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দলের বারোটা বাজালেও এরা থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। আবুলের সড়ক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা এবং পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেংকারী ঘটনার পরেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মন্ত্রীরা নাকি কথায় নয়, কাজে বেশী স্মার্ট।
অবশ্যই স্মার্ট। তা না হলে গর্ভে থাকাকালীন সময়ে পদ্মা সেতু কেউ কি করে গায়েব করে দেয়। আধুনিক পৃথিবীতে টেষ্ট ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবার পক্ষপাতী মন্ত্রী শাজাহান এখনো বহাল তবিয়তে। নারায়নগঞ্জের শামীমের কথা নাই বললাম। তার মহান কর্মের কারনে নেত্রী তার উপরে বেজায় খুশী।
শামীমের মতো কেউ নাকি তাকে এতো বেশী ঋণী করতে পারেনি।
আমাদের দেশে প্রতিটা দলের ভিতরে কি যেন একটা বিষয় কাজ করে, যার ফলে ব্যক্তির অন্যায়ের দায়ভার দল নিজের কাধে নিয়ে পুরো দলটাকেই বিতর্কিত করে ফেলে। বিগত সব শাসকদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আবুলের একের পর এক অযোগ্যতা এবং দুর্নিতির দায়ভার দল যেমন নিজের কাধে নিয়ে তাকে পুরস্কৃত করেছে, শাজাহানের বেলায়ও তাই ঘটেছে। শামীমতো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে গোটা নারায়নগজ্ঞের দলের দায়িত্ব পেল।
রাজু হয়তো সে রকম কিছু একটা পেতে যাচ্ছে অচিরেই।
ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার দল নিজের কাধে নেবার কারনে আরো বেশী বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সাথে সাথে ঘটনার সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তি আবারো অপরাধ করার সাহস পায়। পদ্মা সেতুর দায়ভার প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের কাধে চাপাতে গিয়ে উল্টো হাসির উপলক্ষ হয়েছেন মাত্র। একইভাবে মেয়র লোকমান হত্যার পরপরই এর দায় বিরোধী দলের উপরে চাপানোর জন্য বিএনপির নেতা খোকনকে গ্রেফতার করা হয়।
নব্বই দশকের ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে যাদের ধারনা বা অভিজ্ঞতা আছে তারা বলতে পারবেন, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজণীতির নামে প্রতিদিন কি পরিমাণ সংঘাত লেগে থাকতো। গুলী ফোটা ছাড়া একটি রাতও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পার হতো কিনা কে জানে। অস্ত্রের সেই ঝনঝনানির ভিতরে থেকেও খোকন ছিলেন এ সবের বাইরে ক্লীণ ইমেজের এক ছাত্রনেতা। এখন পর্যন্ত তার নামে তেমন কোন সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ নেই। কোন অভিযোগ এবং আমলযোগ্য কোন সন্দেহ ছাড়া রাতারাতি নিরপরাধ কেউকে গ্রেফতার করা কোন ধরনের সুশাসনের ইঙ্গিত, একমাত্র শাসক দলই সেটা বলতে পারবেন।
খবরের কাগজ উল্টালেই নিত্য নৈমিত্ত শাসক দলের আভ্যন্তরীন কোন্দলে আহত এবং খুন হবার ঘটনাই চোখে পড়ে বেশী। বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে রুটি হালুয়া ভাগাভাগির সুযোগ কম থাকে বিধায় তাদের মধ্যে তুলনামূলক ঐক্য বিরাজ করে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে দ্রুত সব পাল্টে যায়। সামনে টেন্ডারের বাক্স, ক্ষমতার চাবি, বড় নেতা হবার মোহ, ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্কের সব কিছু পাল্টে দিতে থাকে। ধীরে ধীরে বন্ধু হয়ে পড়ে শত্রু এবং ক্ষেত্র বিশেষে শত্রু হয়ে যায় বন্ধু।
সারা দেশের প্রেক্ষাপটে শাসক দলের মধ্যকার লড়াই আসলেই এই হালুয়া রুটি দখলের লড়াই।
এই অবস্থায় দলের ভূমিকা হবার কথা দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন। আমাদের দেশে ঘটে তার উল্টোটা। দল ধীরে ধীরে ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দুষ্ট লোকদের পুরস্কৃত করতে থাকে। নারায়নগঞ্জে আইভীর পরিবর্তে শামীমকে দলীয় সমর্থন দান এবং পরবর্তীতে আরেক সজ্জন নেতা আকরামের পরিবর্তে তাকে নারায়নগঞ্জের রাজনীতির দায়িত্ব প্রদান, নরসিংদীতে আওয়ামিলীগের জনপ্রিয় নেতা লোকমানের হত্যাকারী এবং তার পৃষ্ঠপোষকতাকারী মন্ত্রীকে দলের নিরব এবং সরব সমর্থন প্রদান- এসবই তারই লক্ষণ।
বিগত শাসক দলের পতনের আগে আগেও ঠিক এ রকম কান্ডগুলোই ঘটেছিল।
সেই এরশাদ থেকে শুরু করে আজ অব্দি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কোন শাসকের পতনের আগে আগে অন্ততঃ তিনটি লক্ষণ ফুটে উঠে
প্রথমতঃ দলীয় কোন্দল বৃদ্ধি
দ্বিতীয়তঃ দলের মধ্যে ক্লীন ইমেজের লোকরা কোণঠাসা হয়ে দুর্নিতীবাজ, অযোগ্য এবং সন্ত্রাসীদের প্রধান্য বিস্তার এবং
তৃতীয়তঃ শাসক দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে এলোমেলো কথা বলা শুরু করা।
তৃতীয় কর্মটির মধ্যে নতুন করে যুক্ত হলেন রাজপথের অকুতভয় নেত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বিরোধী দলের নেতাদের কানধরে ওঠবস করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিছুদিন যেতেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটা অশালীন মন্তব্যে কথা স্মরন করিয়ে দেয়ায় নিজে দলের ভিতরেই তিনি চরম নাস্তানাবুদ হলেন।
মতিয়া চৌধুরী যখন বাম রাজনীতি করতেন তখন সেই বেফাস মন্তব্যটি করেছিলেন। তিনি বিচ্যুত বাম বা কক্ষচ্যুত বাম ঘরানার আওয়ামি নেতা হলেও যোগ্যতা এবং সততা বিষয়ে রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। তার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির মুখ থেকে বিরোধী দলের সম্মানিত নেতাদের সম্পর্কে এ রকম কটুক্তি আসলে যায় না।
শাসক যায় শাসক আসে। আমরাও ভাবি দিন বদলের।
দিন না বদলালেও শাসকদের সাথে সাথে অপকর্ম সংগঠনকারীদের নামের তালিকা দীর্ঘ হয় দিনে দিনে। প্রমাণিত হত্যাকরীদের মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে যেমন সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্টা সম্ভব হয় না, তেমনি দলের ভিতরে আইভী, লোকমানদের মতো জনপ্রিয় নেতাদের সরিয়ে সন্ত্রাসীদের জায়গা করে দিয়ে প্রকারান্তরে দলকে গণ বিচ্ছিন্নতার দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।