আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসার প্রথম পাঠ

সাইফের মেজাজ ভয়াবহ খারাপ। মনে মনে রানার চোদ্দগুস্টি উদ্ধার করতে করতে স্টেজ থেকে নামল। ঐ শালার জন্যই আজ ইন্টার ইউনিভার্সিটি কালচারাল প্রোগ্রাম এ অংশ নিতে হল। কবিতা আবৃত্তি শোনে কেও এখন? তাও আবার প্রাইভেট ইউনিভারসিতির পোলাপান। যেখানে হেভী মেটাল আর র‍্যাপ গানে ছেলেমেয়ে দিশেহারা সেখানে আবার কবিতা আবৃত্তি।

সেই দিন রাশেদ স্যার যখন ক্লাসে এসে বললেন কে কে কবিতা আবৃত্তি তে নাম দিতে চাও,রানা ওকে দেখিয়ে দেয়। স্যার ও মাশাআল্লাহ আর কাউকে না পেয়ে ওর নাম টুকে নেয়। আপত্তি থাকা সত্তেও স্যার কে সরাসরি না বলতে পারেনি। এমনিতেই কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট এ ফেইল করে করে অবস্থা। এখন যদি স্যার রেগে যায় তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট,প্রেজেন্টেশন আর ল্যাব ফাইনালে মার্কের বারটা বাজাতে স্যারের হাত একটু ও কাঁপবে না।

অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অডিশন দিতে হল,যতটা খারাপ করে সম্ভব ঠিক তত্টাই করল সাইফ যাতে স্টেজমুখো না হতে হয়। কিন্তু স্যার পুরোটা না শুনেই বললেন যে ওকে দিয়েই হবে। কবিতা আবৃত্তি করার মত কেউ ছিল না বলেই হয়ত ! জটিল কোন কবিতা না,প্রেমের কবিতা শোনাবা। তাহলেই ছেলে মেয়ের ভাল লাগবে,স্যার বললেন। স্যার আবার অতি মাত্রায় রোমান্টিক কিনা।

বুঝল সাইফ ঝড় টা তাহলে জীবনানন্দের উপর দিয়েই যাবে। ক্লাসিকাল সঙ্গীত এর পর কবিতা। মরছি ! ভাবল সাইফ। ক্লাসিকাল শুনে পোলাপান খেপবে আর সেটার ঝাল মেটাবে কবিতার উপর। ইচ্ছে করছিল স্যার কে বলে হেলমেট সহ স্টেজ এ উঠার ব্যাবস্থা করে দিতে।

কবিতা আবৃত্তি ভালই পারে সাইফ,মায়ের কাছে শেখা। কলেজে মার আবৃত্তি শুনেই নাকি বাবা প্রেম এ পড়েছিল যদিও এখন সেটা স্বীকার করে না বাবা। সেই দিন কি আর এখন আছে ,ভাবে সাইফ। অনেক দরদ দিয়ে কবিতা শুরু করেছিল সে, হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি। বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি।

আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। …………………………………………………. কিন্তু অস্থির পোলাপান শুনলে তো। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। সাইফ জানত এমন কিছুই হবে। দুপর বেলা ক্লাসিকাল গান আর কবিতা কার ভাল লাগে,কিন্তু স্যারকে বোঝায় কে ,ছেলে মেয়েরা যে ব্যান্ড সঙ্গীত এর জন্য বসে আছে তা সাইফের ভাল করেই জানা।

Excuse me! গ্রীন রোম থেকে বের হচ্ছিল এমন সময় মিস্টি কন্ঠ শুনে থমকে দাড়াল। পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেল টি সার্ট জিন্স পরা ষোল সতের বছরের কিউট একটা মেয়ে ডাকছে। সাইফ ভাইয়া কেমন আছেন? মেয়েটির মুখে নিজের নাম শুনে সাইফ বেশ অবাক। এইমাত্র যেন সীমিত কুমার সংঘ প্রধানের মাথায় অ্যাটম বোম ব্লাস্ট হল। সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করল,আমরা কি পরিচিত?আপনি আমার নাম জানেন কিভাবে?প্রশ্ন শুনে মেয়েটি ফিক করে হেসে দিল।

