আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদি আরব ডায়েরি – ২৪ (আমার সীমাহীন দুঃখবোধ ...)

... সৌদি আরবে গত ৭ অক্টোবর শুক্রবার ডাকাতি ও খুনের অভিযোগে ৮ বাংলাদেশীকে শিরচ্ছেদ এবং ৩ বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ২০০৭ সালে এই ১১ জন রিয়াদে একটি বৈদুতিক মালামাল রাখার গুদামে চুরি করতে গেলে ১ মিশরীয় প্রহরীকে হত্যা করে। এ ঘটনা এখন সবারই জানা, এবং সর্বক্ষেত্রে বিবিধ কারনে বেশ আলোড়ন তুলেছে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিন্তু বলছে অন্য কথা Click This Link “According to reports, the Egyptian man was killed during a clash between the Bangladeshi workers and a group of men who allegedly were stealing electric cable from a building complex where the Bangladeshis worked.” কে দোষী, কে নয় তা নিয়ে ভাবার আগেই আমি অন্যান্য বাংলাদেশীর মতো প্রচন্ডরকম কষ্ট পেয়েছি, মানষিকভাবে আহত হয়েছি। আমার অন্যান্য বাংলাদেশী কলিগরাও দুঃখ পেয়েছে।

বস্তুতঃ সব বাংলাদেশিই সমানভাবে মর্মাহত, ব্যথিত ও ক্ষুদ্ধ। ইউটিউব আর টেলিভিশনে প্রচারিত বর্বোরচিত ও পৈশাচিক ভিডিওগলো এই ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এ ঘটনা শুধু একটি মামুলি ঘটনা হতে পারে না। ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। শুনেছি সৌদি আরবে আরো ৪/৫ জন বাংলাদেশি মৃত্যুদন্ডের অপেক্ষায় আছে।

তাদের জন্য কি কিছু করার আছে? আমাদের সরকার কি তাদের জন্য এখন থেকেই কিছু ভাবছে? নাকি মৃত্যুদন্ড হবার পর আবার আমরা হা-হুতাশ করবো, ক্ষোভ দেখাবো, সরকার বলবে আমরা অনেক কিছুই করেছি কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আবারো বলছি আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে, নতুন করে ভাবতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে একজন বাংলাদেশি হিসাবে নিরপেক্ষভাবে যখন ভাবতে বসেছি তখন বেশিরভাগ দায়ভার আমি আমার কাঁধে তুলে নিয়েছি। বুঝতে হবে মৃত্যুদন্ডটি হয়েছে একটি ঘটনা ঘটার পড়ে। ঘটনাটি না ঘটলে বর্বোরচিতভাবে মৃত্যুদন্ড দেবার প্রয়োজন পড়তোনা।

অনেকেই সৌদিদের কালাকানুন, আইনের বর্বরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আপাতদৃষ্টিতে তা সত্যি। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই তাদের নিজস্ব আইন ব্যবস্থা আছে। হতে পারে তা ফাঁসিতে মৃত্যু, গ্যাস চেম্বারে মৃত্যু, ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যু, ইলেকট্রিক শকে মৃত্যু অথবা গলা কর্তনে মৃত্যু। আমরা সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির দৃশ্য ইউটিউবে দেখেছি, সবগুলোই অমানবিক।

সৌদি আরব আবার একধাপ এগিয়ে – মৃত্যুদন্ড হয় প্রকাশ্যে। বোধকরি এই প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ডের কারনেই এর ভয়াভহতা আমদেরকে বিদীর্ণ করেছে সবচেয়ে বেশী। যদিও ঘটনাটিতে শরিয়া আইনের দোহাই দেয়া হচ্ছে, কিন্তু একই রকম সাজায় এক কানাডিয়ানকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ইন্ডিয়ানদেরকে মৃত্যুদন্ড না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে বাংলাদেশীরা কেন সাজা পাচ্ছে? কেন আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে পারছি না? উত্তরটি খুব সহজ।

