সবাই এক সাথে চেচিয়ে উঠল, “ছেলে হয়েছে ছেলে হয়েছে”। একজন চশমা পরা লোক খুশিতে কেঁদেই দিল কথা টা শুনে। একজন আরেক জন কে জড়িয়ে ধরছে খুশিতে। তাদের খুশি দেখে মনে মনে ঠিক করলাম বাচ্চা টাকে না দেখে যাব না। কিন্তু কার ছেলে হল এত মানুষের মাঝে আমি বুঝতে পারছিনা।
আর ছেলে টাই বা কোথায়? সবাই আমার দিকে হাসতে হাসতে ছুটে আসছে। এক জন বুড়ি মহিলা এসে আবার আমার গাল টিপে দিল। বুড়ির সামনের দুটি দাঁত নেই ,দাঁত দেখলেই বুঝা জায় যে,তিনি অনেক পান খায় । উনি হয়ত আনন্দে আমাকেও উনাদের পরিবারের একজন সদস্য ভেবে ফেলেছেন। এই মহিলার দেখা দেখি আর কয়েক জন এই কাজ টা করে বসল।
এবার আমি কিছু টা বিরক্তবোধ করলাম। এত মানুষ থাকতে আ্মার গাল টিপার কি হল? কিন্তু কোনো লাভ হল না। অনেকেই কাজ টা দ্বিতীয় বারের জন্য করতে আসল। এখন মনে হচ্ছে ঝামেলার মাঝে পড়ে গেলাম! ওই বুড়ির উপর অনেক রাগ হল মনে মনে। আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছে নাকি? আমার এখান থেকে কেটে পরাই ভাল হবে।
আমি উঠে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু মনে হল আমাকে কেউ চেপে ধরে রেখেছে। আমি কথা বলতে চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার গলা দিয়ে কান্নার আওয়াজ ছাড়া কিছুই বের হল না। এগুলা কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি কান্না করলাম কেনো?তাও আবার এত গুলো মানুষের সামনে ছিঃ । আমার কাছে সব কিছুই কেমন জানি অন্য রকম লাগতে শুরু করল। কান্নার সাথে সাথেই সবাই আরো ব্যস্ত হয়ে গেল।
বলল, “এই ওকে ওর মা এর কাছে দাও, বাবু কে বাবুকে মায়ের কাছে দাও। “ আমাকে সবাই বাবু ডাকছে কেন? কি বিরক্তিকর। আমাকে কোলে করে একজন মহিলার কাছে নিয়ে গেল। মহিলা টির একটি নীল কাপড় পরানো। মনে হল আগেও দেখেছি উনাকে।
অনেক পরিচিত চেহারা। কিন্তু মনে করতে পারছি না। মহিলার দিকে তাকিয়ে আমার সব কান্না বন্ধ হয়ে গেল। উনি আমাকে অনেক যত্ন করে কাছে নিলেন। আমাকে বললেন ,কি বাবা ? কাঁদিস কেনো? এইত আমি , তোর মা।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ভাবতে শুরু করলাম। আমি যা ভাবছি তাই কি ঠিক? আমার এখন সব কিছু পরিষ্কার মিলে যাচ্ছে । বুঝতে পারলাম যে, আর অন্য কেউ নয় আমিই হয়েছি একটু আগে। আর এই মহিলা টি আমার মা। তাহলে ঐ বুড়ি টা কি আমার দাদী নাকি নানী? তাহলে তো আমার খবর ই আছে।
প্রতি দিন এভাবে আমার গাল টিপে দিলে ত আমার গালে দাগ বসে যাবে। এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। য়ার চশমা পরা লোক টি মনে হয় আমার বাবা। ভাবতে ভাবতেই হঠাত ঘুমিয়ে গেলাম।
দুই দিন পরে আমাকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হল।
গাড়ি তে আমি আমার মায়ের কোলে। পাশেই ঐ বুড়ি। ঐ বুড়ি আমার দাদী। আর সবাই আছে গাড়ির সামনে পিছনে মিলিয়ে। বুড়ি আমার দিকে ফোকলা দাঁতে তাকিয়ে বলল, এই তো ঘুম থেকে উঠে গেছে দাদু ভাই।
দাও আমার কাছে দাও বৌ মা। বলেই আমাকে আমার মা এর কাছ থেকে নিয়ে নিল। বিষয় টা আমার মোটেও ভাল লাগল না। বিরক্তিকর বিষয় হল বুড়ি হঠাত আমার প্যান্ট এ ধরে টানতে সুরু করল। গরম এ নাকি আমি ঘেমে যাচ্চি।