হেসে হেসেই বলল একটু আগেই তো মাইকে নাম বলছিল,আর আপনার নাম তো এমন কঠিন না যে মনে রাখতে আরেক জনের মাথা ধার করে আনতে হবে। আচ্ছা আমার পরিচয় তো দেইনি,আমি হচ্ছি মাইশা। ম্যাপল লিফ এ A লেভেল পড়ছি। আমার কাজিন এর সাথে এখানে এসেছি,উপস্থাপিকার দিকে আংগুল তুলে বলল,ঐ যে আমার কাজিন,আপনার কবিতা শুনে দেখা করতে ইচ্ছে হল। আপনি যে খুব ভাল কবিতাটা আবৃত্তি করেন তা কি আপনি জানেন? সাইফ কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছিল না।

মাইশা কবিতা পড়ে শুনে অবশ্য বেশ অবাক হল। জিজ্ঞেস করল আপনি কবিতা পড়েন?কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না সাইফের। কেন আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি কবিতা পড়ি? জীবনানন্দ দাস আমার ফেভারিট। উনার তের টা কবিতা আমার মুখস্ত। মাথায় মনে হয় কিঞ্চিত সমস্যা আছে নইলে এত কথা কিভাবে বলে।

ভাবে সাইফ। ঝড়ের মত চটপটে মেয়েটাকে ভীষন ভাল লেগে যায় তার। কন্ঠটাও বেশ। কেমন জানি রিনিঝিনি রিনিঝিনি। বার বার শুনতে ইচ্ছে করে।

সাইফ ভাবে এই কন্ঠ শুনেই সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। বেশি ভাবতে পারে না সাইফ। সাইফের ব্রাক্ষচারী জীবনে মেনকা আর উর্বশীর মিক্স ভারসন যেন ওর ধ্যান ভাঙ্গানোর জন্য লাফালাফি করছে মাইশা সেজে। কাজিনের ডাকছে,মাইশা চলে যাবে। অনেক কিছুই জানার ছিল সাইফের।

বিশেষ করে অর বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা। মোবাইল নাম্বার নিতে পেরেছে এই ভরশা। খুব খুসি লাগছে সাইফের। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে ভাল লাগল তার। Love at first sight তাহলে একেই বলে ।

খুব ক্লান্ত লাগসে। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবার সময় মনে পড়ল কাপর গুলো ময়লা হয়ে আছে,ধুতে হবে। ফ্রেন্ডরা মিলে ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকে,ব্যাচেলর জীবনের সবছেয়ে কস্টের কাজ মনে হয় কাপড় ধোয়াকে। সার্ফ এক্সেল দিয়ে কাপর ভিজিয়ে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দেয় বিছানায়। কখন যে ঘুম চলে আসে বলতেও পারবে না সাইফ।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাইশা কে নিয়ে স্বপ্নও দেখে ফেলে। লাল রঙের সাইকেলে চরে দিগন্তে হারিয়ে যাচ্ছিল ওরা। সাইকেল কেন দেখল সাইফ ভেবে পায়না। কার না হোক অন্তত মোটরবাইক তো আসতে পারত! প্রেম এ পড়লে মানুষ আত্মভোলা হয়ে যায়। সাইফ ই বা বাদ যাবে কেন।

কাপড়ের সাথে যে মোবাইলটিও বালতি তে চুবিয়ে দিয়েছে সেটা টের পেল মাইশা কে কল দিতে যেয়ে তাও বেশ অনেক্ষন পরে। মোবাইল উদ্ধার করে দেখা গেল চপ চপ করে ডিটারজেন্ট মেশানো পানি পড়ছে। মৃত নাকি জীবিত বুঝার উপায় নাই। দেখে সাইফের মাথায় হাত। মাইশার নাম্বার তো সেট এ সেভ করা ছিল।

বসুন্ধরা সিটির তে মেকার কে দেখাতেই সে বলল,মামা এই সেটের আশা ছাইরা দেন। শুধু পানি হলেও একটা কথা ছিল। মামা কে অনুরোধ করল যাতে আর একটু চেস্টা করে দেখে,অন্তত contact গুলো বের করা যায় কিনা। যদিও সাইফ জানে বৃথা চেষ্টা। নিজেকেই থাপড়াতে ইচ্ছে করছিল সাইফের।

শুধু মোবাইল নাম্বার টাই ছিল ওর কাছে। এখন এত মানুষের ভীরে মাইশা কে কিভাবে খুজবে ও? অথচ মাইশাকেই যে ওর ভীষন প্রয়োজন। (চলবে)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.