দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!
ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিন, সার্কিট কিংবা পাওয়ার হয়ত এই গুলো ছিল তাঁর আকর্ষণের বস্তু। স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল তড়িৎ প্রকৌশলী হবার। সেই লক্ষ্যে পূরণের শেষ ধাপ অতিক্রম করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং এর শেষ বর্ষে থাকতেই ডাক আসে দেশ মাতৃকা কে বাঁচানোর। অমোঘ সেই ডাক কে উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি।
তাই যুদ্ধ করে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে স্বাধীন করে গেছেন আমাদের বাংলাদেশ কে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ সিরিজের ছাত্র ছিলেন শহীদ শহিদুল ইসলাম। ২৯ শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহন করা এই বীর শহীদ হন স্বাধীনতার মাত্র ১০ দিন আগে, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার উজান গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত দুর্বাচারা সংলগ্ন শ্যামপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
তাঁর মাতা রাবেয়া খাতুন।
পিতা ছলিম উদ্দীন বিশ্বাস ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের একজন যোদ্ধা এবং সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধে যাবার জন্য পিতার কাছ হতেই প্রত্যক্ষ নির্দেশ পেয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম। দুই ভাই কে সঙ্গে নিয়ে চলে যান ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষন নিতে।
১৯৬৯ সাল গন অভ্যুত্থানে উত্তাল বাংলাদেশ। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধের সুবাদে শহিদুল ইসলাম চলে আসেন নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার দুর্বাচারায়।
এলাকার ছাত্র যুবক কৃষক শ্রমিক জনতা কে একত্রিত করেন গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তৎকালীন পাক সরকার গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে তাঁর বিরুদ্ধে। পাক বাহিনী তাঁর বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে যান। মহকুমা প্রশাসকের সহায়তায় ১১ দিন পর কারাগার থেকে ছাড়া পান। ১৯৭১ এর আগে থেকেই নিজেকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেন রুয়েটের এই শ্রেষ্ঠ সন্তান।
শৈশব থেকে দুরন্ত ও মেধাবী এই বীর ছিলেন দুর্বাচারা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্বাচারা জুনিয়র স্কুল, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল ও কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ছাত্র। এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পাওয়া এই ছাত্র ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের (বর্তমান রুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সাড়া দিয়ে পিতা ছলিম উদ্দীন বিশ্বাস কে সাথে নিয়ে স্থানীয় দুর্বাচারা স্কুল মাঠে এক সভা করেন। উপস্থিত কয়েকশ যোদ্ধা কে আহ্বান করেন যুদ্ধে যাবার জন্য। নিজেও রওনা হন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে।
প্রশিক্ষন শেষে ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই সাহসী সন্তানের যুদ্ধ। দুর্বাচারা হয়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাটি। আক্রমণ করেন পিস কমিটির চেয়ারম্যান আফতাব মুন্সীর বাড়ি। অংশ নেন বিখ্যাত বংশীতলার যুদ্ধে।
৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই যুদ্ধে কুষ্টিয়া সদরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে নিহত হয় ৬০ জন পাকিস্তানী সেনা। অংশ নেন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বালিয়াপাড়া লক্ষীপুরসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমরে।
বিজয় তখন সন্নিকটে। ৬ ডিসেম্বর,১৯৭১। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে হানাদার পাক বাহিনীর সাথে চলছিল তাঁর সম্মুখ যুদ্ধ।
সেই যুদ্ধে শহীদ হন শহিদুল ইসলাম। নিজের জীবন উৎসর্গ করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য।
তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে রুয়েটের একটি হলের নাম করা হয় শহীদ শহিদুল ইসলাম হল। প্রত্যেক রুয়েটিয়ান গর্বের সাথে স্মরণ করেন তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। আজ স্বাধীনতা দিবসে তাঁর প্রতি জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা।
তথ্য সংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতাঃ
১) ৯৫ সিরিজের মোঃ ফিরোজুর রহমান লিটন ভাইকে , হলে সংগৃহীত তথ্য যিনি সংগ্রহ করেছেন।
২) ইন্টারনেট থেকে বাংলাদেশের খবর ডট কমের তথ্য গুলি উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য ছোটভাই ব্লগার মিনাহজুল হক শাওন কে।
৩)রুয়েটে সংগৃহীত ছবিটি তুলে দেওয়ার জন্য প্রনয় কুমার বীর এবং তাহমিদ খান কে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।