আরে ভাই বল্লামিতো আমি একজন স্বঘোষিত মফিজ
একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ১১ বছর ধরে ইসলাম ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচার চলছে সারা বিশ্বে শত শত ওয়েবসাইটে। বায়তুল মোকররম জাতীয় মসজিদে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দ্বারা দুইজন সাধারণ মুসল্লির ওপর নির্যাতনের ছবির নিচে সম্পূর্ণ মিথ্যা ক্যাপশনে লিখে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ছবির বিবরণে লেখা হয়েছে- ‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করায় বাংলাদেশের মোল্লারা মসজিদের মধ্যে একজন হিন্দুকে পিটিয়ে হত্যা করছে। হিন্দু লোকটি বাঁচার জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। কিন' তারা তাকে কাফির বলে আঘাত করল এবং সে নির্মমভাবে মারা গেল।
’
২০০০ সালের ১০ জুন তৎকালীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে দেওয়ানবাগী অনুসারীদের। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসরের নামাজের পর এ সংঘর্ষের সময় ইসলমী শাসনতন্ত্র কর্মীদের হাতে নির্যাতানের শিকার হন নূরে আলম সিদ্দিকী এবং গোলাম কুদ্দুস নামে দুজন মুসল্লি। হামলা ও নির্যাতনের সে ছবি ও খবর পরের দিন ১১ জুন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়। কিন' ষড়যন্ত্রকারীরা এই ছবিটিকে বেছে নেয় ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য। তারা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ছবিটির নিচে ক্যাপশন লেখে- ‘বাংলাদেশের মুসলমানেরা মসজিদে একজন হিন্দুকে পেটাচ্ছে।
তিনি বাড়ি যাওয়ার সময় মসজিদের বাইরে ধরা পড়েন। শুক্রবার নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই প্রথম যে হিন্দুকে পাওয়া যায় তাকেই ধরে ফেলে মোল্লারা। এমনি একজন হচ্ছেন বিমল পাঠক। তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে নিহত হওয়ার আগ পর্যন- পেটাতেই থাকে মোল্লারা, আর বলতে থাকে, হত্যা কর এই কাফিরকে। তাকে হাত বাঁধা অবস'ায় হত্যা করা হয়, যদিও বিমল বাঁচার জন্য আকুল আবেদন করে।
’
শত শত ওয়েবসাইটে ষড়যন্ত্রকারীরা এভাবে ছবিটির মিথ্যা ক্যাপশন লিখে প্রচারণা চালাচ্ছে। নূরে আলম সিদ্দিকী নামের নির্যাতনের শিকার ওই মুসল্লির তারা নাম দিয়েছে বিমল পাঠক। । ছবিটিকে বীভৎস করার জন্য তারা নির্যাতনের শিকার মুসল্লির মুখে ও ফ্লোরে রঙ লাগিয়েছে। ছবির মিথ্যা বিবরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের সমূলে উৎখাত করা, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, তাদের জোর করে মুসলমান বানানোসহ নানা বিষয়ে সম্পূর্ণ মনগড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে ওই সব ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশকে একটি বর্বর, সামপ্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি এটিই ইসলামের আসল চেহারা বলে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপজাতীয় মন্তব্য করা হচ্ছে। মজার বিষয় হলো, ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটে ছবিটি প্রকাশ করা হলেও সব ওয়েবসাইটে ছবিটির নিচে হুবহু একই ক্যাপশন লেখা। এতে বোঝা যাচ্ছে, একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে এ ছবিটি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে।
যেসব ওয়েবসাইটে ১১ বছর ধরে এ ছবিটির মিথ্যা বিবরণ লিখে বাংলাদেশ এবং ইসলামবিরোধী অপপ্রচার পরিচালনা করছে তার মধ্যে রয়েছে ফেইথ ফ্রিডম ডট কম, মুক্তমনা ডট কম, ইসলাম ওয়াচ, হিউম্যান রাইটস কমিশন ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিসের ওয়েবসাইট এইচআরসিবিএম ডট ওআরজি, (হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক শাখা এটি) ফ্রিপাবলিক ডট কম, হিন্দুরাষ্ট্র ডট ওআরজি, নো টু ইসলাম। আরো যেসব সাইট ও ব্লগে এ নিয়ে অপপ্রচার চলছে সেগুলো হলো হিসসিপ ডট ওআরজি, গ্রেন্ডেল রিপোর্ট ডট পোস্টারাস, কনজিউমার ডট অ্যাডমানায়া ডট কম, ফায়ারিস্পিটিরিডিট জায়নিস্ট টি ব্লগ স্পট, সোডাহেড টি কম, জনসঙ্ঘ টি কম প্রভৃতি।
অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস'া এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী একটি দেশের মদদে এসব ওয়েবসাইট পরিচালনা করা হয়।
তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর এ মিথ্যা অপপ্রচারের প্রকৃত ঘটনা সমপ্রতি উদঘাটন করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানার পর জঘন্য এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারনেট ও ব্লগ জগতে। জঘন্য ও হীন এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চলছে ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা। ইসলামবিরোধী এ অপপ্রচারের চিত্রটির প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করেছেন সোনার বাংলাদেশ ডট কম নামে একটি সাপ্তাহিক অনলাইনের অ্যাক্টিভিস্ট নামের একজন সত্যানুসন্ধানী ব্লগার।
২০০০ সালের ১০ জুনে বায়তুল মোকাররম মসজিদে মারামারির ঘটনার পরের দিন ১১ জুন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবিসহ ছাপা হয়। এখানে ১১ জুন দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো- ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা গতকাল আসর নামাজ চলাকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঢুকে জামায়াত সন্দেহে দুইজন মুসল্লিকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। আহত গোলাম কুদ্দুস আত্মরক্ষার জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে দৌড়ে মসজিদের ভেতরে ঢোকেন। এ সময় ইশা আন্দোলনের শতাধিক কর্মী লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে মসজিদে ঢুকে গোলাম কুদ্দুসকে বেদম প্রহার করে। রক্তাক্ত গোলাম কুদ্দুস মসজিদের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।
গতকাল বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ শুরুর আগে এই নগ্ন হামলার সূত্রপাত ঘটে। ইশা আন্দোলনের কর্মীরা উত্তর গেটে ওই দুই মুসল্লিকে জামায়াত কর্মী সন্দেহে গণপিটুনি শুরু করে। মুসল্লি নূরে আলম সিদ্দিকী গণপিটুনির একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নূরে আলম সিদ্দিকী ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করে হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা চান। ’ প্রকাশিত ছবিটিও দৈনিক ইনকিলাবে রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।