মাস্টার্স । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
আজ রেজাল্ট দিল।
প্রচণ্ড টেনশনে ছিলাম, এখন কল্পনাতীত ভাল লাগছে !
সবাই বলেছিল কোচিং না করলে BANDSCORE 6 তুলতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, তাদের কথা ভুল প্রমাণ করতে পেরে আরও ভাল লাগছে। এখন সবাই বাহবা দিচ্ছে।
পরিশ্রম সার্থক। আমার মনে হয়, মানুষের “সন্দেহ, অবিশ্বাস” গুলোকে পাত্তা না দিয়ে নিজেই মনোযোগ দিয়ে ১ মাস পড়লে IELTS EXAM এ ভাল করা সম্ভব।
দীর্ঘ ২৮ দিনের প্রস্তুতি এবং তারপর পরীক্ষা, কোথাও কোচিং করিনি কিন্তু ৪ টি মডেল টেস্ট দিয়েছিলাম। এগুলো অনেক উপকার করেছে। Listening , Reading, Writing speed বেড়েছে ।
Speaking বাড়িতে প্র্যাকটিস করেছিলাম। IELTS এর জন্য Cambridge IELTS BOOK 5-8 পড়েছিলাম।
পরীক্ষার দিনের অভিজ্ঞতাঃ পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল Bashundhara Convention centre-2 , Baridhara. কখনো বসুন্ধরা যাইনি এ জন্য টেনশনে ছিলাম কেন্দ্র খুজে পেতে না জানি কতক্ষন লাগে। তখন মনে হল, ইন্টারনেটে ম্যাপ দেখি তাহলে হয়ত কিছুটা ধারনা পাব। গুগল ম্যাপ আমার দুশ্চিন্তা অনেক কমিয়ে দিল ।
ইন্টারনেটে দূরত্ব ও মাপলাম । বসুন্ধরার মেইন গেট থেকে কনভেনশন সেন্টার পর্যন্ত দূরত্ব ২ কিলোমিটার ! ভাবলাম রিকশা তো থাকবেই কাজেই নো চিন্তা , কিন্তু পরীক্ষার দিন টের পেলাম cng auto তে করেই আসা উচিত ছিল। কারন একটা রিকশা ও নেই, যাদের গাড়ি আছে তারা শা করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে আর আমার মত অভাগারা হাঁটছে ত হাঁটছেই পথ যেন শেষই হয় না। অনেক পরীক্ষার্থীই হাঁটছিল । শেষ পর্যন্ত ৩০ মিনিটে টেস্ট সেন্টার এর সামনে এসে পড়লাম , অনেক দ্রুত হাঁটছিলাম ।
কিন্তু একটা ব্যাপার অদ্ভুত লাগছে ২ কিমি দূরত্ব ৩০ মিনিটে কিভাবে পেরুলাম, আসলেই কি দূরত্ব ২ কি মি? মনের মধ্যে খটকা ! যা হোক গুগল এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।
পরীক্ষা শুরু হবার দেড় ঘণ্টা আগে ই আমি উপস্থিত। এরপর অপেক্ষার পালা। সকালে যা কিছু খেয়ে রওনা হয়েছিলাম তা ইতিমধ্যে হজম হয়ে গেছে। আর এমন কুফা একটা এলাকা আশেপাশে কোথাও খাওয়ার কোন দোকান বা রেস্টুরেন্ট ও নেই।
আমার মত যারা ১ দেড় ঘণ্টা আগে এসেছে তাদের অবস্থা করুণ । ত পরীক্ষার গেট খোলার পর প্রথমেই আমি ঢুকে ৫ গ্লাস পানি খেলাম। জীবনে একসাথে ৫ গ্লাস পানি কখনো খাইনি ! আর একটা কথা, পরীক্ষার হল ছিল চোখ ধাঁধানো সুন্দর , গোছানো । অন্তত আমার চোখে । আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি , কখনো এত সুন্দর হলে পরীক্ষা দেইনি ।
পরীক্ষার হল দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । টেনশন যদিও কিছুক্ষনের জন্য কমল, কিন্ত, কখন পরীক্ষা শুরু হবে ,আর না জানি কেমন বিদঘুটে প্রশ্ন আসে – এ চিন্তায় একটু অস্থির লাগছিল ।
অবশেষে সাড়ে বারটায় পরীক্ষা শুরু হল । আমি বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকাল নয় টায় । কি অবস্থা ! ভেবেছিলাম দুপুর ২ টার মধ্যে তো পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে , কি মজা ! কিন্তু আফসোস ! সেই পরীক্ষা শেষ হল বিকেল চারটায় ।
পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে দেখি বৃষ্টি । কী যন্ত্রণা ! বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হল এক কারনে আবার মন ভাল হল আরেক কারনে। মন খারাপ হল কারন, সারাদিন না খেয়ে থেকে পরীক্ষা দিয়ে আবার কিভাবে এ দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে সেই চিন্তায়, আর মন ভাল হল যখন শুনলাম আমাদের সবার জন্য মানে সব পরীক্ষার্থীর জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে বাস এর বেবস্থা করা হয়েছে মেইন গেট পর্যন্ত । বাসে করে মেইন গেটে এলাম এরপর সেখান থেকে ডাইরেক্ট বাসায়!! যখন বাসায় এসে পৌঁছলাম সময় তখন সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট। অর্থাৎ আমার সারাটা দিন গেল পরীক্ষার টেনশনে ।
বাসায় আসার পর হঠাত একটা গান এর লাইন মনে পড়ল , আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম । এ গানটা কোথায় যেন শুনেছিলাম! এরপর শুরু হল রেজাল্ট এর জন্য প্রতীক্ষা । আজ সেই প্রতীক্ষার সমাপ্তি দ্যা এন্ড !
আমার কষ্ট, আমার আশা , আমার ইচ্ছাগুলোর জন্য আজ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ দুপুরে রেজাল্ট দিল , দেখলাম । OVERALL BANDSCORE:7.5 ।
তারপর আলহামদুলিল্লাহ্ বললাম ।
এই এক পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমার কতধরনের অভিজ্ঞতা যে হল! আমি জানি এখানে ঠিক ভাবে বলতে পারিনি কারন এত লেখার ধৈর্য আমার নেই, তাছাড়া আরও কিছু ঘটনা যেমন পরীক্ষার হলে কিছু অতি স্মার্ট ছেলেমেয়ের কাণ্ডকারখানা লিখতে পারিনি, এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মনে হয় । আর ধৈর্যে কুলাচ্ছে না। দেখি সময় করে আরও কিছু ঘটনা লিখতে পারি কিনা ।
(অসমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।