আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বেড়েই চলেছে সাইবার ক্রিমিনাল

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জাল পেতেছে সাইবার ক্রিমিনালরা। বিভিন্ন অফিসেও তারা সক্রিয়। সাইবার ক্রিমিনালদের জালে আটকা পড়ে এরই মধ্যে অনেকেই খুইয়েছেন সম্ভ্রম। কেউ কেউ মান-সম্মান হারিয়ে এখন দিকভ্রান্ত। রাজধানীতে সক্রিয় এমন শহস্রাধিক সাইবার ক্রিমিনাল।

বিশেষ করে তাদের নজর টিনএজদের দিকে। বিভিন্ন কৌশলে, চাপ প্রয়োগ করে, ভয় দেখিয়ে, গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও করে নগ্নচিত্র ইন্টারনেটে ছাড়া হচ্ছে। ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এছাড়া নগ্ন ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হচ্ছে ভুক্তভোগীকে। উদ্দেশ্য হাসিলের পর নগ্ন ভিডিও চিত্র বিভিন্ন ব্লগেও লিংক দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।

ফলে মুহূর্তেই সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশে-বিদেশে। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২ সাইবার ক্রিমিনাল হাবিবুর রহমান ও আশিকুর রহমানকে। তাদের কম্পিউটার থেকে ১২ নারীর একান্ত মুহূর্তের নগ্ন ভিডিওচিত্র উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব বলছে, সব নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু সম্মান হারানোর ভয়ে কেউই মুখ খোলেনি।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই সাইবার ক্রিমিনাল বিস্তারিত বর্ণনা দেয় তাদের অপকর্মের। জানায়, একের পর এক নারীকে কিভাবে গার্মেন্টসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলতো তারা। তারপর গোপন ক্যামেরায় নগ্নচিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো। গত ২৪শে সেপ্টেম্বর ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ভিডিওচিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের ২ বছর করে কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা।

৮ম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে পারভেজ সরকার নামের এক প্রতারক উত্তরায় তার এক বন্ধুর মেসে নিয়ে যায়। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই ছাত্রীর নগ্ন ভিডিওচিত্র ধারণ করে। পরে ওই নগ্ন চিত্র প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ওই ছাত্রী র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করলে র‌্যাব পারভেজ সরকারকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার দুই সহযোগী মাহবুর হাসান ও উদয় শর্মা ওরফে উৎসকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদেরকে একটি নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে দাবি করে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় রফিকুল ইসলাম জুয়েল নামের এক বড় মাপের সাইবার ক্রিমিনালকে। প্রেমের অভিনয় করে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে সে। একান্ত মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে ওই ছাত্রীকে মাসের পর মাস ধর্ষণ করা হয়। ওই মেয়েটি র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করলে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতো প্রতারক জুয়েল। তার কাছে রিচার্জ করতে আসা সুন্দরী মেয়েদের মোবাইল নম্বর নিয়ে সে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েটির নগ্নচিত্র ধারণ করত। তার দোকানে থাকা কম্পিউটার থেকে শ’ শ’ নগ্ন ভিডিওচিত্র উদ্ধার করা হয়। গত ২৯শে এপ্রিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইমন নামের এক প্রতারককে।

ইমন এক তরুণীকে ধর্ষণ করে এবং ওই চিত্র মোবাইল ফোনের ভিডিওতে ধারণ করে। পরে ওই তরুণীর পিতার কাছে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিওচিত্র পাঠিয়ে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ইমন বিডিক্যাম্পাসনিউজ.কম কে জানায়, সে প্রথমে ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি তার পিতা। পরে তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায় সে।

সেখানে ওই তরুণীকে ইয়াবা সেবন করানো হয়। তরুণীটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করে ইমন। গত বছর ১৪ই অক্টোবর নারিন্দা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পেশাদার সাইবার ক্রিমিনাল জাহাঙ্গীর আলম রাজুকে। মুগদা এলাকার এক তরুণীর নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। রাজু তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ছবি তোলাসহ নানা অপকর্মের জন্য নারিন্দার ২১ নম্বর বাড়িটি ব্যবহার করতো।

