আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেভাগা আন্দোলনের ভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে বাম রাজনীতি

দুনিয়াতে শুধু দুই প্রকার মানুষ আছে। একদল ভাল, একদল খারাপ। এর বাইরে আর কোন বিভেদ নাই। স্বকৃত রহমান: পাকিস্তান আমলে কমিউনিষ্ট নেত্রী ইলা মিত্রের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গড়ে ওঠেছিল তেভাগা আন্দোলন। সাওতাল বিদ্রোহের সেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা দিন দিন স্থবীর হয়ে পড়ছে।

যৌথ আন্দোলনে বাম নেতারা যতটা তৎপর, ততটা নন দলীয় ব্যানারে। অতীতে কৃষক আন্দোলন, অর্পিত সম্পত্তি আইন, আর বর্তমানে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ, মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিসহ তেল-গ্যাস রক্ষার ইস্যুগুলোতে আন্দোলনে তাদের রাজনীতি সীমাবদ্ধ। নেতাশূন্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির একমাত্র ভরসা এখন সিনিয়র নেতা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। তিনিই এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। কয়েক বছর ধরে দলীয় কার্যক্রম বলতে কেন্দ্রিয় কর্মসূচীর কার্ড বিতরন করতে দেখা গেছে।

আশির দশকে রাজনীতিতে সুদৃঢ় অবস্থান ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ)। শিবিরে কর্মীদের হাতে খুন হয়েছিলেন সেই সময়ের জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন। সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আতাউর রহমানসহ অনেক নেতার দল ত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে এখন আর সেই অবস্থানে নেই জাসদ। তবে জেলা জাসদের একটি অফিস আছে। সভাও হয় নিয়মিত।

যদিও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি হাতে গোনা। রাজনৈতিক বিবর্তনের ধারার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাই এর কারণ বলে মনে করেন জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা আব্দুল মান্নান সেন্টু জেলার রাজনীতিতে জাসদকে একটা ফ্যাক্টর বানিয়েছিলেন। কিন্তু সংগঠনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আদর্শ পরিত্যাগ করে অনেক নেতা-কর্মী এখন স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার অপরাজনীতিতে লিপ্ত হওয়ায় দলের এই অবস্থা। ' স্থানীয় ইস্যুগুলোতে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও ছাত্র ইউনিয়ন।

সিপিবির তৎপরতা খুব বেশি না থাকলেও ছাত্র ইউনিয়ন বেশ কয়েকটি ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলে। কেন্দ্রের কর্মসূচির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও তারা দলীয় ব্যানারে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। বিশেষ করে টেংরাটিলায় অগি্নকাণ্ডের পর টেংলাটিলা অভিমুখে লংমার্চ, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী পদযাত্রা, বাস ভাড়া অর্ধেক করা, কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু, আন্ত:নগর ট্রেন সার্ভিস চালু ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। জেলা সংগঠনের সভাপতি সিয়াম সারোয়ার জামিল এই সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে সংঠনের ভাবমূর্তি উজ্জল করলেও তিনি বছরখানেক আগে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে যাওয়ায় স্থবীর হয়ে পড়েছে সংগঠন এই বাম ছাত্র সংগঠনটিও। বাসদের জেলা আহ্বায়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন, 'দলের বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করা হয়। ' তবে তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্র ফ্রন্টের কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যায় না। সিপিবির শেষ জেলা সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সব সময় সিপিবি সোচ্চার। টিপাইমুখ বাঁধ, অর্পিত সম্পত্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ যৌথ আন্দোলনে সিপিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম মনে করেন, 'দেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে দ্বিদলীয় মেরুকরণ ভাঙতে হবে। ' বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাকি দলগুলোর কমিটি থাকলেও দলীয় কার্যক্রম চোখে পড়ে না। কানসাট আন্দোলন ও গণফোরাম নেতা গোলাম রাব্বানী শিবগঞ্জের রাজনীতিতে বড় একটা ফ্যাক্টর। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছিলেন প্রায় একান্ন হাজার। অন্যদিকে, কচ্ছপ গতিতে চলছে ন্যাপের কার্যক্রম।

একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। মজিবুর রহমান সোনা এই কমিটির আহ্বায়ক। দলের কার্যক্রম সম্পর্কে জাসদের জেলা সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, 'জোটের শরিক হিসেবে কেন্দ্র থেকে নেওয়া কর্মসূচি আমরা পালন করি। তা ছাড়া জেলার যৌথ আন্দোলনগুলোতেও অংশ নিই আমরা। 'সাম্যবাদী দলের কামাল উদ্দিন সম্প্রতি বেশ কিছু আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন।

গনসংহতির কমিটি থাকলেও কোন কার্যক্রম নেই। (স্বকৃত রহমানের লেখা থেকে সংকলিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।