আমরা তাদের কাছে গুরত্বহীন, আমরা কুটনীতি জানিনা। যে ২২ লক্ষ বাংলাদেশীর শ্রমে সৌদি আরব গড়ে উঠেছে, তারা সবসময়ই অবহেলিত, নির্যাতিত। আমাদের সরকার কখনো তাদের খোঁজ নেয়নি, তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আর হঠাৎ করেই সে আশা করা যায় না। এই লেখাটিতে তার বেশ কিছু ধারনা পাওয়া যাবেঃ Click This Link গত বছর আমি যখন সৌদি এ্যম্বাসিতে ভিসা’র জন্য এপ্লাই করি তারা আমাকে রিজেক্ট করে দেয়।

সবার জন্য ভিসা বন্ধ থাকলেও শিক্ষক ও ডাক্তারদের জন্য ভিসা ওপেন ছিল। এই সুযোগে হাতেগোনা কিছু বাংলাদেশী গত কয়েক বছরে জব ভিসায় এখানে আসতে পেরেছে। আমি যখন এপ্লাই করি তখন বাংলাদেশের সৌদি এ্যম্বাসির ম্যানেজমেন্ট নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। আমি নীচের লেখা দু’টিতে তা আলোচনাও করেছিলাম। Click This Link Click This Link অনেক ঝামেলা শেষে, কাঠখড় পুড়িয়ে আমার ভিসা হয়েছিল।

সৌদি এ্যাম্বাসি কেন এত ঝামেলা করলো, কেন ভিসা দিতে চায়নি তা আমি জেনেছিলাম। অনেকে তা জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্লগে তা শেয়ার করিনি। কিন্তু এখন কোন ঘটনাই আর কারো অজানা নয়। ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালের দিকে ৫/৭ জন বাংলাদেশী রিয়াদের এক আমিরের মেয়েকে অপহরন করে, রেপ করে এবং তাকে হত্যা করে পৈশাচিক উল্লাস করে। অপরাধীরা এ ঘটনা’র ভিডিও করে রাখে।

যথারীতি তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ও তাদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। আমি যখন ভিসা’র জন্য এপ্লাই করি, তখন ঐ নতুন ম্যানেজমেন্টে রিয়াদের সেই মেয়েটির ফ্যামিলির লোকজন ছিল। তারা কোনভাবেই কোন বাংলাদেশিকে স্ট্রং রিজন ছাড়া ভিসা দেয়ার পক্ষে ছিল না। ... বাংলাদেশীরা এখানে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত। হেন কোন কাজ নেই যে তারা করেনা।

হত্যা, রেপ, পতিতাবৃত্তি, মদ বিক্রি, পাসপোর্ট ও ইকামা জালিয়াতি, চুরি, ডাকাতি সব কিছুতেই বাংলাদেশীদের নাম জড়িয়ে আছে। এই লেখাটি পড়লে তার একটি ধারনা পেতে পারেন। Click This Link সৌদি আরবে প্রায় ২০/২২ লক্ষ বাংলাদেশী আছেন। আমি বিশ্বাস করি এদের প্রায় সবাই ভালো লোক, কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জন করছেন। পরিবারের একটু সুখের জন্য নামমাত্র মূল্যে মরুরবুকে পড়ে আছেন।

৫০০/১০০০ খারাপ বাংলাদেশী’র জন্য আজ এখানে আমাদের সুনাম বলতে কিছু নেই। বাংলাদেশী মানেই অপরাধী, মিসকিন অথবা ক্লিনার। এর জন্য দায়ী কে? আমি বলবো-আমাদের সরকার। ৮০'র দশক থেকে বাংলাদেশ সরকার গনহারে মিডলইস্টে কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই লোক পাঠাতে থাকে। এসব দেশেও তখন প্রচুর লোকের প্রয়োজন ছিল।

আর আমাদের দেশের অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত লোকদের জন্য এটাই ছিল যাওয়ার একমাত্র যায়গা। আরব দেশগুলো চেয়েছিল শুধু শ্রম, হঠাৎ করে পেট্রোডলার উপর্জনকারীরা শিক্ষা দিয়ে কি করবে? আমাদের সরকারও এই বিশাল অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানী করে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। শিক্ষা সমাজকে পরিবর্তন করে, অশিক্ষা পেছনে ঠেলে। সময়ের পরিক্রমায় এই অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত বিশাল জনগোষ্ঠী আরব দেশগুলোর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সবসময় দূর্বল পররাষ্ট্রনীতি আর মেরুদন্ডহীন সরকার পেয়েছে।