বাড়িটির চার তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে, কক্ষের বিভিন্ন স্থানে গোপন ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে সে। এরপর প্রেমের অভিনয় করে, বায়িং হাউজে চাকরি দেয়ার নামে, সিনেমা-নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে তরুণীদের ফুঁসলিয়ে নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটটিতে নিয়ে তুলতো। একবার সেখানে গেলে রাজুর হাত থেকে মুক্তির আর কোন উপায় থাকতো না। র‌্যাবের গোয়েন্দারা বলছেন, তারা রাজধানীতে সহস্রাধিক পেশাদার ক্রিমিনালকে শনাক্ত করেছেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও নামী স্কুলগুলোতে পর্নোগ্রাফি হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেরা এসবে জড়িয়ে পড়ছে। বান্ধবী বা ঘনিষ্ঠ কোন আত্মীয়কে তারা ব্ল্যাকমেইল করছে। বড় ধরনের সাইবার অপরাধের খবর আসে এ বছর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মডেল কন্যা প্রভা’র পর্নোগ্রাফি থেকে। এরপর আরও অনেক মডেল ও চিত্র তারকার পর্নোগ্রাফি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। নাইট ভিসন প্রোগ্রাম: কম্পিউটারের একটি সফটওয়ারের ম্যাধ্যমে পোশাক পরা যে কোন নারীর ছবি নগ্ন করে ফেলা সম্ভব বলে জানিয়েছে র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্র।

এ ধরনের প্রোগ্রাম অনেক সাইবার ক্রিমিনালের হাতে চলে গেছে। সাইবার ক্রিমিনালরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের লাইভ পিকচার ধারণ করে সেটিকে নগ্ন করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সূত্র বলছে, সাইবার ক্রিমিনালদের প্রথম টার্গেট কমবয়সী নারী। সহজলভ্য পর্নোচিত্র: মুঠোফোনে পর্নো ভিডিও চিত্র রাখাও অপরাধ। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় মোবাইল পর্নোগ্রাফি এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ছে দেদার।

অনেকটা প্রকাশ্যেই গান ও রিংটোন লোডের দোকানে দেশীয় পর্নোচিত্র মোবাইলের মেমোরি কার্ডে লোড করে দেয়া হচ্ছে। এমনকি অনেক পুলিশ কর্মকর্তার মোবাইল ফোনেও পর্নো ভিডিও রয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চালানো একটি জরিপে বলা হয়েছে, শতকরা ৭৭ ভাগ তরুণ এসব পর্নোগ্রাফির দর্শক। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ কোন উদ্যোগও নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে একটি সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখনও তা চালু হয়নি।

বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তাদের অনেককেই পুলিশের সাধারণ ইউনিটগুলোতে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বিডিক্যাম্পাসনিউজ.কম কে বলেন, সাইবার ক্রিমিনালদের প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো জন সচেতনতা। তবে কোন নারী যদি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন তার উচিত বিলম্ব না করে পুলিশের সহায়তা নেয়া। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বিডিক্যাম্পাসনিউজ.কম কে বলেন, দেশীয় পর্নোসাইটগুলো বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে এগুলোকে দু’টি ক্যাটিগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

একটি পেশাদার যৌনকর্মীদের দ্বারা তৈরি পর্নোগ্রাফি, অন্যটি গোপনে ধারণ করা নারীর একান্ত মুহূর্তের নগ্ন ভিডিওচিত্র। এসব ভিডিওচিত্র নিয়ে কাজ করছে র‌্যাব। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা বলেন, সাইবার ক্রিমিনালদের হাত থেকে বাঁচতে উঠতি বয়সী মেয়েদের বেশি করে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে সহজে কোথাও যাওয়া চলবে না। এমনকি কাউকে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, আইডি বা ব্যক্তিগত ছবিও দেয়া যাবে না।

এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের জানাতে হবে। পলাশ । ঢাকা থেকে(বিডিক্যাম্পাসনিউজ.কম)। ২৮-১১। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.