ব্লগিং জগতে অশিক্ষিত বালক নামেই রিচিত আমি। ওয়েবসাইট নিয়ে পাগলামি করার টুকটাক অভ্যাস। তাই, পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুদেরকে নিয়ে টুকটাক ওয়েবসাইটের পাগলামি নিয়ে আছি। আমার কাজকর্ম দেখুন এখানেঃ http://banglatheme.com/ একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর প্রাথমিক স্তর। কেননা প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার প্রথম সোপান।
এ স্তরেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবনের ভীত রচিত হয়। এ স্তরে শিক্ষার্থী যা শিখবে, যেভাবে শিখবে তারই প্রতিফলন সে তার ভবিষ্যত জীবনে ঘটাবে। তাই বিশ্বের প্রতিটি দেশই প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। এ স্তরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে, পাঠ্যপুস্তক কেমন হবে, পাঠ্যপুস্তক কী থাকবে, শিক্ষকের যোগ্যতা কী হবে, শিক্ষার্থী কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করবে ইত্যাদি সবই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নির্র্ধারিত হয়।
একটি দেশের জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে পরিণত করার অন্যতম একটি উপায় হলো শিক্ষা।
বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের আর্থ -সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। পূর্বেই বলেছি শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্তর হচ্ছে প্রাথমিক স্তর। তাই বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে ১৯৯০ সালে সরকার এ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। বর্তমানে সরকারীভাবে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।
অন্যদিকে, যারা শিক্ষার সাথে যুক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পরবর্তী শিক্ষাস্তরে গেলেও অনেক শিশু আবার কর্মজীবনে প্রবেশ করে। তাই এদের উভয়েরই কথা চিন্তা করে প্রাথমিক শিক্ষার বিষয় কাঠামো নির্ধারণ করা দরকার যাতে এই শিক্ষা একজন শিশুর ব্যবহারিক সাক্ষরতা নিশ্চিত করে এবং শিশুর মৌলিক শিখন চাহিদা প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে পূরণ হয়। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে যাতে দেশপ্রেম, নাগরিকতাবোধ, কর্তব্যবোধ, সৃজনশীলতা, অধ্যবসায়, সদাচার, ন্যায়-নিষ্ঠা বোধের উন্মেষ ঘটে।
প্রত্যেকটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দুটি অপরিহার্য দিক হলো শিক্ষার পরিমাণগত বিস্তার ও গুণগতমানের উৎকর্ষ সাধন। এ লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় আলাদা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন, ১৮৩৪টি সহকারী থানা পরিষদের উপর প্রাথমিক শিক্ষার দায়-দায়িত্ব ন্যস্তকরণ, শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ প্রদান, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারীকরণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
কিন্তু এসব ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও প্রাথমিক শিক্ষালাভের উপযুক্ত বয়সের শতকরা ৯০ ভাগ শিশুকে বিদ্যালয় ভর্তি করা ও তাদের ঝরে পড়া রোধ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
এই প্রেক্ষাপটে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় (১৯৮৫-৯০) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষাক্রম নবায়ন ও পরিমার্জনের একটি বিস্তৃত কার্যক্রম গ্রহণ করে। এই কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষক, প্রশিক্ষক, বিষয় বিশেষজ্ঞ ও গবেষকগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সংশোধন ও পরিমার্জনের ভিত্তিতে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক শিখনক্রম প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়। সেখানে ১৯টি উদ্দেশ্য ও ৫৩টি প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করার পাশাপাশি প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো সুনির্দিষ্ট করা, শ্রেণীভিত্তিক যোগ্যতাসমূহও চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো পরিমার্জন করে ৫০টি করা হয়।
সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার পটভূমিতে এ স্তরের শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য একটি বিষয় আমাদের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
আর তা হলো এই স্তরের শিক্ষা শেষে শিশুর কতটা জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে বলে আমরা আশা করি তা সুনির্দিষ্ট করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শিশুর শিক্ষা শুধু তার বর্তমান চাহিদা মেটাবার জন্যই নয়, ভবিষ্যত জীবনে সে যেন একজন সক্ষম সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে সে জন্য তাকে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান যুগে দ্রুতগতিতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন ধারার পরিবর্তন হচ্ছে। তাই আজকের দিনের শিশুকে এমন যোগ্যতা ও সামর্থ্য অর্জন করতে হবে যেন ভবিষ্যৎ পৃথিবীর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সে একজন সার্থক মানুষ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে জীবন যাপন করতে পারে। এ সামর্থ্য অর্জন নিশ্চিত করার জন্য তাই অনাবশ্যক তত্ত্ব ও তথ্য শেখার পরিবর্তে একান্ত আবশ্যকীয় কতকগুলো যোগ্যতা অর্জনে শিশুকে সহায়তা করতে হবে।
পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে কোন জ্ঞান, দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গি পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত করার পর শিশু তার বাস্তব জীবনে প্রয়োজনের সময়ে তা কাজে লাগাতে পারলে সেই জ্ঞান, দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে তার একটি যোগ্যতা বলা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলা বিষয়ের পঠন-পাঠনের মাধ্যমে শুদ্ধভাবে ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পারার দক্ষতা আয়ত্ব করার পর শিশু যদি তার পারিবারিক বা সামাজিক পরিবেশে শুদ্ধ ভাষায় ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পারে তবে সেটি তার যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
এভাবে পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিশুরা যে যোগ্যতাগুলো অর্জন করবে বলে আশা করা যায় সেগুলোকে বলা হবে প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা।
এভাবে, সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় এবং বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষাক্রম পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও সংস্করণ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা সামগ্রীর মূল্যায়ন ও পরিমার্জন করা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ের নতুন পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য পঠন-পাঠন সামগ্রী প্রণয়ন করা হয়।
কিন্তু, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, প্রাথমিক স্তর শেষে শিক্ষার্থীর যতটুকু যোগ্যতা অর্জন করা দরকার তার অনেকগুলোই সে অর্জন করতে পারছে না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় (গৌতম, শ্যামলী এবং জুঁই, ২০০৮) দেখা গিয়েছে যে, পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা যে সব যোগ্যতা অর্জন করবে, তাতেও অনেক যোগ্যতা বাদ পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
এডুকেশন ওয়াচ (২০০০) এর গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সম্পন্ন করার পর কাগজে-কলমে পরিমাপযোগ্য ২৭টি প্রান্তিক যোগ্যতার (মোট ৫০টি প্রান্তিক যোগ্যতা রয়েছে) মধ্যে দুই শতাংশেরও কম শিশু সবকটি যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে।
এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে, শিক্ষাবিদ ও গবেষক করুণাময় গোস্বামী (২০১১) কালের কন্ঠে লিখেছেন, ”আমাদের দেখতে হবে কোন পর্যায়ের শিশুর মৌলিক বিষয় জানার পরিধি কতটুকু হবে।
সেই মৌলিক বিষয়ের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ীই তাদের পাঠ্যপুস্তক রচিত হবে। একবার যদি বিষয়টি ঠিক করে ওঠা যায়, তাহলে পরবর্তী কাজে সহজে হাত দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে একটি জিনিসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানাবো। সেটি হচ্ছে প্রান্তিক যোগ্যতা। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিবেচনায় এ বিষয়টি যে আছে, তা আমরা জানি।
কিন্তু পাঠ্যপুস্তক যারা লিখছেন তাঁদের লেখালেখি দেখে মনে হয়, প্রান্তিক যোগ্যতার প্রশ্নটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। যেমন, আমরা যদি মনে করি, প্রথম শ্রেণীর শিশুটি ’ক’ সংখ্যক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠবে, তাহলে একবারেই সুচিন্তিতভাবে স্থির করতে হবে ’ক’ প্রান্তিক যোগ্যতা বলতে আমরা কী বোঝাচ্ছি। ”
এমতাবস্থায়, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমগুলো সঠিকভাবে ও অত্যন্ত বিচক্ষতার সাথে পর্যালোচনা করে এর সবলতা ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ করূণাময় গোস্বামী প্রদত্ত সাজেশন্সটি আমি উল্লেখ করতে চাই। তিনি একটি তুলনামূলক মূল্যায়নের কথা বলেছেন।
যেমন: বাংলাদেশে একজন অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার সঙ্গে ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম শ্রেণী পাস ছাত্রের প্রান্তিক যোগ্যতার স্বরূপটি কী। ক্রমে ক্রমে এ ব্যাপারটিকে ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয় করা যেতে পারে। তবে সর্বাগ্রে গৃহীত হোক প্রান্তিক যোগ্যতা নিরূপণের ব্যাপার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ রচনা। শিশুদের যেটুকু শেখানো দরকার, সেটুকু শেখানোই ভালো। তার সঙ্গে একটু জায়গা থাকা দরকার, যেখানে আনন্দের আলো প্রবেশ করতে পারে।
আমরা একেবারে সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিচ্ছি। শিশুরা সেই আলোহীন একটা ছোট্ট এলাকায় হাবুডুবু খাচ্ছে। একটা ভয়ংকর অর্থহীন প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে নিয়ে এদের একেবারে সেই রস-কসহীন আম খাওয়ার মতো একটা কিছু খাওয়া-খাওয়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে মা-বাবা অধীর আগ্রহে বারান্দায় বা মাঠে; মাঠ না থাকলে পথে দাঁড়িয়ে বসে অপেক্ষা করছেন। এর পরিণাম কী সে ব্যাপারে পরে লিখতে চাই। তবে আপাতত এটুকু বলে শেষ করি যে আমাদের দেশের শিশুদের লেখাপড়ার ব্যাপারটি যেন আরো একটু সুচিন্তা এবং আনন্দবুদ্ধির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
পরিশেষে কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকুই বলবো, শিশুরা হচ্ছে ব্ল্যাংক একটি সিডির মতো। ব্ল্যাংক সিডিতে যা প্রবেশ করাবেন তাই রেকর্ড হবে। তাই, একটু বুঝে শুনেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিশুরা কেন প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে পারছে না? কোথায় ঘাটতি রয়েছে? শিক্ষাক্রমে? পাঠ্যপুস্তকে? শিক্ষাদান পদ্ধতিতে? শিক্ষকের মধ্যে? নাকি শিক্ষার্থীর মধ্যে? এগুলো অতিসত্বর খুঁজে বের করে একটি যুগোপযুগী শিক্ষাক্রম তথা শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের সময় কি এখনো আসেনি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।