এভাবে সবার সামনে আমার কাপড় ধরে টানাটানি করার মানে কি? কি করতে চাচ্ছে মহিলা টা? আমার প্যান্ট খুলে ফেলবে নাতো? দেশে কি কোনো আইন নাই নাকি? এই কোন দেশে আসলাম আমি? রাস্তায় এক লোক কে চেচাতে শুনলাম “বাংলাদেশ প্রতিদিন” “বাংলাদেশ প্রতিদিন” মাত্র ২ টাকা। বুঝতে পারলাম আমি বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করেছি। আমার মান সম্মান বাঁচাতে না পারার সম্ভবনাই যে বেশি তা তখনি বুঝে গেলাম। আমি অনেক জোরে ধরে রাখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছি না।
আমার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। সবাই নির্লজ্জের মত আমার প্যান্ট এর দিকেই তাকিয়ে আছে । আশ্চর্য তো। আমি আর পাড়লাম না আমার সম্মান রক্ষা করতে। বুড়ি খুলেই ফেলল আমার প্যান্ট।
আমি এখন রাস্তার মাঝে উলংগ একটি মানুষ। বুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে বিজয় এর হাসি হাসল। আমি এখন কি করি? গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে আমার লজ্জায় আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করল না। পাশের গাড়ি থেকে একটা পিচ্ছি মেয়ে আমার থেকে ২/৩ ঘন্টার ছোট হবে হয়ত ,সে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। দুই পা উপরে তুলে নিজের লজ্জ্বা কে আড়াল করতে চেষ্টা করতে লাগলাম।
কিন্তু কোন দিক আড়াল করব? এক দিক করলে আরেক দিকে দেখা যায়। আমার কিছুই করার নেই। মানহানির মামলা ও ত করতে পারব না। শুনেছি এই দেশে এডাম টীজিং এর উপর এখনো কোনো আইন হয়নি। হঠাত একটা বুদ্ধি এল মাথায়, বুড়ির দুই দাঁতের ফাঁকা বরাবর নিসানা করে দিলাম হিসু করে।
একদম “খাপে খাপ , মর্জিনার বাপ” ফাকা দিয়ে ভিতরে চলে গেল। এমনি তাড়াতাড়ি আমাকে আমার মায়ের কোলে তুলে দিয়ে জানালা দিয়ে থুথু ফেলতে শুরু করল। আমি হেসে উঠার আগে গাড়ির অন্য সবাই হেসে উঠল। আমি ও হেসে উঠলাম। হাঃহাঃ এবার বুঝো মজা।
আমার সাথে পাঙ্গা? ভাল একটি অস্ত্র পেয়ে মনে মনে খুশিই হোলাম। আল্লাহ একে বারে খালি হাতে পাঠায় নি পৃথিবীতে। বুড়ি কে এবারের মত শিক্ষা দিয়ে দিলাম। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়ে টা কেমন জানি রোমান্টিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। এতক্ষনে মাথায় এল যে মান সম্মান বাচাতে গিয়ে আমি তো আরেক টি লজ্জার কাজ করে ফেললাম।
মেয়েটির সামনে এভাবে হিসু করা ঠিক হয় নি। আমার অবশিষ্ঠ ইজ্জত ও ত এখন ধূলোতে মিশে গেল। ঐ মেয়ের হাসি দেখে মনে হল সে আমার উপর কিছু টা ইম্প্রেস হয়েছে। প্রেমে পরে গেল নাতো আবার? দেখতে খারাপ না, ভালই। তাকানো তে কেমন জানি একটা মাদকতা আছে।
এর মাঝে গাড়ি ছেড়ে দিল। ওদের গাড়ি টা সামনের দিকে চলে যাচ্ছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একি? আমি কি মেয়ে টির প্রেমে পরে গেলাম নাকি? মাত্র দুই দিন হল পৃথিবীতে এলাম। আর এসেই প্রেমে পড়ে গেলেম? হায়রে ভালোবাসা!!
বাসায় এলাম।
সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমার কিছুই ভাল লাগছে না। চোখের সামনে সুধু মেয়ে টির চেহারা ভাসছে সারাদিন। আমার সব কিছুই কেমন জানি শূন্য লাগছে। মনের কষ্টে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
প্রেমে পড়লে কি এমন ই হয়? এবার আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। কেউ আমার মনের কষ্ট টা বুঝতে পারল না। আমাকে ক্ষুদা পেয়েছে ভেবে জোর করে আবার খাওয়ানো শুরু করল। এই দেশে দেখি কান্না করাও যায় না।
বুঝতে পারলাম যে আমাকে কথা বলা শিখতে হবে। তা না হলে আমার প্রথম ভালোবাসা বিফলে যাবে?
