বাংলাদেশের রাক্ষস রাজনীতিবিধদের মনে প্রানে ঘেন্যা করি। যখন অকৃত্রিম আশেক্ব হযরত বিলাল ( রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ) -এর ইনতেকালের সময় ঘনিয়ে আসলো, তখন তাঁর স্ত্রী চুড়ান্ত দুঃখে বলে উঠলেন '' ওয়াহ য নাহু '' ( হায়রে দুঃখ ! ) এটা শুনে হযরত বেলাল বললেন ! ওয়াত রাবাহ ( বাহরে খুশির সংবাদ ! ) কারন আমি অনতিবিলম্বে আপন মাহবুব আক্বা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং প্রিয় সংঙ্গীদের সাথে মিলিত হবো ।
( বুখারি শরিফ)
হযরত বেলাল হাবশী (রা.) -এর এ ঘটনা তো বড়ই প্রসিদ্ধ । যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এ প্রকাশ্য জগত থেকে অন্তরাল গ্রহন করলেন তখন সাহাবাই কেরামের উপর কিয়ামত কায়েম হয়ে গেল । সবার জিন্দেগি উজার হয়ে গেল ।
হুজুর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম -এর বিদায় বিষাদে লোকেরা অস্থির হয়ে গেল ।
তাদের মধ্যে হযরত বেলাল হাবশী (রা.) ছিলেন । তিনিতো মদিনার অলি গলিতে পাগলের মতো ঘুরছিলেন । আর লোকজন দের বলতেন ''ভাইয়েরা তোমরা কি কোথাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে দেখেছো ? যদি দেখে থাকো তবে আমাকেও সাক্ষাত করিয়ে দাও ! আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কোথায় আছেন বলে দাও ! মদিনা মুনাওয়ারার প্রতিটি গলি সর্বত্র মাহবুবের কদমের নিশানা মওজুদ রয়েছে "।
শেষ পর্যন্ত হযরত বেলাল (রা.) বিদায় বিষাদ সহ্য করতে না পেরে মদিনা মুনাওয়ারা থেকে হিজরত করে সিরিয়ার হালবে চলে যান ।
প্রায় এক বছর পর স্বপ্নে তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর দিদার লাভ করলেন । নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এরশাদ ফরমাচ্ছেন " হে বেলাল ! তুমি আমার সাথে সাক্ষাত করা কেন ছেড়ে দিয়েছো ? তোমার হ্নদয় কি আমার সাক্ষাত করতে চায় না ? ''
চোখ খুলে গেল অস্থিরতা বেড়ে গেলো ''লাব্বাইকা ইয়া সাইয়েদী '' ( হে আকা আমি আপনার গোলাম হাজির ) বলতে বলতে উঠলেন । আর রাতারাতি উটনীর পিঠে সাওয়ার হয়ে মদিনা মুনাওয়ারার দিকে রওয়ানা হলেন ।
রাত দিন অনবরত সফর করে শেষ পর্যন্ত আশেক্বেদের কেন্দ্র-ভুমি মদীনা র নুরানী ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশে প্রবেস করলেন ।
মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশ করতেই তাঁর হ্নদয়-ভুবনে ওলট পালট হয়ে গেল ।
তিনি সোজা মসজিদে নববী শরিফে চলে গেলেন । আর সারকারে মাদীনা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে তালাশ করলেন । কিন্তূ নাবিয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে দেখতে পাননি । অতপর হুজরা শরীফে গুলোতে তালাশ করলেন । আহা সেখানেও নাবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পেলেন না ।
শেষ পর্যন্ত অস্থির মাযার -ই-পুর আনওয়ার হাযির হলেন । আর কেঁদে কেঁদে হাযরত বেলাল (রা.) বেহুঁশ হয়ে নুরানী রাওযার পাশে লুটিয়ে পড়লেন ।
ইতোমথ্যে হযরত বেলালে (রা.)র মদীনা শরিফে শুভাগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল । চতুর্দিকে গুন্জন ছিলো মুআযযিন নাবী বেলাল (রা.) সারকারে দু'জাহা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর রওয়াজা পাকে হাজির হয়েছেন । যখন হযরত বেলাল (রা.) র হুঁশ ফিরে আসলো ,তখন দেখলেন চতুর্পাশে মানুষের ভিড় জমে গেছে ।
এর পরক্ষনে মানুষ কাকুতি মিনতি শুরু হয়ে গেল , হে বেলাল (রা.) একটিবার মাত্র পুনরায় ঐ চিত্তাকর্ষক আযান শুনিয়ে দিন । যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম শুনাতেন । হযরত বেলাল (রা.) বারংবার হাত জোড় করে অপারগতা প্রকাশ করছিলেন '' ভাইয়েরা আমার এটা আমার সাধ্যের বাইরে কারন আমি যখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর জিবদ্দশায় আযান দিতাম তখনতো আমি ( আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলু্ল্লাহ ) বলার সময় স্ব চোক্ষে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর দিদার করে নিতাম । আহা ! এখনতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পর্দার আড়ালে তাশরিফ রাখছেন । এখন বলো আযানে আমি আমার সারকারে দিদার কেমনে করবো ।
