প্রকৃতির অমর সৃষ্টি বাংলা। নদীমাতৃক বাংলা। ঊর্বর ভূমির লাঙলের ফলায় প্রকৃতির অকৃপণ দান। এমনি প্রাণোচ্ছল পরিবেশেও চাষী নিপীড়িত, নির্যাতিত আর বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু চাষী এই নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করে নি।
শিখার মতো জ্বলে উঠেছে। বীরের মতো লড়াই করেছে। সেই শিখা সময়ে সময়ে স্তিমিত হয়েছে সত্য, কিন্তু ঐ জ্বলন্ত শিখাকে কোনোদিন চিরতরে নিভানো যায় নি। অনুকূল বাতাসে সেটা আবার জ্বলে উঠেছে।
তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, বাংলার কৃষকের রাণীমা৷ বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার আদায়ে যিনি এগিয়ে এসেছিলেন৷ বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি স্বেচ্ছায় জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন৷ ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন৷ কিন্তু থেমে যায় নি তাঁর আদর্শের লড়াই৷ জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য লড়ে গেছেন এই সংগ্রামী, মহিয়সী নারী৷ তিনি কমরেড ইলা মিত্র (১৮.১০.১৯২৫ – ১০.১০.২০০২)৷
১৯৪৬-৪৭ সালে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে তখনকার পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) ও পশ্চিমবঙ্গে যে তেভাগা সংগ্রাম হয়েছিল তা ছিল যেমন বিরাট, তেমনি জঙ্গী।
৬০ লাখ দুঃস্থ ভাগচাষী হিন্দু, মুসলমান, উপজাতি মেয়ে-পুরুষ জীবনকে তুচ্ছ করে ঐ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বাংলার মাটি হিন্দু, মুসলমান উপজাতি মেয়ে-পুরুষ কৃষকের রক্তে লালে লাল হয়ে পৃথিবী বিখ্যাত এক কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সারা পৃথিবীতে যতগুলি বিরাট বিরাট কৃষক আন্দোলন আজ পর্যন্ত হয়েছে বাংলার তেভাগা আন্দোলন সেগুলির মধ্যে অন্যতম।
বেথুন কলেজে যখন তিনি বি এ সম্মানের ছাত্রী তখন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে পরিচয়। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ।
১৯৪৩ সালে ইলা মিত্র কলকাতা মহিলা সমিতির সদস্য হন। রাওবিল বা হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে সে বছরই মহিলা সমিতি আন্দোলন শুরু করে। এ সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি এই আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নারী আন্দোলনের এ সকল কাজ করতে করতে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।
স্বামী রমেন মিত্রের সাথে
১৯৪৫ সালে তার বিয়ে হয় রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে।
রমেন্দ্র মিত্র কম্যুনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিয়ের পর ইলা মিত্র কলকাতা ছেড়ে চলে এলেন শ্বশুরবাড়ি রামচন্দ্রপুর হাটে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন হিন্দু রক্ষণশীল জমিদার। আর তাই পরিবারের নিয়মানুসারে অন্দর মহলেই থাকতে হতো তাকে। হঠাৎই একদিন তার বন্দী জীবনে মুক্তির স্বাদ মিলল।
তা হল গ্রামবাসীর একটি প্রস্তাব। তাদের অনুরোধ গ্রামের নিরক্ষর মেয়েদের লেখাপড়ার ভার নিতে হবে। ইলা মিত্র রাজি হয়ে যান। শুরু হয় তার আরেক জীবন। তিনি মিশে গেলেন একেবারে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে।
তাছাড়া স্বামী রমেন্দ্র মিত্রের কাছে জমিদার ও জোতদারের হাতে চাষিদের নিদারুণ বঞ্চনা আর শোষণের কাহিনী শোনেন। আরও শোনেন এই শোষণের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনের প্রচেষ্টার কথা। রমেন্দ্র মিত্র ইলা মিত্রকে তাদের কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র। এই সময় জমিদারি ও গোত্রধারী প্রথা ক্ষুদ্র কৃষকদের শোষণের সুযোগ করে দেয়।