পাঁচ মাস পর । আমাকে নিয়ে আমার মা ও আমার বুড়ি দাদী গেল এক ডাক্তার এর কাছে। আমাকে ভাল কাপড় পরানো হল। গাড়িতে করে গেলাম গুলশান এ।
সেখানেই ডাক্তার বসে। কিন্তু এখানে কেন আসলাম বুঝতে পারছি না। মনে হয় বুড়ির দাঁত এর কোনো সমস্যা। যাই হোক আমি আমি আমার মা এর কোলে আছি। আমার আর কিসের চিন্তা।
মা আমাকে নিয়ে বসল একটা চেয়ার এ। ডান পাশে তাকিয়ে আমি একদম অবাক হয়ে গেলাম। খুশিতে কি করব বুঝতেই পারছি না। সেই মেয়ে টি ও এসেছে তার মা এর সাথে। আমি ওকে দেখে হাত নাড়াব কিনা বুঝতে পারছি না।
কি না কি ভাবে কোনো ঠিক নাই। কিন্তু এভাবে আর কবে দেখা হয় তার ও ত কোনো ঠিক নাই। আমি ওকে দেখে হাত নাড়লাম। সে আমাকে দেখে সেই আগের মত দুষ্টামী ভরা মুখ নিয়ে হাসল। হাসি দেখেই বুঝতে পারলাম সে এখনো আমাদের প্রথম পরিচয় এর সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা টা এখনো ভুলে নি।
দাদীর উপর আমার ভিশন রাগ উঠল। কিন্তু আজকে আমি প্যান্ট ও পরেছি নিচে ন্যাপকিন ও পরেছি তাই আজকে আর লজ্জার কিছু নাই ভেবে মনে মনে খুশি ই লাগছে। যাই হোক আজকে যে ভাবেই হোক তার সাথে যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম বের করতেই হবে। কি করব বুঝতে পারছি না।
আমার কি ভাগ্য! ভিতর থেকে ডাক্তার আমাদের দুই পরিবার কে একি সাথে ডেকে পাঠাল।
আমি তো মহা খুশি। গেলাম ভিতরে। পাশাপাশি আমার মা আর ওর মা। আমরা দুই জন কোলে। আমি ওর এত কাছে আসতে পারব কখনো ভাবতেও পারি নি।
আমার খুব লজ্জ্বা লাগসে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু সেও মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে। এভাবে নির্লজ্জের মত তাকিয়ে থাকা টা মনে হয় ভাল হচ্চে না। লুজ ক্যারেক্টার ভাবতে পারে।
কিন্তু ডাক্তার এটাকি করতে যাচ্ছে? একটা লম্বা চিকন সুঁই নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেনো? ওর মা ও তাকে চেপে ধরল। সে বুঝতে পারছে না তারা কি করতে চাচ্ছে তার সাথে। আমি ওকে ইশারা করলাম। কিন্তু মেয়ে দের মাথায় বুদ্ধি যে কম থাকে তা তখন ই বুঝতে পারলাম। সে ভেবেছে আমি তার সাথে লাইন মারছি।
ততক্ষনে ডাক্তার তার হাতের মাঝে সূঁই টা ঢুকিয়ে দিল। সে অনেক জোরে কেঁদে উঠল। আর আমি বুঝতে পারলাম ভালোবাসার যে কি জ্বালা। মনে হল যে আমাকেও কেউ হাতে সূঁই ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমার হাতে ও খুব ব্যাথা পাচ্ছি।
আমি বুঝতে পারলাম যে আমি তাকে মাত্র ৪ মাস ২৮ দিনে কত ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু একটু পর দেখতে পারলাম যে আসলে ভালোবাসা টালোবাসা কিছুই না। আরেক জন ডাক্তার এদিকে আমার হাতেও সুঁই ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাদের না বলে এভাবে বেড়াতে এনে গুতাগুতি খেলার মানে কি বুঝতে পারলাম না। আমি আমার মা এর সাথে আর কথা ই বলব না বলে ঠিক করে ফেললাম।
আজকে যদি আমার প্যান্ট টা না পরানো থাকত তাহলে ডাক্তার এর উপর হিসু করে আমাদের উপর অত্যাচার এর প্রতিশোধ নিতে পারতাম। ওকে শয়তান ডাক্তার এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম। এখন সে আমাকে কাপুরুষ ভাবছে। ধ্যাঁত!! নিজে কে খুব অসহায় মনে হল। ডাক্তার আমার নাম লিখল একটা কাগজে “মেকু”।
আমার বয়স লিখল। তার পর আমার মায়ের কাছে বাসার ফোন নম্বর চাইল। তার পর কিছু ঔষধ এর নাম লিখে দিল। আমি বুঝলাম যে এবার ওদের গুলো চাইতে পারে। মনে একটা আশা জাগল।
ঠিকি নাম জানতে চাইল। নাম বলল, বেলা। বয়স আমার থেকে ১ দিনের ছোট। এবার ফোন নম্বর এর পালা। ফোন নম্বর বলল, 2441139 ।
একদম সাথে সাথে মুখস্ত করে ফেললাম। 2441139,2441139।
বেলা খুব ভাল করেই বুঝতে পারল যে আমি তাদের নম্বর টা মুখস্ত করে নিয়েছি। সে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। ওর মা চলে যাচ্ছে।
আমাদেরও এখন চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। তাকে চোখের ভাষায় জানিয়ে দিলাম আমি একদিন ফোন করব তুমি আমায় চিনবেতো?
১৪ বছর পর......
ক্রিং ক্রিং। হ্যালো। কে বলছেন?
** হ্যালো, এটা কি 2441139?
জ্বী। কে বলছেন?
**আপনি কি বেলা?
জ্বী ,আমি বেলা।
আপনি কে বলছেন?
**আমাকে কি আপনি চিনবেন? আমি মেকু........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।