আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভরদুপুরে রাতদুপুরের গল্পঃ "যুক্তির ওপারে"

১ রাত যত বাড়তে থাকে ততই যেন এক অদ্ভুত ঘোর আছন্ন করে হালের জনপ্রিয় লেখক শিহাব শাহীনকে। এই ঘোরলাগা মায়াবী রাতগুলোতে তার কলমে সৃষ্টি হয় সমকালীন প্রেমের নব আখ্যান। আজ রাতটা শাহীনের কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর ঠেকতে থাকে। তার কলমটা হাঁসফাঁস করতে থাকে নতুন খাতাটায়। অথচ দুদিন বাদেই লেখাটা প্রকাশককে দিতে হবে।

এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল শাহীন। পাশের ঘর থেকে বাবার নাক ডাকার আওয়াজ আসছে। এই আওয়াজটা শাহীন এর খুব প্রিয়। এই আওয়াজ শুনলে শাহীন ভাবে সে তার বাবার অনেক কাছাকাছি। বাবা যেন আগলে রয়েছে তাকে।

এমন সময় বেজে উঠল মোবাইলটা। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল মেয়েলী কন্ঠের আওয়াজ, “শাহীন ভাই কেমন আছেন?” শাহীন বিরক্ত হয় না। সে তরূণ ব্যাচেলর লেখক। মেয়ে ভক্তদের তার প্রতি আগ্রহ টাকে সে উপভোগ করে। তার চেয়ে বড়কথা মেয়েটিকে সে চিনতে পেরেছে।

মেয়েটি গত দুইরাত ধরেই ফোন করছে। অসম্ভব সুন্দর কন্ঠ!নাম বলেছে সুতপা। শাহীন অবশ্য বিশ্বাস করে নি!! তার কারণ হলো সুতপা নামটা শাহীন এর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস এর নায়িকার নাম। শাহীন উত্তর দেয়, “এই তো ভালোই”। দু চার কথায় কথা জমে ওঠে।

শাহীন বলতে থাকে, “আপনি তো আপনার আসল নামটা বললেন না। আপনাকে সুতপা ডাকতে একদম ভালো লাগছে না। আমার গল্পে তো এই মেয়েটা মারা যায়। তার চেয়ে আমি বরং আপনাকে নীলা বলে ডাকি। আমার নতুন উপন্যাসের নায়িকা।

” খিলখিল করে হাসতে থাকে ওপাশের মেয়েটা। হাসি থামিয়ে বলে,“বাদ দিন তো। আপনি বরং একটা ভূতের গল্প লেখেন। নায়িকার নাম দেন সুতপা। জানেন অনেক দিন না ভয় পাই না।

খুব ভয়ের একটা ভূতের গল্প লেখেন না। একটা বাচ্চা ভূতের গল্প, একটা মা ভূতের গল্প। খুব ভয়ংকর কিছু। ” শাহীন হেসে বলে, “এই রাত দুপুরে ভূতের কথা! আপনি তো খুব সাহসী মেয়ে। আপনাকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা আমি করবো না।

” “আপনি না খুব খারাপ। ”বলেই ফোনটা রেখে দিল মেয়েটি। স্বরটা অনেক চেনা মনে হয় শাহীনের। সারাক্ষণ কানে বাজতে থাকে শেষ কথাগুলো “আপনি না খুব খারাপ”। ঘোরলাগা শাহীন টেনে নেয় খাতাটা, আগের লেখাগুলো বাদ দিয়ে নতুন পৃষ্ঠায় খস খস করে লিখতে থাকে।

অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে চলতে থাকে কলম। ও ঘরের বাবার নাক ডাকার আওয়াজ ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে শাহীনের কানে। ২ ডিবি পুলিশের তরুণ অফিসার শোভন চৌধুরি। নতুন কেসটা সলভ করতে এসে একদম ফেসেঁ গেছে সে। মেয়ে ঘটিত কেস বরাবরই এড়িয়ে চলে শোভন।

সুমা মেয়েটার আত্মহত্যা কেসটা ডিবির কাছে এসেছে কা্রণ সুমার বাবা একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। দুদিন ধরেই চেষ্টা করেও কোন কূল কিনারা করতে পারছে না শোভন। একদম স্বাভাবিক মেয়ে ছিল সুমা। প্রেমঘটিত কিংবা পারিবারিক কোন ব্যাপার নেই। আবার এটা যে পরিষ্কার আত্মহত্যা তাতেও কোন সন্দেহ নেই।

সুমার ঘরে বসে ভাবতে থাকে শোভন। সুমার ঘরে সুমা যেদিন মারা গেল সেদিনকার পত্রিকা। পত্রিকাটা দেখতে থাকে শোভন। হঠাৎ একটি জায়গায় চোখ আটকে যায় শোভনের। জনপ্রিয় উপন্যাসিক শিহাব শাহীন এর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত উপন্যাস “মায়াবতী”র শেষ কিস্তি।

ঠিক তার উপরেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “আপনি না খুব খারাপ। ”শোভনের মাথায় কি যেন একটা খেলা করে। দ্রুত বের হয় সে। “মায়াবতী” উপন্যাসের সবগুলো কিস্তি সংগ্রহ করে শোভন। রাতে খাবার খেয়েই পড়তে শুরু করে সে।

সুতপা নামের এক মেয়েকে নিয়ে গল্প। অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে তার ছোট বাচ্চাটিকে কঠিন বাস্তবের স্বীকার হয়ে জীবনের সাথে লড়াই করতে থাকে। এই লড়াই এ শেষে হার মানে সুতপা। বাচ্চাটিকে সহ লাফিয়ে পড়ে উচুঁ ছাদ থেকে। খুব ট্র্যাজিক গল্প।

চোখে পানি চলে আসে শোভনের মত পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তারও। উপন্যাস এর সর্বশেষ কিস্তির আগের কিস্তির দিন ছাপা পাঠকের চিঠিতে পাওয়া গেল সুমার চিঠি। “শিহাব ভাই, আপনি না খুব খারাপ। সুতপা কে খালি কস্ট দেন। ও কেন আত্মহত্যা করবে।

আপনি ওর সব কস্ট দূর করে দিন না। ও মরলে কিন্তু আমিও মরবো আবার আপনাকেও মারবো। ” শোভন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কখন যে সকাল হয়ে গেছে শোভন খেয়াল করে নি। কেস টা সলভ করে এখন চিন্তামুক্ত শোভন।

ফ্রেশ হয়ে টিভি টা ছাড়লো সে। টিভি তে ব্রেকিং নিউজঃ “ জনপ্রিয় উপন্যাসিক শিহাব শাহীনের গতরাতে অস্বাভাবিক মৃত্যু। ” শোভনের মাথাটা হঠাৎ করেই ঘুরতে থাকে। ৩ প্রয়াত উপন্যাসিক শিহাব শাহীনের মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া শেষ উপন্যাসটি প্রকাশ করলেন প্রকাশক। উপন্যাসের নাম “মায়াবতী আবার”।

সেই সুতপার গল্প। সুতপা এখানে মরে না। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বেচেঁ থাকে সে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।