সুখের কথা বোল না আর,বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি,দুঃখে আছি,আছি ভালো,দুঃখে আমি ভালো থাকি। তখন ক্লাস নাইনে ছিলাম,গনিত অলিম্পিয়াড উপলক্ষে জাফর ইকবাল স্যার আসবেন আমাদের স্কুল এ,আমরা বান্ধবীরা খুব খুশি,গনিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহনের চাইতে জাফর ইকবাল স্যার কে দেখাতে আমাদের আগ্রহ। স্যার আসলেন তার অটোগ্রাফ নিয়ে বাসায় গেলাম ,তখন বাবা জিজ্ঞেস করলেন জামাল নজরুল ইসলাম স্যারকে দেখনি ?সেদিন প্রথম বাবার কাছ থেকে জানলাম নজরুল ইসলাম স্যার এর কথা। আসলে সেদিন তাকে আমি খেয়াল করিনি,কারণ তার কথা জানতাম না। আমার বাবা অংকের মানুষ,স্যার এর সাথে তার পরিচয় ছিল।
সেদিন বুঝলাম জামাল স্যার জাফর ইকবালের চেয়ে অনেক বড় বিজ্ঞানী,অবাক হলাম তার কথা এতদিন কোথাও শুনিনি দেখে। তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন দেখালাম তার মৃত্যুর খবর টেলিভিসিন গুলাতে এত কম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। বেশকিছু গাণিতিক সূত্র এবং জটিল গাণিতিক তত্ত্বের সহজ পন্থার উদ্ভাবক জামাল নজরুল মহাকাশের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা বেশকিছু বই অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ড. জামাল নজরুল গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ তার লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তার দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স ১৯৮৩ সালে প্রকাশের পর বিজ্ঞানী মহলে দারুণ সাড়া ফেলে। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় তা অনূদিত হয়। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে বাংলায় বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি।
তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘কৃষ্ণ বিবর’, ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অবদানের জন্য ২০০১ সালে একুশে পদকে সম্মানিত করা হয় অধ্যাপক জামাল নজরুলকে
দৈনিক আজাদিতে স্যারকে নিয়ে একটা লেখা শেয়ার না করে পারলাম না।
‘লন্ডনে যে সূর্য দেখা যায় একই সূর্য কি বাংলাদেশে দেখা যায় না? চট্টগ্রামে দেখা যায় না?’ প্রবল দেশপ্রেমের আকুতি মাখা কথাগুলো ছোট দেশের (বাংলাদেশ) বড় বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামের। বিশ্বখ্যাত বিদ্যায়তন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন বন্ধুদের পীড়াপীড়ির জবাবে প্রশ্নগুলো রাখেন। তাঁর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বন্ধুদের পীড়াপীড়ির কারণ ছিল, কেন তিনি বিশ্বখ্যাত এ বিদ্যায়তন ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন? সেই সময় তার বন্ধুবান্ধব ক্যামব্রিজ ছেড়ে যাওয়াকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে ‘বড় ভুল’ হিসেবে মন্তব্য করলেও দেশপ্রেমের টানে তিনি কর্ণপাত করেননি তাদের কথায়। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তিনি এক প্রকার বিদ্রোহ ঘোষণা করেই দেশে ফিরেন।
দেশে এসেই বসে থাকেননি। প্রথম দেশে আসেন ১৯৮১ সালে। যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে।
এরপর গবেষণা কাজ শেষ করার জন্য আবার বিদেশ যান এবং ১৯৮৪ সালে ফিরে আসেন। শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আকৃষ্ট করতে চবিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’।
দেশে আসার পর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-যেখানেই কনফারেন্স অথবা আলোচনা অনুষ্ঠান হোক না কেন, খবর পেলেই ছুটে যেতেন তিনি। কারণ ছিল একটাই, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করা। দেশের জন্য তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
এ কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দেন গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবুল মনসুর চৌধুরী।
জামাল নজরুল ইসলামের মানবিক দিকের কথা বলতে গিয়ে গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রফেসর ড. কামরুল ইসলাম বলেন, মাসের ১ তারিখ সাধারণত বেতন হয়। ওইদিন গবেষণা কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মচারীসহ দরিদ্র মানুষ জড়ো হত। আর বেতন হাতে নিয়ে তা ওই সকল মানুষের মাঝে তিনি এমনভাবে বিলিয়ে দিতেন যে অনেক সময় গাড়ির তেল কেনার টাকা পর্যন্ত তাঁর কাছে থাকত না। তিনি অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য নিজের পকেট খালি করেছেন।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, একবার বেতনের দিন স্যারের আসতে দেরি হয়। আমি সাহায্যের জন্য আসা মানুষদের চলে যেতে বলি। কিছুক্ষণ পর স্যার এসে তাদের না পেয়ে আমাকে একটু রাগত স্বরে বলেন, ‘কামরুল আমি যে ভালো মানুষ তা তুমি জান। কিন্তু রেগে গেলে কী করি তা মনসুর জানে (অধ্যাপক ড. মনসুর চৌধুরী)। ’
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকেও গবেষণা কেন্দ্রে আসেন জামাল নজরুল ইসলাম।
তিনি সকলকে ঠিকমত কাজ করার আহ্বান জানান এবং কাজের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেন। তার সহকর্মীরা বলেন, তিনি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের রাজনীতি, লেজুড়বৃত্তি পছন্দ করতেন না। কিন্তু তারা যখন কোনো বিপদে পড়তেন তখন তাদের পাশে দাঁড়াতেন। সে যে মতাদর্শেরই হোক না কেন।
প্রফেসর ড. মনসুর বলেন, বিপদে পড়া মানুষকে যেকোনোভাবে সাহায্য করা ছিল তার ধর্ম।
যখনি কেউ বিপদে পড়ত তিনি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। এই ভালোবাসার কাছে হার মেনেছিল তাঁর গাড়ির চালক। বেশি বেতনে চাকরি পেয়েও জামাল নজরুল ইসলামের গাড়ি চালানোর কাজটি ছাড়েননি।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসার এই মহান ব্যক্তি ১৬ মার্চ চিরবিদায় নেন।
সূত্র.dainikazadi.org/details2.php?news_id=2177&table=march2013&date=2013-03-20&page_id=4&view=1&instant_status=0 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।