গ্রামের কাগজ ---- তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : ঃঃঃঃ---
সাতক্ষীরার তালায় প্লাবিত এলাকায় ত্রান বিতরণে বে-সরকারী সংস্থা সুশীলনের অনিয়ম এবং জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতির কারনে বানভাসী মানুষ ফুঁসে উঠেছে। শুক্রবার সুশীলনের দেওয়া ত্রান কার্ড নিতে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে বানভাসীরা মারপিটের শিকার হয়েছে। এঘটনায় শনিবারের পর গতকাল রোববার সকালে তালা উপজেলা সদরে জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু এবং সুশীলনের ত্রান নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে বানভাসী মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এসময় জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম মুক্তি, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, উপজেলা আওয়ামীলীগনেতা কামাল হোসেনসহ প্রায় দু'শতাধিক এলাকাবাসী বানভাসীদের মিছিলে যোগদান করে তাদের সাথে একত্বতা প্রকাশ করেন। �
বানভাসী মানুষের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যানের মনগড়া সিদ্ধান্ত আর স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত বানভাসীরা ত্রান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ সুযোগে ত্রান দেওয়ার নামে ফায়দা লুটছে সুশীলন সংস্থার জনৈক কর্মকর্তা।
জানাগেছে,গত শুক্রবার জালালপুর ইউনিয়নের আম্রকানন দাখিল মাদ্রাসায় বে-সরকারী সংস্থা সুশীলন ১৩ 'শ পরিবারের মাঝে ত্রানের কার্ড বিতরন করছিল। কার্ড বিতরনের সময় ঐ এলাকার জনৈক কাশেম,খোরশেদসহ একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি ত্রান কার্ড পাওয়ায় বঞ্চিত বানভাসীরা তার প্রতিবাদ করে। একপর্যায়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে বানভাসীরা সুশীলন কর্মকর্তা ফারুক হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিটু কাশেম,হাফিজুর ও রফিকুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে সুশীলন কর্মকর্তা ফারুককে উদ্ধার করতে যায়।
এসময় চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিটুসহ তার লোকজনের হাতে চরকানাইদিয়া গ্রামের আয়েশা বেগম,ওমর আলী শেখ,শহিদুল,আসলাম,ওসমান আলীসহ প্রায় ১০ জনকে মারপিট করে। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার প্রতিবাদে বানভাসীরা গতকাল রোববার আবারও তালা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
মারপিটের শিকার চরকানাইদিয়া গ্রামের আয়েশা বেগম অভিযোগ করে বলেন,সংসারে লোক ৫ জন। বাড়ি ডুবে যাওয়ায় দীর্ঘ দুই মাস রথখোলা আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম।
বাড়ি থেকে পানি কমে যাওয়ায় ৫ দিন আগে বাড়ি গিয়েছি। বাড়ির সবাই কর্মহীন। ত্রানই এখন একমাত্র সম্বল। সেটি নিয়ে দলবাজি হওয়ায় আমরা বঞ্চিত হয়েছি। একই গ্রামের ওমর আলী শেখ,শহিদুল আসলাম,ওসমান আলীসহ অনেকে বলেন,ত্রান দেওয়ার সময় আমাদের নাম লিখে নিয়ে গেলেও ইউপি চেয়ারম্যান তার মনগড়া ভাবে ত্রান বিতরন করছে।
একই পরিবারের মাঝে একাধিক ত্রান কার্ড দিয়েছে। আমরা কোন ত্রান পায়নি। শুক্রবার কার্ড আনতে গেলে আমাদের মারপিট করেছে।
কানাইদিয়া গ্রামের ফতেমা বেগম অভিযোগ করে বলেন,এপর্যন্ত বহু ত্রান এসেছে। যা চেয়ারম্যান তার ইচ্ছা মতো বিতরন করেছে।
সহ্য করতে করতে পিঠে দেয়াল ঠেকে গেছে। এজন্যে এখন রাস্তায় নেমেছি। কৃষ্ণকাটি গ্রামের ফিরোজা বেগম বলেন,প্রায় ৩িন মাস রাস্তার উপর রয়েছি। ত্রান চেয়ারম্যান তার ইচ্ছা মতো বিতরন করেছে। কৃষ্ণকাটি গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন,বাড়ি সব শেষ হয়ে গেছে।
ত্রানই এখন সম্বল। সেই ত্রান নিতে গেলেও সংস্থার কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করা লাগে। না হলে ত্রান কার্ড পাওয়া যায় না। কৃষ্ণকাটি গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা দলিল উদ্দীন মোড়ল বলেন,চেয়ারম্যান তার মনগড়া ভাবে ত্রাণ বিতরন করছে। তার দলের লোককে বেছে বেছে ত্রান দিচ্ছে।
আমার নাম কয়েকবার লিখলেও ত্রান দেয়া হয়নি। বাড়ির সব কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। এমন কথাগুলো শুধু উপরোক্ত মানুষের নয়,বানভাসী মানুষের এমন হাজার অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিটু এবং বেসরকারী সংস্থা সুশীলনের বিরুদ্ধে।
্এ ব্যাপারে জালালপুর ইউনিয়ননের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন,ত্রান কার্ড বিতরনের সময় কর্মকর্তাকে বানভাসী মানুষ অবরুদ্ধ করে রাখে।
এসময় আমি তাকে ছাড়াতে গেলে সেখানে ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনা ঘটে। আর ত্রান বিতরনে কোন অনিয়ম হয়নি। সুশীলন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমরা ১৩'শ পরিবারকে ত্রান দেবো। এখানে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৩ হাজার পরিবার। তাছাড়া ত্রান কার্ড সুষ্টভাবে বিতরন করা হয়েছে।
তবে গুটিকয়েক লোক কার্ড বিতরনে বাধাগ্রস্থ করেছে। তালা উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সুশীলন কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম মিন্টু বলেন,আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। যদি দূর্নীতির কোন প্রমান পায় সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।