খাজনা আদায়ের জন্য জোতদাররা কৃষকদের দাসের মতো ব্যবহার করত। ১৯৪২ সালে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। তখন কৃষকের ওপর শোষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এরকম অস্থিরতায় মরিয়া হয়ে ওঠে কৃষক। ‘তিন ভাগের দুই ভাগ ফসল’ কৃষক শ্রেণীর এই দাবি নিয়ে বেগবান হয় তেভাগা আন্দোলন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরও তেভাগা আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এ সময় কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়।
সরকারের এই দমননীতির ফলে কমিউনিস্ট ও কৃষক আন্দোলনের নেতারা আত্মগোপন করে কাজ করতে থাকেন৷ ইলা মিত্র ও রমেন্দ্র মিত্রও নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে আত্মগোপন করেন৷ নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে ছিল সাঁওতাল নেতা ও প্রথম সাঁওতাল কমিউনিস্ট মাতলা মাঝির বাড়ি৷ সাঁওতালদের মধ্যে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল৷ নাচোল এলাকায় মিত্র পরিবারের অনেক জমিজমা ছিল৷ রমেন্দ্র মিত্রের ঠাকুর্দার আমলে এই বরেন্দ্রভূমি চাষাবাদের জন্য সাঁওতালদের এনে বসতি স্থাপন করা হয়৷ ইলা মিত্র ও রমেন্দ্র মিত্র এই মাতলা মাঝির গোপন আশ্রয়ে থেকে চণ্ডীপুর গ্রামে এক শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন৷ মাতলা মাঝির বাড়িটি ছিল এ আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়৷
পঞ্চাশ দশকে বিচারে সাজা হওয়ার পর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল
তেভাগা আন্দোলন একটি বাস্তব রূপ পায়। কৃষকদের প্রতিরোধের মুখে আপাতভাবে তেভাগা কার্যকর করা হলে ভূমি মালিকরা থেমে থাকে নি। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারিবাহিনী নানাভাবে কৃষকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালাতে থাকে।
এক পর্যায়ে কৃষকরা পুলিশ কর্মকর্তা ও ৫ জন কনস্টেবলকে হত্যা করেন। তাদের দায়ের করা হয় পুলিশ হত্যা মামলায় প্রধান আসামির মধ্যে ইলা মিত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক অত্যাচার। যে নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এ সম্পর্কে তথা ইলা মিত্রের জবানবন্দী:
“কেসটির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
বিগত ৭.১.৫০ তারিখে আমি রোহনপুরে গ্রেফতার হই এবং পরদিন আমাকে নাচোলে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে পুলিশ আমাকে মারধোর করে এবং তারপর আমাকে একটা সেলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। হত্যাকান্ড সম্পর্কে সব কিছু স্বীকার না করলে আমাকে উলঙ্গ করে দেওয়া হবে বলে এস.আই আমাকে হুমকি দেখায়। আমার যেহেতু বলার মতো কিছু ছিলো না, কাজেই তারা আমার সমস্ত কাপড় চোপড় খুলে নেয় এবং সম্পূর্ণ উলঙ্গ ভাবে সেলের মধ্যে আমাদের বন্দী করে রাখে। ”
“আমাকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি, একবিন্দু জল পর্যন্ত না।
সেদিন সন্ধাবেলাতে এস.আই-এর উপস্থিতিতে সেপাইরা তাদের বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত শুরু করে। সে সময়ে আমার নাক দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে। এরপর আমার কাপড় চোপড় আমাকে ফেরত দেওয়া হয় এবং রাত্রি প্রায় বারোটার সময় সেল থেকে আমাকে বের করে সম্ভবত এস. আই. কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এ ব্যাপারে আমি খুব নিশ্চিত ছিলাম না। ”
“যে কামরাটিতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তারা নানারকম অমানুষিক পদ্ধতিতে চেষ্টা চালালো। দুটো লাঠির মধ্যে আমার পা দুটি ঢুকিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
