পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গল হলো সুন্দরবন। । কি, বিশ্বাস হচ্ছে না?? তাহলে আসুন জেনে নেই জিম করবেটের বর্ণনা থেকে। ।
জিম করবেটকে অনেকেই চিনেন।
। উপমহাদেশে মানুষখেকো বাঘ আর চিতা মেরে মানুষের অনেক উপকার করেছিলেন তিনি। । সুন্দরবন নিয়ে তার একটি লেখা দিচ্ছি নিচে। ।
সেটা পড়লেই বুঝতে পারবেন কতটা ভয়ঙ্কর আমাদের এই সুন্দরবন। ।
লেখাটি বাংলা অনুবাদ করা। ।
...
"পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গল সুন্দরবন।
আফ্রিকা কেন, পৃথিবীর কোথাও কোন বন্যজন্তু আপনাকে গায়ে পড়ে আক্রমণ করতে আসবে না- যদি না আপনি কোন কারন ঘটান। এর একটা কারণ আছে; সব জীব-জানোয়ারের মধ্যে আল্লাহ মানুষ সম্বন্ধে একটা ভয় দিয়ে দিয়েছেন। বললাম ভয়, এটা ঠিক ভয়ও নয়- একটা অদ্ভুত মনোভাব মানুষ সম্বন্ধে- তাকে এড়িয়ে চলার, হঠাৎ সামনা সামনি পড়ে গেলে পালিয়ে যাবার। একটা মানুষ খুব চেঁচামেচি করে একপাল হাতিকে তাড়িয়ে দিতে পারে, এবং দেয়ও। এই ভয় বা যাই বলুন একে, এ যদি না থাকত, তবে আফ্রিকার গভীর ভেতরে, আপনাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বন্য এলাকায় মানুষ বাস করতে পারত না।
তাই শিকারী যখন শিকারে যান তখন যতক্ষণ না তিনি কোন শিকারকে আঘাত করছেন ততক্ষণ তার কোন ভয়ের কারণ নেই। এই হল সাধারণ নিয়ম। এর ব্যতিক্রম হল সেই বনে- যেখানে মানুষখেকো বাঘ বা সিংহ আছে। ব্যাস। সব উলট পালট হয়ে গেল।
সে বনে আর আপনি শুধু শিকারী আর জন্তুটি শুধু শিকার নয়। সেখানে বাঘ বা সিংহও শিকারী, আপনিও শিকার, আর খাদ্য। আপনি চেষ্টা করছেন তাকে শিকার করার জন্য, আর সে চেষ্টা করছে আপনাকে শিকার করার জন্য। এখন যখন জানা আছে যে যাকে আপনি শিকার করার চেষ্টা করছেন সে আপনার চেয়ে অনেক ভাল শিকারী এবং তার শক্তি, চোখ, কান আর জঙ্গলকে ব্যবহার করার ক্ষমতা অর্থাৎ Jungle-craft ইত্যাদির সঙ্গে আপনার চোখ, কান ইত্যাদির কোন তুলনাই হয় না- তখন তফাৎটা লোমহর্ষক।
এই লোমহর্ষক তফাৎটার জন্য সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক শিকারভূমি।
অবশ্য আরও কারণ আছে- তবে এটাই প্রধান। ফরেস্ট বিভাগের আন্দাজমতে, সুন্দরবনের যে অংশটা বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে, শুধু তাতেই শ' পাঁচেক বাঘ আছে। সবগুলো বাঘই বেঙ্গল টাইগার, আর সবগুলোই মানুষখেকো। অবশ্য সুন্দরবনের প্রত্যেকটা বাঘই যে মানুষ খেয়েছে তা নয়- অনেক বাঘ আছে যেগুলো এখনও মানুষ খায়নি। কিন্তু তার কারন এই নয় যে সেগুলো মানুষখেকো নয়- কারণ হল, সেগুলো এখনও সুযোগ পায়নি।
সুযোগ পেলে আর দেরী করবে না অর্থাৎ Potential man-eater.
মনে করুন তো, একজন শিকারী আফ্রিকার জঙ্গলে আর একজন শিকারী সুন্দরবনে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুজনের কাছেই রাইফেল আর যথেষ্ট গুলী আছে। যিনি আফ্রিকাতে হারিয়ে গেছেন তার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবার খুব বেশী কারণ নেই। তিনি বিরক্ত না করলে কোন বন্যজন্তু তাকে আক্রমণ করবে না, ক্ষিদে পেলে তিনি হরিণ মেরে, আর পিপাসা পেলে নদীর খালের ঝর্ণার বা নিদেনপক্ষে ডোবার পানি খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারবেন। রাত্রে গাছে উঠে বা নিচে আগুন জ্বেলে ঘুম দিলে কেউ বিরক্ত করবে না।
তারপর একদিক পানে চলতে চলতে আজ হোক কাল হোক কোন না কোন লোকালয়ে বা অন্ততঃ কোন নিগ্রো গ্রামে পৌঁছুতে পারবেন।
আর যিনি সুন্দরবনে হারিয়েছেন, তিনি যে মহূর্তে কোন বাঘের চোখে পড়বেন সেই মুহূর্ত থেকে বাঘ তার পেছনে লেগে যাবে পাকড়াও করার জন্য, আর তিনি যদি নিজেও বাঘের মতই শিকারী না হন, এবং তা হওয়ার সম্ভাবনা নেহায়েতই কম, তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে। এক মহূর্তের অসাবধানতাই যথেষ্ট। ক্ষিদে পেলে হরিণ মারতে পারেন অবশ্য কিন্তু পানি পাবেন না কোথাও। সব পানি লোনা।
দিনে দুবার সমুদ্রের জোয়ার এসে সমস্ত বনটা ডুবিয়ে দেয়, কাজেই মাটিতে থাকা চলবে না। গাছগুলোর অধিকাংশই নানা রকম সাপে ভর্তি। আর এক দিক পানে চলার প্রশ্নই ওঠে না এই জন্য, যে সমস্ত বনভূমিটা ছোটবড় নদী, আর খাল দিয়ে জালের মত করে ছাওয়া। সাঁতরে খাল নদী পার হবেন সে আশাও দুরাশা, বড় বড় কুমীর (জিম করবেটের ভাষায়, তখন সুন্দরবনের নদীতে এমনকি হাঙরও ছিল) ভর্তি। কোথায় পৌঁছুবেন সে প্রশ্নও অবান্তর কারন, সুন্দরবনের বন এলাকায় কোন মানুষের বাস নেই।
বিপদে পড়লে কেউ যদি ইচ্ছা করেন দৌঁড়াবেন এমনকি তার পর্যন্ত উপায় নেই, অসংখ্য শুলায় বন ভর্তি। দেখে দেখে সাবধানে পা ফেলতে হয়। নাহলে পা চিরে ঢুঁকে যাবে ধারালো শলা!
এই জন্য বলছিলাম সুন্দরবনের সাথে পৃথিবীর কোন বনের তুলনা হয় না। সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া মানুষ যদি চব্বিশ ঘণ্টাও কোন রকম প্রাণ বাঁচাতে পারে তবে আমি অবাক হব। সুন্দরবন সত্যি পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম বন।
" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।