বাজী ধরে বলতে পারি আমরা আর কখনো আরব বিশ্বে হারানো সন্মান ফেরত পাবনা। সময় হয়েছে নতুন শ্রমবাজার খুঁজার। উপরোক্ত কারন ছাড়াও আরো কিছু কারন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে যা আমি আগের একটি পোষ্টে বলেছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ Click This Link ১. ইন্ডিয়ান’রা এখানে সাংগঠনিকভাবে বেশ গোছাল। তারা সবসময়ই সৌদি বাজার দখল করতে চাচ্ছে।

তাদের সাথে সৌদি সরকারের চুক্তি আছে ২ জন মুসলমানের পাশাপাশি ১ জন হিন্দু নিতে হবে। এখানকার সব বড় বড় পোস্টে আর প্রাইভেট জবগুলোতে তাদের আধিপত্য। তারা অপকর্ম করে বাংলাদেশিদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ানদের নিজস্ব পত্রিকা আছে, তারা সবসময় বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে প্রোপাগেন্ডা চালায়। সৌদিরা এত কিছু না বুঝেই বিভিন্ন ঝামেলায় বাংলাদেশিদের দায়ী করে, অনেকটা prejudiced।

কলকাতার লোকেরা অপকর্ম করে নিজেদের বাংগালী বলে পরিচয় দেয়, আর সৌদিরা ধরে নেয় সে বাংলাদেশি। আমরা যারা না বুঝেই যাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করছি, ছবি তুলে বিভিন্ন মিডিয়ায় দিচ্ছি তারা জানেনা একটা মোক্ষম অস্র ইন্ডিয়ানদের হাতে তুলে দিচ্ছি। ইন্ডিয়ানরা সৌদি সরকারকে নয় ছয় বুঝিয়ে ২০ লক্ষ বাংলাদেশীর বারোটা বাজাবে। গলার কাটা হয়ে যাওয়া ২০ লক্ষ বাংলাদেশীদের সৌদিরা আর চায় না। যোগ্য অনেকেই সৌদি বাজার দখল করার জন্য বসে আছে।

২. মায়ানমার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এখানে আসছে, এবং সংখ্যাটা অনেক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। রোহিঙ্গারা অপকর্ম করলে বাংলাদেশের নাম হচ্ছে। আমাদের এ্যাম্বাসি টাকা খেয়ে সৌদিতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে। Click This Link রিয়াদে বাংলাদেশী এ্যাম্বাসি কি করছে?এখানে যারা আসে, তারা টাকা কামাতেই ব্যস্ত থাকে।

এ্যাম্বাসিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল দালাল চক্র। সাধারন মানুষ সেখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে পারে না। এ্যাম্বাসির দালালি নিয়েও প্রতিনিয়ত মারামারির ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ঘটনায় ৪ বছর পর সাজা হলো। এ্যাম্বাসি আসলে কি করেছে আমরা তা জানতে চাই।

দায়সারা গোছের লোক দেখানো কাজ কোনটা আমরা তা ভালোভাবেই বুঝি। অন্যদিকে একজন বাংলাদেশী যখন দেশের বাহিরে যান তখন তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। আমাদের দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর। তাদেরকে বাহিরে প্রমোট করতে হবে।

শুধু শ্রমের জন্য অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত লোকদেরকে বাহিরে পাঠানো বন্ধ করতে হবে। আমাদের GNP তে সবচেয়ে বেশী কন্ট্রিবিউশন এই প্রবাসী শ্রমিকদের। অথচ সরকার তাদের দিকে মুখ তুলেও তাকায় না। তারা অবহেলার শিকার। আর আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বাহিরের কাঁচামাল দিয়ে, শ্রমিকদের শোষিত করে অল্প কিছু ডলার এনেই বিলাসবহুল জীবন যাপন করে, কালো টাকা সাদা করে, সরকারকে হুমকি ধামকি মারে।

সরকারও কাঁপতে কাঁপতে তাদের আদেশ পালন করে। আমরা কি পারি না মাত্র ৩ মাসের জন্য রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখতে? যাতে সরকার আমাদের অবহেলিত প্রবাসী শ্রমিকদের গুরুত্ব বুঝতে পারে। নোটঃ মতামত একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.