অনুগ্রহ করে আমাকে এই খেদমত থেকে অব্যাহতি দাও।
আমার মধ্যে বরদাশত করার ক্ষমতা নেই । ''
কিন্তূ প্রত্যেকবারই হযরত বেলাল (রা.) অস্বিকার করতে লাগলেন ।
কোন কোন সম্মানিত সাহাবী (রা.) অভিমত প্রকাশ করলেন যে যে কোনমতে হোক হযরত হাসান ও হোসাঈন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা দের ডেকে নাও ! যদি শাহাজাদাদ্বয় হযরত বেলাল (রা.) কে আযান এর দেয়ার হুকুম দেন তবে তিনি অব্যশই মেনে নিবেন ।
কেন না মহানবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর আহ;লে বাইতের প্রতি হযরত বেলাল (রা.) অসাধারন ভালবাসা রয়েছে ।
এ অভিমত টা পছন্দ হলো । সুতরাং একজন লোক গিয়ে হযরত হাসান ও হোসাঈন রাদ্বিয়াল্লাহু আলহুমা দের ডেকে নিয়ে আসেলেন । আসতেই হযরত হোসাঈন (রা.) হাযরত বেলালের হাত ধরে ফেললেন । আর বললেন হে বেলাল (রা.) আজ আমাদের কে ওই আযান শুনিয়ে দেন । যা আমার নানাজান সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে শুনাতেন ।
'' হযরত বেলাল (রা.) প্রিয় হোসাঈন (রা.) কে কোলে কোলে তুলে নিলেন । অতঃপর বললেন আপনি আমাদের প্রিয় মাহবুব মহা নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর কলিজার টুকরা । আপনি হলেন হুজুর মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর বাগানের ফুল । আপনি যা বলবেন তাই হবে । শাহঁজাদা ! আমি যদি অস্বিকার করি আর আপনি যদি নারাজ হয়ে যান , তবে মাযার মোবারকে নবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম দুঃখিত হবেন ।
এখন হযরত বেলাল (রা.) আযান শুরু করলেন ............
আল্লাহু আক্ববার ! আল্লাহু আক্ববার !
আল্লাহু আক্ববার ! আল্লাহু আক্ববার !
আশ হাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ !
আশ হাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ !
মদীনার আকাশে বাতসে যখন বেলাল (রা.) র জ্বালাময়ি আযানের ধ্বনিত হলো । তখন মদীনাবাসিদের হ্নদয় আন্দোলিত হয়ে উঠলো । দির্ঘ কয়েক মাস পর যখন হযরত বেলাল (রা.) র আযান শুনে মনুষের চোখের সামনে নবি করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জিবদ্দশার দৃশ্য ভেসে উঠলো । লোকেরা ক্রন্দনরত দৌড়াতে দৌড়াতে মাসজিদে নাববী শরিফের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো । প্রত্যেকে অস্থির হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো ।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে লোকেরা কাঁদতে লাগলো ।
যখন হযরত বেলাল (রা.) ( আশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ ! ) বললেন তখন হাজার হাজার কন্ঠে চিৎকার এক সাথে আকাশে ধ্বনিত হলো যার কারনে আকাশ -বাতাস ভারী হয়ে উঠলো । নারী - পুরুষ সবাই অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন । স্নেহের ছোট ছোট শিশুরা বলতে লাগলো 'আম্মু ! মু'আয্যিনে নবী হযরত বেলাল তো এসে গেছেন কিন্তূ নবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কবে তাশরিফ আনবেন ?
যখন বেলাল (রা.) ( আশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ !) বললেন তখন স্বাভাবিকভাবে তাঁর দৃষ্টি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর মিম্বর শরিফের দিকে পড়লো , আহা ! মিম্বর শরিফ তখন খালি ছিল । আহা ! নবীয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম দিদার পাওয়া গেল না ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বিচ্ছেদের জ্বালা তাঁকে অস্থির করে তুললো ,হুযূর মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর শোক-যন্ত্রণা তিনি সহ্য করতে পারলেন না । বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন ...............।
যখন অনেকক্ষন পরে হুঁশ ফিরে আসলো তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং কাঁদতে কাঁদতে পুনরায় সিরিয়ায় ফিরে গেলেন ।
( বহু কিতাবে এভাবে বর্ণিত হয়েছে )
ক্বিসমত মুঝে মিল জায়ে বেলাল হাবশী কী
দম্ ইশক্বে মুহাম্মদ মে নিকল জায়ে তো আচ্ছা ...।
অর্থ : আহা ! আমি যদি বেলাল (রা.) র সৌভাগ্যটুকু পেয়ে যেতাম ।
তবে ইশক্বে মুহাম্মদ (সা.) এর মধ্যে বিভোর হয়ে আমার প্রান বায়ু টুকু বের হয়ে গেলেও তা উত্তম ছিল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।