এবং সে সময় চারিধারে যারা দাঁড়িয়েছিলো তারা বলছিলো যে আমাকে ‘পাকিস্তানী ইনজেকশন’ দেওয়া হচ্ছে। এই নির্যাতন চলার সময় তারা একটা রুমাল দিয়ে আমার মুখ বঁেধে দিয়েছিলো। জোর করে আমাকে কিছু বলাতে না পেরে তারা আমার চুলও উপড়ে তুলে ফেলেছিলো। সেপাইরা আমাকে ধরাধরি করে সেলে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো কারণ সেই নির্যাতনের পর আমার পক্ষে হাঁটার ক্ষমতা ছিল না। ”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সদের সাথে
“সেলের মধ্যে আবার এস.আই।
সেপাইদের চারটে গরম সেদ্ধ ডিম আনার হুকুম দিল এবং বললো, ‘এবার সে কথা বলবে’। তারপর চার-পাঁচজন সেপাই আমাকে জোরপূর্বক ধরে চিৎ করে শুইয়ে রাখলো এবং একজন আমার যৌন অঙ্গের মধ্যে একটা গরম ডিম সেদ্ধ ঢুকিয়ে দিলো। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। ”
“৯.১.৫০ তারিখে সকালে যখন আমার জ্ঞান হলো তখন উপরোক্ত এস.আই এবং কয়েকজন সেপাই আমার সেলে এসে তাদের বুটে করে আমার চেপে লাথি মারতে শুরু করলো।
এরপর আমার ডান পায়ের গোড়ালীতে একটা পেরেক ফুটিয়ে দেওয়া হলো। সেই সময়ে আধা অচেতন অবস্থায় পড়ে থেকে আমি এস.আইকে বিড়বিড় করে বলতে শুনলাম ঃ আমরা আবার রাত্রিতে আসছি এবং তুমি যদি স্বীকার না করো তাহলে সিপাইরা একে একে তোমাকে ধর্ষণ করবে। গভীর রাত্রিতে এস.আই. এবং সিপাইরা ফিরে এলো এবং তারা আবার সেই হুমকি দিলো। কিন্তু যেহেতু তখনো কিছু বলতে রাজী হলাম না তখন তিন-চার জন আমাকে ধরে রাখলো এবং একজন সিপাই সত্যি সত্যি ধর্ষণ করতে শুরু করলো। এর অল্পক্ষণ পরই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।
পরদিন ১০.১.৫০ তারিখে যখন জ্ঞান ফিরে এলো তখন আমি দেখলাম যে আমার দেহ থেকে দারুণ ভাবে রক্ত ঝরছে এবং কাপড় চোপড় রক্তে সম্পূর্ণভাবে ভিজে গেছে। সেই অবস্থাতেই আমাকে নাচোল থেকে নবাবগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হল। নবাবগঞ্জ জেল গেটের সেপাইরা জোর ঘুষি মেরে আমাকে অভ্যর্থনা জানালো। ”
“সে সময়ে আমি একেবারে শয্যাশায়ী ছিলাম। কাজেই কোর্ট ইন্সপেক্টর এবং কয়েকজন সেপাই আমাকে একটা সেলের মধ্যে বহন করে নিয়ে গেল।
তখনো আমার রক্তপাত হচ্ছিল এবং খুব বেশী জ্বর ছিলো। সম্ভবতঃ নবাবগঞ্জ সরকারী হাসপাতালের একজন ডাক্তার সেই সময় আমার জ্বর দেখেছিলেন ১০৫ ডিগ্রী। যখন তিনি আমার কাছে আমার দারুণ রক্তপাতের কথা শুনলেন তখন তিনি আমাকে আশ্বাস দিলেন যে একজন মহিলা নার্সের সাহায্যে আমার চিকিৎসা করা হবে। আমাকে কিছু ওষুধ এবং কয়েক টুকরো কম্বল দেওয়া হল। ১১.১.৫০ তারিখে সরকারী হাসপাতালের নার্স আমাকে পরীক্ষা করলেন।
তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে কি রিপোর্ট দিয়েছিলেন সেটা আমি জানি না। তিনি আসার পর আমার পরনে রক্তমাখা কাপড় ছিলো সেটা পরিবর্তন করে একটা পরিষ্কার কাপড় দেওয়া হলো। এই পুরো সময়টা আমি নবাবগঞ্জ জেলে-র একটি সেলে একজন ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমার শরীরে খুব বেশী জ্বর ছিলো, তখনো আমার দারুণ রক্তপাত হচ্ছিলো এবং মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম। ১৬.১.৫০ তারিখে সন্ধ্যাবেলায় আমার সেলে একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসা হলো এবং আমাকে বলা হলো যে পরীক্ষার জন্য আমাকে অন্য জায়গায় যেতে হবে।
খুব বেশী শরীর খারাপ থাকার জন্যে আমার পক্ষে-এ কথা বলায় লাঠি দিয়ে আমাকে একটা বাড়ি মারা হলো এবং স্ট্রেচারে উঠতে আমি বাধ্য হলাম। এরপর আমাকে অন্য এক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি সেখানে কিছুই বলিনি কিন্তু সেপাইরা জোর করে সাদা কাগজে আমার সই আদায় করালো। তখন আমি আধা-অচেতন অবস্থায় খুব বেশী জ্বরের মধ্যে ছিলাম। যেহেতু আমার অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছিল সেজন্য পরদিন আমাকে নবাবগঞ্জে সরকারী হারপাতালে পাঠানো হলো।
