আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবুল হোসেন, আবুল মাল... সর্বশেষ সংস্করণ 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক' । এ এক আবুলময় পৃথিবী !

মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা করল পাবলিকরে খুশি করে সরকারের সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্যে। এজন্যে তারা শত শত বিসিএস ক্যাডার ডাক্তারকে জোরপূর্বক নিয়ে বসিয়েছে প্রত্যন্ত কোন ইউনিয়নের চাল চুলা বিহীন ঘরে। বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, খাবার ভাল ব্যবস্থা নেই, থাকার মত বাসস্থান নেই, কর্মক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই তবু ডাক্তারের ঘাড়ে চাপ দিয়ে বসিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেসব জায়গায়।

দেশের আর একটিও সরকারী সেক্টরে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন না থাকলেও হাসপাতালে তা বসানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডাক্তাররা যাতে এমবিবিএস পাস করার পর উচ্চতর কোন ডিগ্রি অর্জন করতে না পেরে বনে বাদারে বছরের পর বছর পড়ে থাকতে বাধ্য হয় সে জন্য পোস্ট গ্রেজুয়েশন লেভেল যত ভাবে জটিলতর করা যায় সে ব্যবস্থা করেছে বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ট্রেনিং পিরিয়ড বাড়ানো, পরীক্ষার জন্য ছুটি প্রদান বন্ধ করা, ট্রেনিং পদ্ধতি প্রায় অসম্ভব করে তোলা ছাড়াও আরও অনেক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছি। এসব সিদ্ধান্ত দেখে একটি বিষয়ে আমি প্রায় নিশ্চিত যে নিজের পায়ে কুড়াল মারার ব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাহেব ভালই ওস্তাদ। তিনি মনে করছেন- এইসব হঠকারী সিদ্ধান্ত পুরো ডাক্তার সমাজের ভিতর ক্ষোভের জন্ম দিলেও তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় পাত্র হয়ে থাকবেন।

কোন লাভ নেই মন্ত্রী মহোদয় সাহেব। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা – এই মানুষগুলোর কাণ্ড জ্ঞান সম্পর্কে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারন আছে বলে মনে করছি আজকের একটি খবর পড়ার পর। তারা কি বুঝে কেবল মাত্র জিপিএ –এর উপর ভিত্তি করে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করার পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তা কিছুতেই মাথায় আসছে না। বিভিন্ন বোর্ডে প্রশ্নের মান হয় বিভিন্ন রকম, উত্তরপত্র যাচাই করার ক্ষেত্রেও অনেক তারতম্য থাকে, কেন্দ্র ভেদে অনেক স্থানে নকল করেও অনেকের ভাল জিপিএ পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।

এসব ছাড়াও আরও অসংখ্য দিক বিবেচনা করে কোনমতেই নিম্নমানের বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে মেডিক্যালের মত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা উচিৎ নয়। এই পদ্ধতিতে কি মানের ডাক্তার পাবে আমাদের দেশ? নিজের পরিবারের মানুষের সুচিকিৎসা দিতে পারবে কিনা সে ব্যাপারেই যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার। এছাড়া অধিক জিপিএ সাধারনত পেয়ে থাকে ঢাকা সহ বড় বড় শহরের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মফস্বলে অনেক মেধাবী আছে যারা কেবল সুযোগের অভাবে তাদের জিপিএ বাড়াতে পারে না। তাহলে এরা কি ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে? তাদের মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছের কি কোন মূল্য থাকবে না? মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা হাজার তিনেক অথচ দেশে A+ পাওয়া শিক্ষার্থী আছে হাজার হাজার।

