যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না – আবিদ আজাদ যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে যুদ্ধ শেষের ভাঙা-পোড়ো একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমি তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে স্কার্ট পরা বুড়ি- বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা; তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ ঝুলে থাকবে তছনছ তারের জটিলতা লতাগুল্মময় ক্রেনের কংকাল, জং পড়া লোহালক্কর আর হিংস্র ঘাসের মধ্যে ধু-ধু করবে তোমার জীবন ভয়ার্ত সব মিলিটারী ভ্যান আর উল্টে থাকা ট্রলির পাশে ক্ষত-বিক্ষত একটা চাঁদ ওঠা রানওয়ের মতো তুমি মুখ লুকিয়ে রাখবে গা ছম-ছম করা জ্যোৎস্নায় । যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে জনহীন কোন পেট্রোল পাম্পের দেয়াল ঘেঁষে একটা মরা শিউলি গাছের মতো বেঁচে থাকবে তুমি তোমাকে ঘিরে হা- হা করবে নিদাঘ রাত দেখবে পর্যুদস্ত একটা হেলমেটের ফাটল দিয়ে দিয়ে মাথা তুলছে একগুচ্ছ সবুজ তৃণ শুনবে ধ্বংস্তুপের মধ্যে অর্ধডোবা সূর্যাস্তের মতো আগুনলাগা বিলুপ্তপ্রায় লাউঞ্জ থেকে ভেসে আসছে প্রেত হাসির শব্দ তোমাকে ঘিরে নামবে এক জোড়া জনশূন্য বুটের স্তব্ধতা । যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে প্রতিদিন দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু হবে তোমার ভোর সকাল সাতটা থেকে অনবরত টেলিফোন আসতে থাকবে ‘সান স্ট্রোকে’র সংবাদ তোমার পাশের সাততলা জানলা থেকে লাফিয়ে পড়বে কোঁকড়া চুলের যুবক একদিন গলায় খুর চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়বেন সেই বুড়ো সবুজ রঙ্গের গলাবন্ধ পরে স্টিক হাতে যিনি মর্নিংওয়াকে বেরুতেন রোজ একটি কিশোরী তার আব্বার রেজর থেকে লুকিয়ে নেবে ব্লেড গভীর জ্যোৎস্নাঙ্কিত স্ট্রীটের মাথায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়বে কালো রঙ্গের একটি গাড়ি একজন মানুষ শিরিষ গাছের ভিতরে টিপে ধরবে আরেকজন মানুষের গলা পার্কের ঝরাপাতার উপর সারারাত ধরে শিশিরে ভিজে যাবে মৃত তরুণীর হাঁটুর ভাঁজ । যে শহরে আমি নাই আমি থাকবো না সে শহরে চরম দুর্বোধ্যতম হয়ে বেড়ে ওঠবে তোমার বিষন্ন সন্তান বার বার ক’রে বদলাতে হবে তার ঝাপসা চোখের চশমার গ্লাস তুমি তাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে ভোরের ইস্কুলে কিন্তু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আর কোনদিন ফিরে আসবে না নীল হাফ প্যান্ট পরা তোমার ছেলে, আসবে না , আসবে না তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে ইস্কুল বাড়ির সামনে, রাস্তার ওপারে । যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে নিয়মিত দুধের বোতল দিয়ে যাবে গাড়ি কিন্তু সে দুধে মেশানো থাকবে গুঁড়ো বিষ তোমার ফ্রিজের ভিতরে মরে পরে থাকবে শাদা ইঁদুর তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বসে থাকবে একটা তেলাপোকা তার রঙ হবে মারাত্মক রকম লাল তোমার ওয়ারড্রোবের ভিতর থেকে হ্যাঙ্গার শুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়বে মধ্য রাতে কাপড়-চোপড় । তুমি পালাতে চাইবে পালাতে চাইবে পালাতে চাইবে ছুটে পালাবে ছুটবে ছুটতে ছুটতে ছুটতে তুমি নিচতলার জানালার একখন্ড পর্দার মতো আটকে যাবে বারবার তুমি উদ্র্ধশ্বাসে ছুটে পালাবে ঘুমের ভিতর কিন্তু মৃতশহর শাণিত করে রাখবে তার সমস্ত রাস্তার বালি তারার ভিতর থেকে সারারাত ধরে খ’সে পড়বে চূন হঠাৎ লক্ষ লক্ষ হাতের করতালি বেজে উঠবে আতংকিত মোড়ে মোড়ে দেখেব শাদা ট্রাফিক দাঁড়িয়ে আছে বাজপড়া তাল গাছের মতো তার হাত দু’টো ঝুলছে চাঁদহীন মরা ডালের মতো চোখে লোমহর্ষক দুটো গর্তের ভিতর দিয়ে চলেছে বিষাক্ত পিঁপড়ের বাহিনী তার মাথার ফাটলে গজিয়েচে একটা বটচারা তোমার ভয়ার্ত চিৎকারে শুধু সেই মৃত ট্রাফিকের লাল হা-এর ভিতর থেকে উড়ে যাবে একটা বনটিয়া । যে শহরে আমি থাকবো না সে শহরে লিফট তোমাকে নিয়ে নেমে যাবে পাতালে তোমাকে নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পার্কের ধারের খাদে ছিটকে পড়বে বাস লেকের হাঁসগুলি গুগলির মতো ঠুকরে খাবে মানুষের চোখ আর খুব বিকাল বেলায় তুমি ক্লান্ত হ’য়ে ক্লান্ত হ’য়ে ক্লান্ত হ’য়ে ফিরবে ঘরে কিন্তু তোমার ঘরের নিঃসঙ্গ দরোজা তোমাকে খুলে দিবে হু -হু শীতার্ত প্রান্তর তোমার সোফা তোমাকে বসতে দিবে না পাঠিয়ে দেবে বিছানায় কিন্তু বিছানা তোমাকে শুতে দেবেনা দাঁড় করিয়ে রাখবে হিমশীতল জানালায় তুমি বাথরুমে যাবে, শাওয়ার খুলে দিলে ঝরবে রক্ত তুমি বেসিনে নুয়ে পড়বে, পানির ঝাপ্টা দিতেই মনে হবে কার গলা যেন পাটিয়ে দিচ্ছে যক্ষার ফুল তুমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, দেখবে বিভৎস চিড় ধ’রে আছে আয়নায় । সেই চিড় ধরা আয়নার ভিতরে তারপর ক্রমশঃ হারিয়ে যাবে তোমার আর্তনাদ আর তোমার মনে হবে , আমি নেই ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।