এরপর যখন আমার শরীরের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হলো তখন আমাকে ২১.১.৫০ তারিখে নবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে এসে সেখানকার জেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হলো। ”
“কোন অবস্থাতেই আমি পুলিশকে কিছু বলিনি এবং উপরে যা বলেছি তার বেশি আমার আর বলার কিছু নেই। ”
পঞ্চাশ দশকে জেলখানায় নির্যাতনের বিবরণ সম্বলিত জবানবন্দী যা পরবর্তীতে ইশতেহার আকারে বিলি করা হয়
১৯শ শতকে রংপুর, পাবনা, যশোর, ময়মনসিংহ, প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ঐতিহ্য রেখে গেছেন। তাঁদের উত্তরসূরী হিসাবে বাঙলার কৃষকরা সংগ্রামে এগিয়ে এসেছেন। সচেতন ও সংগঠিতভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন।
জয় ও পরাজয়ের মধ্য দিয়ে তাঁদের যাত্রা অটুট আছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও তেভাগার সংগ্রাম ছিল ঐ গতিধারার একটি সংগঠিত যোগফল।
ইলা মিত্র ভারতের মহিলা ফেডারেশনের জাতীয় পরিষদ সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির সহ-সভানেত্রী এবং ভারত ও সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির সহ-সভানেত্রী ছিলেন৷ বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাঁর ছিল বিশেষ আন্তরিকতা৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন৷
কামাল লোহানী ও তাঁর স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর সাথে ১৯৯৮ সালে
ইলা মিত্র বেশ কয়েকটি রুশ গ্রন্থ অনুবাদ করেন৷ এগুলো হচ্ছে জেলখানার চিঠি, হিরোশিমার মেয়ে, মনে প্রাণে-২ খণ্ড, লেনিনের জীবনী ও রাশিয়ার ছোট গল্প৷ হিরোশিমার মেয়ে বইটির জন্য তিনি ‘সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু’ পুরস্কার লাভ করেন৷ এ্যাথলেটিক অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুরস্কার লাভ করেন৷ এছাড়া ভারত সরকার তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মানে তাম্রপত্র পদকে ভূষিত করে সম্মানিত করে৷
কুমারী ইলা সেন বর্তমান বৎসরে মেয়েদের স্পোর্টস-এ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক পুরস্কার পাইয়াছে এবং জাতীয় যুবসঙ্ঘ, আনন্দমেলা ও ক্যালকাটা এথলেটিক স্পোর্টসে চ্যম্পিয়ানশিপ কাপ পাইয়াছে। --সচিত্র ভারত, ৩য় বর্ষ, শনিবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৩৪৫, পৃষ্ঠা ২৫৮। মুদ্রণ: আর্ট প্রেস, ২০ নং ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রীট, নরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় কর্ত্তৃক সম্পাদিত, প্রকাশিত ও মুদ্রিত।
ইলা মিত্র এক সংগ্রামের নাম। এক বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধির নাম। এক মানবতাবাদী নারীর নাম। যিনি সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বেচ্ছায় জীবনের সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন। ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন।
তবুও থেমে যায়নি তার আদর্শের লড়াই। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য লড়ে গেছেন এই সংগ্রামী মহিয়সী নারী। শত অত্যাচার নীরবে সহ্য করে গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়ে শোষিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন আবার শিক্ষকতা করে অগণিত শিক্ষার্থীকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। ২০০২ সালে ৭৭ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি নেত্রী মৃত্যুবরণ করেন।
হাজারো বঞ্চিত মানুষের হৃদয়ে ইলা মিত্র আছেন, থাকবেন প্রতিক্ষণ।
*ছবি ও তথ্য অন্তর্জাল থেকে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।