কিভাবে এদের মাঝ থেকে বেছে নেয়া হবে যোগ্যদের? তবে কি ধুম করে ঘোষণা আসবে মৌখিক পরীক্ষার মত কিছু একটার? অর্থাৎ ঘুষ বাণিজ্যের রমরমা পরিবেশ তৈরির জন্যেই এই সিদ্ধান্ত? তাছাড়া এমন সিদ্ধান্ত যদি নেয়াই হবে তবে আগেই কেন নেয়া হল না? অসংখ্য স্টুডেন্ট গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যে কোচিং করল সেটার কি হবে? আমার পরিচিত অনেকে আছে যারা মেডিক্যালে পড়বে বলে এবছর দ্বিতীয়বারের মত প্রস্তুতি নিচ্ছিল ভর্তি পরীক্ষার, এদের মাঝে কেউ কেউ গতবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও ভর্তি হয়নি মেডিক্যালের আশায়। তাদের কি গতি হবে? এইরকম একটি ফালতু আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কিভাবে পাকাপাকি হয়ে গেল আমার বোধগম্য হচ্ছে না। কেউ কি দেখার নেই? কেউ কিছু বলবে না? কোথায় চিকিৎসক নেতারা এখন? রাজনৈতিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ঘাটতি থাকার পরও কেবলমাত্র বউয়ের বান্ধবির লবিং নিয়ে বিএমএ’র উঁচু পদ ধরে রাখলে এমনই চলতে থাকবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। ডাক্তাররা নানা উপজেলায় কাজ করতে যেয়ে লাঞ্ছিত হচ্ছে, হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে, দুই তিন ডাক্তার এমনকি সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুও বরণ করেছেন তবু আজ পর্যন্ত এই সব নামকাওয়াস্তে নেতাদের একটা টুঁ শব্দও করতে দেখলাম না।

যতসব পা চাটার দল! প্রধানমন্ত্রীর পা চাটতে পেরে তারা খুশি, আর প্রধানমন্ত্রী পাবলিকের ঘরে ঘরে ডাক্তার বসিয়ে রাখতে পেরেই মহা খুশি। কিন্তু তাঁর জানা নেই, এভাবে এদেশের পাবলিককে খুশি করা যাবে না। ডাক্তার এদের ঘরে কেন সারাক্ষণ যদি পায়ে ধরে তেল মালিশও করে দেয় তবু তাদের মন ভরবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ডাক্তার চায় না, চায় মাগনা ঔষধ। ওসব জায়গায় চিকিৎসার পরিবেশ তৈরি না করে, পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ না করে ঘাড়ে চেপে ডাক্তার বসিয়ে রেখে লাভ নেই।

বরং ডাক্তারকে যত টাকা বেতন দিয়ে রাখবেন সে টাকায় “জ্বরের বড়ি, বেদনার বড়ি, বমির বড়ি, শইল্যে শক্তি হওনের বড়ি, গ্যাসের বড়ি” মাগনা সাপ্লাই দেন পাবলিক খুশি হবে; আপনাদের ভোট বাড়বে আর যে ডাক্তারটার ক্যারিয়ার ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেল সে আপনার জন্যে দোয়া করবে। একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শেষ করব—আমি তখন সিলেটের এক প্রত্যন্ত গ্রামে চাকরিরত। একটা রোগী আসল হাতে আঘাত নিয়ে, কেটে যাওয়া জায়গাটা আমি সেলাই দিয়ে দিলাম। এরপর প্রেসক্রিপশন করে রোগীর হাতে ধরিয়ে দিতে বলল- : ‘হাসপাতালের ওষুধ দেন’ : ‘ আপনার ঘা শুকানোর জন্যে এই ওষুধ আপনাকে খেতেই হবে কিন্তু এইটা হাসপাতালে নেই’ :‘ওষুধ কিনুম না। হাসপাতালে জেইডা আছে হেইডা দেন’ :‘হাসপাতালে শুধু ‘এন্টাসিড’ সিরাপ আছে।

এটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। ঘা শুকানোর না। ‘ :‘আফনে এইডাই দেন আমারে, এইডা খাইলেই ঘা শুকাইব’ এই হল এদেশের 'অধিকাংশ' সাধারন মানুষের স্বভাব। এদেরকে এদের মত করেই খুশি করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্যার ফালতু আগডুম বাগডুম না করে দয়া করে একটু চোখ খোলেন।

নইলে কিন্তু শেষ বেলায় আফসোসের শেষ থাকবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.