সযতনে খেয়ালী!
আমার আগের টেলিফোন বিড়ম্বনা গল্পে ঘিটু ভাইয়ের কথা শুনেছেন। আসলে তিনিই এই গল্পের নায়ক। নায়কের ব্যাপারে সামান্য কথা না বল্লে কি আর গল্প হিট হয়? হয় না, তাই ঘিটু ভাইয়ের সামান্য পরিচয় পর্বের ব্যাবস্থা রাখছি এইখানে।
ঘিটু ভাই। ভালো নাম সাদিকুল কবীর।
ডাক নাম সাদেক। স্বভাবের মইধ্যে কিঞ্চিৎ কিপ্টামীর সুবাতাস আছে বইলা বন্ধুরা ডাকে ঘটি। আর আমরা জুনিয়ররা ডাকি ঘিটু ভাই।
তো সাদেক ভাই আমার পরিচয় দেবার পরেও যখন চিনতে পারতাছে না, কইলাম আমি আপনেরে চিনি। আপনের নাম এই, আপনে অমুকের পোলা, অমুক জায়গায় থাকেন, অমুক কোম্পানীতে কাম করেন।
এইবার সাদেক ভাই খানিক চুপ। আবার কয়, আপনি ক্যা? আমার নাম্বার পাইলেন কোথায়?
আমি কই লেও হালুয়া। নাম্বার কোন টেনশনের কথা? আগে কন ইনফর্মেশনে ভুয়া তথ্য আছে কিনা ইলেকশন কমিশনের লাহান! সাদেক ভাই কয়, তা নাই- হের লাইগাইতো টেনশনে পড়ছি, আপনে কেডা? এই পর্যায়ে ভাবলাম নিজের পরিচয়ডা দেই।
কইলাম, আমি RAB এ আছি। আপনের জুনিয়র।
একটা মিশনের ভার পড়ছে আমার ওপর। অনেক খুঁইজা আপনেরে পাইছি একজন কাছের মানুষরে দায়িত্ব দেওনের লাইগ্যা। আপনে কইলাম না করতে পারবেন না। অবশ্য না করলেও শুনুম না!
সাদেক ভাই মনে হইলো ভুদাই হইয়া গেছে। ফ্যাকাশে গলায় কয়, কীসের দায়িত্ব।
আপনের পুরা পরিচয় দেন না প্লিজ।
আমি রেলগাড়িতে চইড়া বিয়া খাইতে যাই, ঘিটু তথা সাদেক ভাইয়ের ফ্যাকাইশ্য গলা শুইনা হাসি, আবার গম্ভীর গলায় কথাও কই।
পরিচয় দিলেই তো চিনে ফেলবেন। আমাদের তো পরিচয় দিতে মানা আছে জানেনই। তারপরেও কেন জোর করছেন বারবার।
বললাম তো কোন ক্ষয়ক্ষতি করবো না আপনার। আমার সি.ও. আমাকে অর্ডার করেছেন আপনার ওপর দায়িত্বটা দিতে, কারণ তাঁরাই আপনাকে লোকেট করেছেন, আমি না। তাদের হাতে আপনার ইয়া মোটা একটা ফাইলও আছে। যেখানে আপনার বিয়ের বৌভাতের কার্ডটাও সযত্নে রাখা আছে। অতএব বুঝতেই পারছেন, আমার হাতে কিছুই নেই।
আপনার হাতেও রাজী হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এখন কথা হলো আপনি মেন্টালী রেডি হয়ে আমাকে কখন জানাবেন কাজটা করতে!
এইবার যদি একবার গলাটা শুনতেন সাদেক ভাইয়ের! আমারে নির্ঘাৎ ধইরা সাইজ করতেন, ব্যাটা এই সূফী-দরবেশ টাইপের মানুষটারে লইয়া ইয়ার্কী করতে খারাপ লাগে না? আচ্ছা, কেন খারাপ লাগবে, এতো পরিচিত হওয়ার পরেও যখন আমারে চিনলো না, আমার মার্কা মারা গলা যা কি না কেউ "হুমমম" বললেই চিনে ফেলে, সাদেক ভাই মানে ঘিটু ভাই কেনো চিনলো না?
যাউকগা, ফাইলের কথা শুইনা মনে হয় মিয়া ভাই এক ড্রাম পানি খাইলো। আমি নি:শব্দে হাত পাও ছুইড়া কতোক্ষণ নাইচা লইলাম। তারপর এইবার জিগায়, কী করতে হইবো কন!
কইলাম কমু, আপনে কি নার্ভাস নাকি? ভুবন ভোলানো হাসি দিয়া বলে- না... তবে পরিচয়টা পাইলে ভালো লাগতো! আমি কইলাম, আবার সেই কদুর কথা বলেন? আমি কি ম্যাসেজ পাঠাবো যে আপনি আমাকে কো-অপারেট করছেন না!
সাদেক ভাই বললেন, আরে না না: আমি কি সেটা বলছি? কো-অপারেট করবো তো। বলেন কি করতে হবে!
বললাম, আপনি আমার সিনিয়র, আপনি আপনি কইরা কইতাছেন ক্যান? তুমি কইরা বলেন, এটা কোন ফ্যাক্টর না যে আমি কে, কি করি।
বয়স কতো আপনার? বুঝলাম সাদেক ভাই তার সুপ্ত জ্ঞানের ভান্ডার খোলা ধরছেন। এখনি না ভাগা দিলে ধরা পরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। বললাম, আমি প্রয়োজনে আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। হেড-কোয়ার্টার থেকে এসাইনমেন্ট পেলেই আপনাকে জানাবো কোথায়, কাকে, কী করতে হবে, কপিড?
ভাইয়া, বয়স টা বলে যান...
সরি, আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে... ঘটাশ (ফোন কেটে দিলাম)
-------------------------------
একদিন দেখি আমার নাম্বারে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন। কামের চাপে মাথা আউলা হইয়া ঘুরতাছে।
রিসিভ কইরা হ্যালো বলতেই শুনি, "হৈ মিয়া, RAB যোগ দিলা কবে, চলতাছে কেমন, এসাইনমেন্ট দিবা না"?
বুঝলাম সাদেক ভাই। দুজনেই হাসলাম অনেক্ষণ প্রাণখুলে। সাদেক ভাই বললেন, মিয়া তোমার নাম্বার বাইর করতে টি এণ্ড টিরে কতগুলা পয়সা গচ্ছা দিতে হইছে তার হিসাব আছে...?
দাঁত কেলাইয়া হাসি দিয়া বলি, গরীবরে না চিনলে তো ইট্টু আক্কেল সেলামী দিতে হইবোই বড়ভাই...। (ক্লোজআপহাসি)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।